নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 11/07/2020
জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম মোস্তাফা বলেছেন, চোখের মাধ্যমেও কোন ব্যক্তি করোনা সংক্রমিত হতে পারে। বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এমন তথ্য জানান দেশের খ্যাতনামা এই চক্ষু বিশেষজ্ঞ।
তিনি বলেন,‘শুরু থেকেই আমরা চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছি। চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করেই আমরা চিকিৎসাসেবা দিচ্ছি। আমাদের ইমারজেন্সী ২৪ ঘন্টা খোলা থাকে এবং রোগী আসলেই দরকার হলে অপারেশন করি এবং রোগীর যা যা চিকিৎসার দরকার দিচ্ছি। আমাদের ক্লিনিক আছে, রুটিন ওটিও আছে। অন্যান্য হাসপাতাল করোনা সঙ্কটের সময় চিকিৎসা সেবা বন্ধ করলেও আমরা সার্বক্ষণিক সেবা দিয়ে আসছি।’
করোনার সময়ে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে কোন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা প্রথম থেকেই চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ সুরক্ষা দিয়ে আসছি। পিপিই, মাস্ক, গ্লোভস, হেড কভারসহ যা যা সিএমএইচ থেকে পেয়েছি এবং তাছাড়াও আমরা নিজেদের টাকা দিয়ে চিকিৎসকদের সুরক্ষার জন্য যা যা করা দরকার তাই করেছি। এর জন্যেই চিকিৎসকরা আমাদের সঙ্গে শুরু থেকে কাজ করে আসছে।’
ন্যাশনাল আই কেয়ারের অধীনে ঢাকার বাইরে যে ভিশন সেন্টারগুলো রয়েছে সেগুলোর কার্যক্রমও চলছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন বাংলাদেশে আমাদের মোট ৫০ টি সেন্টার চালু আছে এবং ২০ টি সেন্টার চালু করা হবে। সেখানে প্রত্যেকটি উপজেলায় রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক কম থাকলেও আমাদের কার্যক্রম চালু আছে। টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে মেডিকেল কলেজগুলোর রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। তবে আগের তুলনায় রোগীর সংখ্যা কমেছে এবং নতুন আমরা মানিকগঞ্জ কর্ণেল মালেক মেডিকেল কলেজে ১০ টি এবং ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ১০ টি, মোট ২০ টি সেন্টার আমরা এই কোরবানির ঈদের পর চালু করবো।
করোনার সময়ে চোখের চিকিৎসা করার ক্ষেত্রে রোগী এবং চিকিৎসকদের কি কি পরামর্শ মেনে চলা উচিত এমন প্রশ্নের উত্তরে ডা. গোলাম মোস্তফা বলেন, প্রথমত জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট সকাল ৮ টা থেকে খোলা থাকে এবং এখানে আসলেই রোগীরা তাঁদের চক্ষু পরীক্ষা করাতে পারবে। দ্বিতীয়ত আমাদের ইমারজেন্সী ইউনিটও খোলা রয়েছে, সেখানেও রোগীদের দেখা হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে পরামর্শ হিসেবে এই চিকিৎসক বলেন যে এই করোনাকালীন সময়ে টুকটাক সমস্যা নিয়ে না আসাই উচিত। এই সময়ে বাইরে বের হলে যেহেতু সংক্রমিত হওয়ার শঙ্কা থাকছে তাই সামান্য বিষয় নিয়ে না আসাই ভালো। তবে প্রয়োজন থাকলে রোগীরা আসবে।
রোগী আসলে আমরা বিভিন্ন সতর্কতা পালন করি। প্রথমেই রোগীর শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয় করি, হাত পরিষ্কার করাই এবং সামাজিক দুরত্ব পালন করে রোগীদের লাইনে দাঁড় করাই। রোগীদের টিকিট দেওয়ার সময় তাঁদের হিস্ট্রি নেওয়া হয়, তাঁর বাসায় কোন মানুষের জ্বর-কাশি আছে কিনা, সে কোন কোভিড রোগীর সংস্পর্শে আসছে কিনা- এমন কোন হিস্ট্রি থেকে থাকলে তাঁদেরকে আমরা কোভিড রোগী হিসেবে মনে করে আলাদা রুমে চিকিৎসা দেই। এছাড়া চিকিৎসকদের ক্ষেত্রেও আমরা সর্বোচ্চ সুরক্ষা মেনে চলি। প্রত্যেক রোগী দেখার পর চিকিৎসকের সুরক্ষা সামগ্রী বদল করি এবং রুম স্যানিটাইজ করি।’
চোখ দিয়ে করোনা সংক্রমণ ছড়াতে পারে কিনা এর উত্তরে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতালের এই পরিচালক বলেন যে, হ্যা, চোখের মাধ্যমে সংক্রমণ সম্ভব। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন,‘চীনে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি সম্পর্কে প্রথম যে চিকিৎসক বলেছিলেন, সেই চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. লি একজন রোগীকে পরীক্ষা করতে গিয়ে নিজেই আক্রান্ত হন এবং পরবর্তীতে সেই চিকিৎসক করোনায় মৃত্যুবরণ করেন। অর্থাৎ করোনাভাইরাস চোখের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করতে পারে, নাক দিয়ে পারে এবং মুখ দিয়েও পারে।’
তিনি দেশের চক্ষু চিকিৎসকদের ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে বলেন যে, ‘রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার সময় আমাদের রোগীদের খুব কাছে চলে যেতে হয় এবং সেক্ষেত্রে আমাদের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি থাকে। তাই এই সময়টাতে আমাদের খুব সতর্ক থাকতে হচ্ছে। তবে আমরা এতটাই স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি যে এখন পর্যন্ত আমাদের কোন চক্ষু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোগী থেকে সংক্রমিত হয়নি। যারা সংক্রমিত হয়েছে তাঁরা ব্যক্তিগতভাবে বাসা থেকে বা অন্য কোথাও থেকে সংক্রমিত হয়েছে।’
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭