ইনসাইড বাংলাদেশ

‘ভুয়া রিপোর্ট প্রদানকারীরা পশুর চেয়েও অধম’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 09/07/2020


Thumbnail

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেছেন, ‘করোনার এই সংকটকালে যারা ভুয়া রিপোর্ট করছেন, তারা জঘন্য অপরাধ করছেন। এরা পশুর চেয়েও অধম। এদের চেয়ে নিকৃষ্ট আর কোনো কিছু নেই।’ বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিদিনের আলাপচারিতায় ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘যে কোনো রোগ পরীক্ষার ক্ষেত্রে একটা রিপোর্ট সঠিক হওয়া প্রয়োজন। একজন করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি যদি নেগেটিভ রিপোর্ট পান, তাহলে তিনি নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াবেন। তার মাধ্যমে করোনা আরও ছড়িয়ে পড়বে। কাজেই এটি যেমন উদ্বেগজনক এবং ভয়াবহ, ঠিক তেমনি একজন নেগেটিভকে যদি পজিটিভ বলা হয় সেটাও সমস্যার সৃষ্টি করবে। তাকে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে হেয় করা হতে পারে। তার মানসিক বিপর্যয়ও ঘটতে পারে। এটিও একটি উদ্বেগজনক দিক।’

ডা. আব্দুল্লাহ বলেন, ‘রিপোর্ট যদি সঠিক না হয়, তাহলে একজন চিকিৎসা দেবেন কিসের ভিত্তিতে? রিপোর্ট যদি সঠিক না হয়, তাহলে তো চিকিৎসাও সঠিক হবে না। ফলে পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থাতেই একটা গলদ সৃষ্টি হবে। ভুয়া রিপোর্টের ফলে করোনা চিকিৎসায় এই গলদগুলো সৃষ্টি হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রথমে জেকেজি, তারপর রিজেন্ট হাসপাতালের যে ঘটনা, তা ভয়াবহ। আমার তো মনে হয় যে, শর্ষের মধ্যেই ভুত আছে। কারণ একা রিজেন্ট বা একা জেকেজির পক্ষে এরকম অনিয়ম করা সম্ভব নয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যারা উর্ধ্বতন কর্মকর্তা আছেন, তাদের সাথে যোগসাজশ ছাড়া এ ধরনের ঘটনা সম্ভব নয় বলে আমি মনে করি। এ কারণেই এ ধরনের মানুষরূপী নরপিশাচদের বিরুদ্ধে যেমন দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার, তেমনি এর সঙ্গে জড়িত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যারা আছেন, তাদের চিহ্নিত করে তাদেরকেও শাস্তির আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করবে।’

তিনি বলেন, ‘করোনা কালে পুরো বিশ্ব যখন লণ্ডভণ্ড, তখন এদের অর্থলোভ আমাকে অবাক করেছে। এরা মানুষরূপী পিশাচ বলেই আমার মনে হয়। কারণ এত টাকা দিয়ে এরা কী করবে? এরা টাকা কোথায় নিয়ে যাবে? শুনেছি অনেকে নাকি বিদেশে টাকা পাচার করছে। বিদেশে পাচার করে এই টাকা কি তারা মৃত্যুর পর নিয়ে যেতে পারবে? এত সর্বনাশা লোভ কেন, এই প্রশ্ন আমাকে পীড়িত করে।’

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘অবিলম্বে সরকারকে এবং প্রশাসনকে এ ব্যাপারে কঠোর হতে হবে। যারা এই ভুয়া রিপোর্টের সাথে জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে। এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি যেন সবার মধ্যে একটা ভীতির সঞ্চার হয় এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘৃণ্য জঘন্য কাজ করার যেন কেউ সাহস না পায়।’

তিনি বলেন, ‘যারা মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে, তাদের প্রতি কোনোরকম সহানুভূতি দেখানোর কোনো কারণ নেই।’

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী একা কত করবেন। তিনি একাই কি সব দেখবেন? প্রধানমন্ত্রীকেই যদি সবকিছু দেখতে হয়, তাহলে অন্যরা কী করেন? তাহলে এত লোক লস্কর রাখার দরকার কী?’

তিনি আরও বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে এখনই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজনে যে রিপোর্টগুলো আসছে, যেগুলো যাচাই বাছাই করার জন্য একটা কমিটি গঠন করা যেতে পারে। তবে কমিটির চেয়েও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো যারা অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত, তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান। তাদের শাস্তি দেখে ভবিষ্যতে যেন অন্য কেউ এ পথে হাঁটার সাহস না পায়।’

ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘এ ধরনের ভুয়া রিপোর্টের ফলে বিদেশে বাংলাদেশে ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশের লোকদেরকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং সার্বিকভাবে করোনা চিকিৎসাই ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। কাজেই অনতিবিলম্বে এই নরপশুদেরকে চিহ্নিত করা দরকার এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং মন্ত্রণালয়ের যারা এর সঙ্গে জড়িত আছে, তাদেরকেও চিহ্নিত করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দেওয়া দরকার।’

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭