ইনসাইড থট

অনলাইন ক্লাস: শিক্ষার্থীরা বলির পাঠা!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 09/07/2020


Thumbnail

করোনাভাইরাসের কারণে সারা দেশে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ আছে। তাদের অধিকাংশই ইদানীং অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে ZOOMএর মাধ্যমে। তাই সারা দেশ জুড়েই মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার বহুলাংশেই বেড়ে গেছে;, বিশেষ করে দিনের প্রথমাংশে। গ্রাম বা মফঃস্বল শহরে যারা আছেন সে সব শিক্ষার্থীরা মোবাইল ডাটা কিনে অনলাইন ক্লাসে যোগ দিচ্ছে। কিন্তু সমস্যা তারা মোবাইল ডাটায় ইন্টারনেটের কাঙ্ক্ষিত স্পীড পাচ্ছে না।    

আমাদের দেশের গ্রাম এলাকায় মোবাইল অপারেটরগনের যে অবকাঠামোগত সুবিধা আছে তার অধিকাংশই টু-জি সাপোর্ট করে মাত্র, কোথাও কোথাও থ্রি-জি ফ্যাসিলিটি আছে। অধিকাংশ গ্রাম ও মফঃস্বল শহরে এমনকি নগরীর সব এলাকায় ফোর-জি সাপোর্ট করার মত অবকাঠামোগত সুবিধা মোবাইল অপারেটরগন তৈরি করতে পারেন নি। কিন্তু মোবাইল অপারেটরগন অনৈতিকভাবে ফোর-জি’র জন্য টাকা নিচ্ছেন গ্রাহকদের কাছে, হিসাব ছাড়া। ফলে অনলাইনে ক্লাস করা ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের শিক্ষকদের লেকচার ফলো করতে পারছে না। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই এই ক্লাস নেয়া অনেকের কাছেই অর্থহীন হয়ে পড়ছে। কিন্তু মোবাইলের ডাটা কেনার খরচ, শিক্ষালয়ের বেতন, ইত্যাদি কিন্তু ঠিকই দিতে হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।        

মোবাইল টেলিফোন অপারেটরগন যখন দেশে টেলিযোগাযোগ সেবা দিতে শুরু করেন তখন তারা এনালগ প্রযুক্তি বা ওয়ান-জি (জেনারেশন)  ব্যবহার করতেন, এর পরে এলো ডিজিটাল টু-জি, থেকে থ্রি-জি আর ফোর-জি। সাধারণ একজন মানুষের কাছে থ্রি-জি ও ফোর-জি মোবাইল প্রযুক্তি রহস্যময় দুটি শব্দ। তারা জানেন না যে, এর প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিশেষ করে থ্রি-জি আর ফোর-জি কী কী সুবিধা গ্রাহক পেতে পারেন বা পাওয়ার দাবি রাখেন তা জানার জন্য একটু উদাহরণ দিয়ে নিই।         

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তৃতীয় প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক, অথবা থ্রি-জি চালু হয় ২০০৩ সালে। সে সময় এর সুসংগত সর্বনিম্ন ইন্টারনেটের গতি ছিল ১৪৪ কিলো-বিট/সেকেন্ড। সে সময় ধারণা করা হয়েছিল এর মধ্যে দিয়েই "মোবাইল ব্রডব্যান্ড" চালু হবে। কিন্তু বর্তমানে নানা ধরনের থ্রি-জি চালু রয়েছে। এবং এই "থ্রি-জি" সংযোগ মানে ইন্টারনেট গতি ৪০০ কেবিপিএস থেকে এর চাইতে দশ গুণ বেশিও পেতে পারেন। সাধারণত নতুন প্রজন্ম নিয়ে আসে নতুন বেজ প্রযুক্তি, প্রতি ব্যবহারকারী হিসেবে নেটওয়ার্কের আরো বেশি তথ্য ধারণক্ষমতা এবং আরো ভালো ভয়েস পাঠানোর সুবিধা। সে হিসেবে ফোর-জি মানে আরো দ্রুত গতি সম্পন্ন বলে অনুমান করা যায়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ব্যাপারটা সবসময় এরকম নয়। ফোর-জি নামধারী প্রযুক্তির শুধু যে অভাব নেই তা নয়, নানাভাবে এই প্রযুক্তিটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব।

টেলিফোনের মান নির্ধারণের সংস্থা আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন, ফোর-জি নামকরণের একটা নির্দিষ্ট মাপকাঠি তৈরি করে দেয়ার প্রচেষ্টা করেছে, কিন্তু এর ক্যারিয়ররা বার বার তা উপেক্ষা করায় শেষ পর্যন্ত আইটিইউ পিছিয়ে আসতে বাধ্য হয়। চতুর্থ প্রজন্মের প্রযুক্তি বলতে আসলে একক কোনও প্রযুক্তি নেই - তিনটি উপায়ে এই ফোর-জি বাস্তবায়ন করা হয়েছে, সেগুলো হলো এইচএসপিএ+ ২১/৪২, ওয়াইম্যাক্স এবং এলটিই। যদিও কিছু মানুষ এলটিইকেই শুধু চতুর্থ প্রজন্মের প্রযুক্তি বলে মনে করে থাকেন। আবার কেউ কেউ বলে এদের কেউ চতুর্থ প্রজন্মের যে গতি থাকার কথা তা দিতে সক্ষম নয়। 

তবে একটা সত্য হচ্ছে, টেলিফোনের নতুন প্রজন্মটিকে অবশ্যই তার আগের প্রজন্মের গতি অপেক্ষা দ্রুত হতে হবে। অবশ্য এই নিয়ম শুধুমাত্র মোবাইল পরিচালকদের ক্ষেত্রে কার্যকর হবে। উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। কোন মোবাইল অপারেটর যদি ওয়াইম্যাক্স ফোর-জি চালু করে তাহলে তা অবশ্যই তাদের সিডিএমএ থ্রি-জির চাইতে বেশি গতি সম্পন্ন হবে। কিন্তু, গ্রামীণ ফোনের থ্রি-জি এইচএসপিএ সংযোগ বাংলালিংক বা রবির ফোর-জি এলটিই এর চাইতে দ্রুত গতির হতে পারে। অর্থাৎ আপনার মোবাইল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানটি যদি তার তরঙ্গ পরিবর্তন করে তাহলে সে আগের চেয়ে গতিশীল হতে হবে। তবে এটা পুরোটাই নির্ভর করবে, সেই অপারেটর কিভাবে তার নেটওয়ার্ক বসাচ্ছে, টাওয়ারগুলোতে বেস-ষ্টেশন আপগ্রেড করছে এবং কতটুকু সেবা তারা আসলেই দিতে চায়। এর সাথে তাদের বিনিয়োগের খরচের বিষয়টিও জড়িত। তবে ৩ জি, ৪ জি তে ভিডিও কল বা ডাটা আদান প্রদানে কোন সমস্যা হবার কথা না।  তবে থ্রি-জির সাথে ফোর-জি’র পার্থক্য হলো মাত্র কয়েকটা ফিচারে র। তবে থ্রি-জি না এসে যদি টু-জি নেটওয়ার্ক হয় তা হলে ভিডিও কল বা ডাটা ট্রান্সফার হবে না।    

সরকার যেহেতু সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনলাইন ক্লাস করায় অনুপ্রাণিত করছে সেহেতু ZOOMএর লাইসেন্স নিয়ে মোটা অংকের টাকার গড়াপেটা হবে মানে মারিং,আবার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যারা ZOOMএর ব্যবহার করবেন তারা সবাই স্পীডের জন্য মোবাইল অপারেটরদের আর মোবাইল অপারেটর লাইসেন্স বিহীন ZOOMএর ব্যবহার করার অভিযোগ আনবে। বলবে মোবাইলে অনেক ডাটা স্টোর করা আছে তাঁর জন্যেও স্লো হচ্ছে, ইত্যাদি, ইত্যাদি। এর প্রতিকার কী নেই? আছে সবাই যদি তাদের ক্লাস শুরুর পরে স্পীড সমস্যায় পড়েন তাহলে OOKLA বা এধরণের ফ্রি সফটওয়্যার দিয়ে স্পীড টেস্ট করে তার স্ক্রিন সর্ট নিয়ে বিটিআরসি’র  পরিচালক লাইসেন্স বরাবর পাঠিয়ে দিলে কারা ফাঁকি দিচ্ছেন তা ধরা পড়ে যাবে। শিক্ষার্থীরা সে ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও লাভবান হবে, জনগণ তথা সরকারের অর্থ সাশ্রয় হবে পরোক্ষভাবে।

গত কয়েকদিনের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে যে, সকালে যখন সব স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় একসাথে ক্লাস শুরু করে তখন মোবাইলে ইন্টারনেট স্পীড থাকে খুব কম। আবার ZOOMএর মাধ্যমে। এটা করা হয় বলে সেখানেও এমন চাপ পড়ে যা, তা তারা সামাল দিতে পারে না। আমাদের দেশে অধিকাংশ ZOOM ব্যবহারকারী লাইসেন্স ছাড়া এটা ব্যবহার করেন। তাই ZOOM কর্তৃপক্ষ ভিডিও কলে বা ডাটা আদানপ্রদানে লাইসেন্স-ওয়ালা ZOOM ব্যবহারকারীদের প্রাধান্য দেন। ফলে লাইসেন্স ছাড়া যারা ZOOM ব্যবহার করেন, তারা পড়েন সমস্যায়। আর এই সমস্যায় বলির পাঠা হয়ে দাঁড়ায় অন লাইনে ক্লাস করা ছত্র ছাত্রীরা। আসলে শিক্ষার্থীরা মোবাইলে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডার আর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের জালিয়াতির শিকার! এটা কে দেখবেন, শুধুই বিটিআরসি নাকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারেরাও এর জন্য দায়ী!    



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭