ইনসাইড আর্টিকেল

বাংলাদেশ ও ক্রসফায়ারের জনকের গল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 09/07/2020


Thumbnail

নিকেটামাইড একটি উত্তেজক ওষুধ যা মূলত শ্বাসযন্ত্রের চক্রকে প্রভাবিত করে। কোরামাইন নামে এর প্রাক্তন বাণিজ্যিক নামে ব্যাপকভাবে পরিচিত। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত যখন কোন রোগীর শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যাবার উপক্রম হতো তখন কোরামাইন নামের এই ইনজেকশনটি তখনকার ডাক্তারগনের অনেকেই ব্যবহার করতেন।  মানে এটা ছিল রোগীকে ফিরিয়ে আনার শেষ চেষ্টা।    

ফিলিপিন্সের বর্তমান প্রেসিডেন্ট রোদ্রেগো দুতার্তে (Rodrigo Duterte) ‘ডাভাও’ নামের একটি ছোট্ট শহরের মেয়র ছিলেন।  যখন তিনি মেয়র হন, তখন শহরটি ছিল অপরাধের স্বর্গরাজ্য। শহরটি ছিল মাদকাসক্ত বা মাদক পাচারকারী সহ নানা অপরাধীর অভয়ারণ্য।  তিনি আসলে পেশায় ছিলেন আইনজীবী। তিনি অনেক চিন্তা করে দেখলেন যে, দেশের প্রচলিত আইনে এসব অপরাধীদের বিচার সম্ভব নয়। কারণ আইন তৈরি হয় অপরাধ দমন করতে। যখন যে অপরাধের মাত্রা খুব বেড়ে যায় তখন তা দমন করতে আইন তৈরি হয়, অনেক সমালোচনা আর তদ্বিরের পরে। এর ফাঁকেই কিন্তু অনেক অপরাধ সংঘটিত হয়ে যায়। ক্ষতি হয় অনেক জানমালের।

মেয়র সাহেবর পাগলের দশা। অনেক চিন্তা করে শুরু করলেন বেশুমার ক্রসফায়ার। নানা অপরাধের অপরাধী, বিশেষ করে মাদকাসক্ত আর মাদক পাচারে জড়িতদের সমানে ‘বালিশ ছাড়া’ চির নিদ্রায় যাবার ব্যবস্থা করলেন। বুদ্ধিজীবী আর মানবাধিকার কর্মীরা এতে বেজায় নাখোশ। দেশী বিদেশী টাকা খায় কিন্তু ভয়ে মুখ খুলতে পারেন না। কয়েক মাসের মধ্যেই তার শহর হয়ে গেল প্রায় অপরাধ শূন্য। ধন্য ধন্য পড়ে গেল সারা  দেশে। 

মেয়র হিসেবে সফল হবার পরেই রোদ্রেগো দুতার্তে ভাবলেন দেখি দেশের কিছু করা যায় কি না। যা ভাবা তেমন কাজ। দাঁড়িয়ে গেলেন দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে, জিতেও গেলেন। ২০১৬ সালের ৩০শে জুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন। এতে ফিলিপিন্সের বুদ্ধিজীবী আর মানবাধিকার কর্মীরা খুব অখুশি। তাঁরা ভাবে এটা কি হলো। মূর্খ দেশের লোক এক ক্রসফায়ার প্রবক্তা বা জনককে দেশের প্রেসিডেন্ট বানালো!   

রোদ্রেগো দুতার্তে তার অভিজ্ঞতা আর কর্মকাণ্ড দিয়ে প্রমাণ করেছেন যে, মাদকাসক্তি, দুর্নীতি উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়নের ও শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রধান অন্তরায়। তাই এদের হত্যা করলে, দেশে শান্তি আসবে, উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। তবে অপরাধীরা বা মাদকাসক্তরা যতই খারাপ হোক না কেন তাঁদের বাবা মা’রা তাঁদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেবে না মায়ায়, মমতায়। তাই জনগণকেই আইন হাতে তুলে নিতে হবে। যেহেতু দেশের প্রচলিত আইনে অপরাধীদের আটকানো যায় না, তাই এই ব্যবস্থা। মাদকাসক্তরা, চরম নির্মমতার সাথে মানুষকে হত্যা করে, কারণ তাদের ঐ মানবিক মূল্যবোধ থাকে না। তারা অনেক পরিবারকে আমীর থেকে ভিখারি বানিয়ে ছাড়ে। সমাজে সৃষ্টি হয় চরম নৈরাজ্য।    

আইনজীবী প্রেসিডেন্ট যে দেশের ২য় সংখ্যাগুরু মুসলিমদের জনশক্তির কথা ভুলে না গিয়ে ইসলাম ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ থেকে আর হাদিস থেকে কিছু শিক্ষা নিলেন। তিনি বললেন যে, অপরাধীরা, মাদক পাচারকারীরা, ব্যবসায়ীরা মাদকের ব্যবসা করে হাজার হাজার মায়ের কোল খালি করছে, যা হত্যার শামিল। তিনি বিশ্বাস করেন ও প্রচার করেন যে, তাঁর কথায় ইসলামের কথার প্রতিধ্বনি আছে। কারণ পবিত্র কোরআনে একটি হত্যাকাণ্ডকে ‘পুরো মানবজাতিকে নির্মূল করার’ সমতুল্য বলা হয়েছে (সুরা মায়েদাহ) এবং ফিৎনাকে (নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা) বিবেচনা করা হয়েছে হত্যার চেয়েও গুরুতর অপরাধ হিসেবে (সুরা বাকারা)।  

বাংলাদেশে ফিলিপাইনের মত ক্রস ফায়ার চালু করার জন্য অনেকেই বেগম খালেদা জিয়ার কথা শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করেন। তিনি শিক্ষিত না অশিক্ষিত তা নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে, কিন্তু দেশের শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে তাঁর প্রতিষ্ঠিত র‍্যাবের কথা, ক্রস ফায়ারের কথা বহু দেশপ্রেমিক মানুষকে আবেগী করে। অনেকের মূল্যায়ন হলো, খালেদা জিয়া র‍্যাবের জন্ম না দিলে দেশ হয়ত আজ আফগানিস্তান বা পাকিস্তান হয়ে যেত। এটা তিনি কার পরামর্শে করেছেন না, নিজের বুদ্ধিতেই করেছেন সেটা বিতর্কের বিষয়। মজার ব্যাপার হল তাঁর শাসন আমলে তাঁর দলের সন্ত্রাসীরাই বেশী মারা গেছে। তবুও তিনি একচুল নড়েন নি তাঁর সিদ্ধান্ত থেকে।   

বাংলাদেশে জেকেজি’র আরিফুল ও সাবরিনা, রিজেন্ট হাসপাতালের শাহেদ, স্বাস্থ্য দপ্তরের ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু, ডিজিএইচএসএর ডা. ইকবাল কবীর, পূর্ত দপ্তরের রূপপুর পারমানবিক কেন্দ্রের বালিশ কেলেংকারির নায়ক, শিক্ষা দপ্তরের গাছ কেলেংকারির নায়ক, কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তরের অর্থ লোপাটের নায়ক বা এদের মত অনেকের গড ফাদারকে খুঁজে বের করতে গেলে আদালতে মামলা করে ১০ বছরেও তা করা সম্ভব হবে কি না সন্দেহ আছে। তাই এদের উপর ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট রোদ্রেগো দুতার্তে’র মত ক্রসফায়ার নামক কোরামাইন ইনজেকশন প্রয়োগ করে কী দেখা যায়, দেশটাকে বাঁচানো যায় কি না! 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭