ইনসাইড আর্টিকেল

শিক্ষকতায় মেধাবীরা আসছে না কেন!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 11/07/2020


Thumbnail

বাদশাহ আলমগীর- কুমারে তাঁহার পড়াইত এক মৌলবী দিল্লীর, একদা প্রভাতে গিয়া দেখেন বাদশা-শাহাজাদা এক পাত্র হস্তে নিয়া, ঢালিতেছে বারি গুরুর চরণে পুলকিত হৃদে আনত-নয়নে, শিক্ষক শুধু নিজ হাত দিয়া নিজেরি পায়ের ধূলি, ধুয়ে মুছে সব করিছেন সাফ সঞ্চারি অঙ্গুলি। কবি কাদের নেওয়াজ এর ‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’ কবিতা টি ছোটবেলা কম বেশি সবাই পড়েছি। শৈশবে এই কবিতা পড়ে নিজের ভিতরে কতই না অনুশোচনা হতো! সত্যিই কি শিক্ষককে প্রাপ্য সম্মান বা মর্যাদা দিতে পারছি? কিন্তু এখন যেন এই সকল ভাবনা অনেকটাই উঠে গেছে। শিক্ষা ব্যবস্থায় মেধাবীদের সংকট দীর্ঘদিনের। এখানে লক্ষণীয় বিষয় হল শিক্ষকতায় মেধাবীরা আসছে না। শিক্ষকতা মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে পারছে না। আর এর পিছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে বলে জানা যায়।

সামাজিক মর্যাদা

শুধু শিক্ষক নয়, শিক্ষকতার বাইরেও অনেকেই স্বীকার করেন যে, দেশে শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা লোপ পেয়েছে। একটা সময় শিক্ষদের প্রতি শিক্ষার্থীদের যে সম্মান ও ভক্তি ছিল। এখন আর তা আগের মতো নেই। আগে শিক্ষকদের সম্মানে এলাকারও নামকরণ হত। মাস্টার বাড়ি, পণ্ডিত পাড়া ইত্যাদি বিভিন্ন নামে। কিন্তু এখন এসব যেন ইতিহাস। একটা সময় শিক্ষক ভক্তির অনেক উদাহরণ ছিল সমাজে। শিক্ষকরাও গর্ব করে এসব বলতেন। ছাত্রদের এমন ভক্তিতে সম্মানিতবোধ করতেন। কিন্তু এখন যেন কলি যুগ এসে গেছে।

সুযোগ সুবিধা

আমাদের শিক্ষার শুরু হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে দিয়ে। এরপর ধীরে ধীরে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষায় প্রবেশ। কিন্তু শিক্ষা জীবনের সূচনা যাদের হাত ধরে। সেই প্রাথমিক থেকে শুরু করে শিক্ষার সকল স্তরে শিক্ষকদের অভিযোগের যেন শেষ নেই। রয়েছে নানা অভাব অভিযোগ। কয়দিন আগেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষকদের অসন্তুস প্রকাশ করতে দেখা যায়। বেশ কয়েকজনের ফেইসবুক প্রোফাইলে ‘আন্তঃক্যাডার বৈষম্য বিলুপ চাই’ এই রকম ফ্রেম দেখা যায়। প্রাইমারির শিক্ষকদের দেখা যায় নিজেদের গ্রেড পরিবর্তনের দাবিতে শহীদ মিনারে অনশন করতে। প্রায়ই শিক্ষকদের নানা দাবিতে রাস্তায় নামতে দেখা যায়। এতে করে সমাজে শিক্ষকের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। সেইসাথে ফুটে উঠে বৈষম্যের করুন চিত্র।

ক্ষমতা চর্চা

বিগত বেশ কয়েকটি বিসিএস পরীক্ষায় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যারা মেধাক্রমে প্রথমদিকে থাকে। তাদের অনেকেই এডমিন, পুলিশ কিংবা অন্যান্য সার্ভিসে চলে যাচ্ছে। আর এই ক্যাডারগুলোতে চাপও বাড়ছে। ফলে এটা সহজেই অনুমান করা যায়। এখানে ক্ষমতা চর্চার একটা বিষয় থাকে। কেউ স্বেচ্ছায় শিক্ষকতায় আসতে চাচ্ছে না। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের ক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রম ছাড়া সবখানেই এই রকম অবস্থা বিদ্যমান। অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও নানা অনিয়ম ও অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

আকৃষ্ট করা

একটা সময় শিক্ষকতায় আকৃষ্ট হয়ে অনেকেই এই পেশায় আসত। আর স্বল্প সময়ে হয়ে উঠত একজন আদর্শ শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের কাছে হয়ে উঠত অনুকরণীয়। শিক্ষার্থীদের আদর্শ হয়ে উঠতেন তিনি। শিক্ষকতাকে শুধু চাকরি হিসেবে নিতেন না তারা। শিক্ষকতাই ছিল তাদের প্যাশন। ফলে শিক্ষার্থীদের সাথে গড়ে উঠত প্রাণবন্ত সম্পর্ক। কিন্তু এখন এই রকম শিক্ষক দেখা যায় না বললেই চলে। কারণ এখন আর কেউ প্যাশন নিয়ে শিক্ষকতায় আসছে না। সেইসাথে শিক্ষকতাও মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে পারছে না। কিন্তু উন্নত বিশ্বে কিন্তু এই রকমটা ঘটে না। তাদের এখানে এখনো শিক্ষকদের সর্বোচ্চ সম্মান ও গুরুত্ব প্রদান করা হয়। তাই একটি আদর্শ জাতি গঠনের স্বার্থে সমাজ ও রাষ্ট্র সকলের উচিত শিক্ষকদের সম্মান ও সুযোগ সুবিধার দিকে নজর দেওয়া। সেইসাথে শিক্ষতায় মেধাবীদেরকে আকৃষ্ট করা।           



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭