ইনসাইড বাংলাদেশ

খাম্বা মামুনের সাথে জেল খাটা, একাধিক এনআইডি; শাহেদের যত প্রতারণা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 08/07/2020


Thumbnail

মাত্র কয়েক মাস আগের ঘটনা। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসছিলেন আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডক্ট্রাইন কমান্ড (এআরটিডিওসি) এর সাবেক জিওসি বীরবিক্রম চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী। বিমান বন্দরে তার সঙ্গে দেখা হয় রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. শাহেদের। চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীকে শাহেদ জানান, তিনি প্রধানমন্ত্রীর এসডিজি সংক্রান্ত প্রধান। জনাব আবুল কালাম এর স্থলাভিষিক্ত তিনি। কিছু পুলিশ/ আনসার তাকে সালামও দিচ্ছিল। ঢাকা ফিরে হাসান সারওয়ার্দী জানতে পারেন যে, শাহেদ মিথ্যা বলেছেন। তিনি আসলে প্রধান মন্ত্রীর দপ্তরের কেউ নন।

শুধু চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী নন, এমন হাজারো লোককে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে বোকা বানিয়েছেন রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক শাহেদ। এজন্য তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন নেতা ও শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পাশে দাঁড়িয়ে তোলা কিছু ছবি।

জানা গেছে, শাহেদ/সাহেদ হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকলেও তার আসল নাম মোঃ শাহেদ করিম, পিতাঃ সিরাজুল করিম, মাতাঃ মৃত সুফিয়া করিম। শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি। তার মা মৃত্যুবরন করেন ০৬ নভেম্বর ২০১০ সালে। প্রতারক শাহেদের একাধিক নাম রয়েছে। সে কখনো কখনো মেজর ইফতেকার আহম্মেদ চৌধুরী, কর্ণেল ইফতেকার আহম্মেদ চৌধুরী, কখনো মেজর শাহেদ করিম হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকে। তার জাতীয় পরিচয়পত্রও রয়েছে একাধিক। এর একটিতে তার আসল নাম শাহেদ করিম লেখা। অন্যটিতে আবার মোঃ শাহেদ। এই পরিচয়পত্রটি সে বর্তমানে ব্যবহার করছে বলে জানা যায়। এর নম্বর হলো- ২৬৯২৬১৮১৪৫৮৮৫ আর এ জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া হয় ২৫-৮-২০০৮ইং। এই পরিচয়পত্রে তার মা মারা গেছে লেখা রয়েছে। অথচ তার মা মৃত্যুবরণ করেন ০৬ নভেম্বর ২০১০ সালে। এতেই প্রমাঞ হয় পরিচয় লুকিয়ে প্রতারণা করাই তার মূল কাজ।

শাহেদের গ্রামের বাড়ী সাতক্ষীরা জেলায়। এক নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান হয়েও প্রতারণা বাটপারি করে আজ সে শত শত কোটি টাকার মালিক। বিএনপি সরকারের আমলে রাজাকার মীর কাসেম আলী ও গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের সাথে সর্ম্পক গড়ে তাদের মাধ্যমে তারেক জিয়ার হাওয়া ভবনের অন্যতম কর্তাব্যক্তি হয়ে ওঠে সে।

১/১১ ফখরুদ্দিন সরকারের সময় আর খাম্বা মামুনের সাথে সে ২ বছর জেলও খাটে। জেল থেকে বের হয়ে শাহেদ ২০১১ সালে ধানমন্ডির ১৫ নং রোডে এমএলএম কোম্পানী বিডিএস ক্লিক ওয়ান নাম বাটপারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারনা করে ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে। আর সেসময় তার নাম ছিল মেজর ইফতেখার করিম চৌধুরী।

তার বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় ২টি মামলা, বরিশালে ১ মামলা, বিডিএস কুরিয়ার সার্ভিস এ চাকুরীর নামে মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রতারনার কারনে উত্তরা থানায় ৮টি মামলাসহ রাজধানীতে ৩২টি মামলা রয়েছে। অন্যদিকে সে মার্কেন্টাইল কো- অপারেটিভ ব্যাংক বিমানবন্দর শাখা থেকে ৩ কোটি টাকা লোন নেয় আর সেখানে সে নিজেকে কর্ণেল (অব.) পরিচয় দিয়ে কাগজপত্র দাখিল করেন সে ব্যপারে আদালতে ২টি মামলা চলমান আছে।

শাহেদ আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী ও কর্তা ব্যক্তিদের কাছের লোক পরিচয় দিয়ে থাকে। প্রকাশ্যে অনেক মন্ত্রীর নাম ব্যবহার করেই মানুষকে হুমকি ধমকি দিয়ে থাকে। তার গাড়ীতে ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড ও সাইরেনযুক্ত হর্ন ব্যবহার করে। সে নিজেকে কখনো মেজর, কর্ণেল, সচিব, এমনকি সে নাকি ৯৬ সালের আওয়ামী লীগ সরকারের সময় প্রধানমন্ত্রীর এডিসি ছিলো এমন পরিচয়ও দিয়ে থাকে।

সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন টিভিতে টকশোতে গিয়ে সে আওয়ামী লীগের সুশীল হিসেবে পরিচিত পায়। কিন্তু গত সোমবারে তার হাসপাতালে র্যাবের অভিযানে তার সব ভন্ডামী বেড়িয়ে আসে। সে যে হাসপাতাল গড়ে তুলেছে তার কোন বৈধ্য লাইসেন্স নেই। দালালের মাধ্যমে টংগী সরকারী হাসপাতাল, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে রোগী ক্রয় করে এনে তাদের আটকিয়ে রেখে হাজার হাজার টাকা আদায় করতো সে। এছাড়াও প্রতারণার টাকায় সে উত্তরা পশ্চিম থানার পাশে গড়ে তুলেছে রিজেন্ট কলেজ ও ইউনির্ভাসিটি, আরকেসিএস মাইক্রোক্রেডিট ও কর্মসংস্থান সোসাইটি যদিও এর একটিরও কোন বৈধ লাইসেন্স নেই। আর অনুমোদনহীন আরকেসিএস মাইক্রোক্রেডিট ও কর্মসংস্থান সোসাইটির ১২টি শাখা করে হাজার হাজার সদস্যদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

এর আগেও শাহেদ উত্তরাস্থ ৪,৭ ও ১৩ নম্বর সেক্টরে ভূয়া শিপিং এর ব্যবসা করেছে। সেই ভূয়া প্রতিষ্ঠানের নামেই সাধারন মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা নিয়ে মেরে দিয়েছে। বর্তমানে তার ভিজিটিং কার্ডে সে রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান পরিচয় দেয়। কিছুদিন আগে সে একটি অস্ত্রের লাইসেন্সও নিয়েছে। অথচ অস্ত্রের লাইসেন্স করতে বাৎসরিক ন্যূন্যতম ৩ লক্ষ টাকা ইনকাম ট্যাক্স দেওয়া লাগে। অথচ সে কোনদিনও ইনকামট্যাক্সই দেয় না।

শাহেদের বেশ কয়েকটি গাড়ী রয়েছে সে গাড়ীগুলোর কোন বৈধ কাগজপত্র নেই। তার গাড়ীতে ভিভিআইপি ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড, অবৈধ ওয়ারল্যাস সেট আর অস্ত্রসহ ৩ জন বডিগার্ড থাকার কারনে সাধারনত পুলিশ তার গাড়ী থামাবার সাহস পায়না।

তার অফিসে লাঠিসোটা রাখা হয় এমনিক তার অফিসের ভেতরে একটি টর্চার সেলও রয়েছে। কোন পাওনাদার টাকা চাইতে আসলে পাওনাদারদের সেখানে টর্চার করা হয়। তার অফিসে সুন্দরী মেয়েদের কাজ দেওয়া হয়। এদের সাথে তার অবৈধ সর্ম্পক রয়েছে বলে জানা যায়।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭