নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 12/07/2020
জেকেজি আর রিজেন্ট হাসপাতাল এই দুইটায় ভুয়া করোনা রিপোর্ট ইস্যু আর স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন দপ্তরে বিশেষ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীন বিভিন্ন দপ্তরের দুর্নীতি নিয়ে দেশে বিদেশে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের কোন মন্ত্রণালয় আর তার অধীনস্থ সকল দপ্তরের প্রশাসনিক ও একাউন্টিং চীফ হচ্ছেন সচিব (RULES OF BUSINESS 1998 (Revised up to 2012 এর Chapter I, Rule no. 4 (iv) ও Rule no. 4 (v)) , মন্ত্রী নন। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর আওতাধীন মন্ত্রণালয় বাদে সব মন্ত্রণালয়ের ভালো মন্দের দায় ভার সেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবের। কিন্তু কিছু নষ্ট আমলা, দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী নামধারী প্রতারকের সাথে কিছু নষ্ট মিডিয়া কর্মী আর ভ্রষ্ট রাজনীতিক মিলে কামিনী, কাঞ্চন আর নেশার ঘরে মাতাল হয়ে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করেছে। আর এর সব দায় কৌশলে প্রশাসনের রাজনৈতিক অংশের উপর চাপানো হচ্ছে। কেউ কেউ তো আদালতের মত রায় দিয়ে দিচ্ছেন, এর জন্য সরকারের প্রশাসনের রাজনৈতিক অমুক, তমুক দায়ী। তাঁদের এটা করা উচিত, সেটা করা উচিত, ইত্যাদি, ইত্যাদি।
আসুন আমরা দেখে নিই করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বাংলাদেশে যে সমস্যা দেখা দিয়েছে তার কারণ কী, আর এই সব কারণের প্রতিকারে সরকারের দায় কতটুকু। কী করার ছিল সরকারের যা সরকারের রাজনৈতিক অংশ করেন নি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে বিভিন্ন হাসপাতালে নিম্নমানের সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণের ফলে অনেক ডাক্তার আর মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টের মৃত্যুর পরে তাঁদের পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তার রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টির অভাব, নিম্নমানের যন্ত্রপাতি আর রিএজেন্ট, অভিজ্ঞ ও দক্ষ জনবলের অভাব, বেসরকারি হাসপাতালে গলাকাটা বিল, স্বাস্থ্য সেবা খাতে নিযুক্তদের বিশ্বে স্বাস্থ্য খাতের সর্বশেষ অগ্রগতির খবর না রাখা, দেশের সাধারণ মানুষের মাঝে এই খাতের পরিসেবা নিয়ে আস্থার চরম সংকট দেখা দিয়েছে।
১০ জুলাই তারিখের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত হাসপাতালগুলোর ৭২% শয্যা ও আইসিইউ ৬৫% ফাঁকা রয়ে গেছে। যার ফলে সরকারী হিসেবে প্রায় ২৩০০ কাছাকাছি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এই সংখ্যার প্রায় ৯৫% রোগী মারা গেছেন বাসায়, কয়েকজন হাসপাতালে ভর্তির সীট খুঁজতে খুঁজতে অথবা মৃত অবস্থায় তাঁদের হাসপাতালে আনা হয়েছে। এর বাইরে প্রায় সম পরিমাণ মানুষ সারা দেশে মারা গেছেন করোনা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে বলে বিভিন্ন মিডিয়ার খবরে জানা গেছে। যদিও তাঁদের বিরাট অংশের অন্যান্য জটিল অসুখ ছিল।
বাংলাদেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে: নির্বাহী বিভাগ বা শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ। এরা সবাই স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে বিচার বিভাগ এখন পুরোপুরি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।
বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতা বিষয়ক নীতিটিকে ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী এবং ১৯৭৯ সালে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে একধরণের পরিবর্তন করা হয়েছে। বাংলাদেশের বিচারকদের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য সংবিধানে চতুর্থ সংশোধনীতে ১১৬(ক) নামে একটি নতুন অনুচ্ছেদ সংযোজন করা করা হয়েছে। বাংলাদেশ সংবিধানে চতুর্থ সংশোধনীর ১১৬(ক) নামে এ নতুন অনুচ্ছেদটি বিচার বিভাগীয় কর্মচারীগণকে বিচারকার্য পরিচালনার ক্ষেতে বিশেষ স্বাধীনতা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া বিচার বিভাগ স্বাধীনকরণের উদ্দেশ্যে ২০০৭-০৮ সময়ে ও পরে বেশকিছু আইন সংশোধন ও নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে অপরাধীর শাস্তি বিধান কে করবে? বিচার করবে কে? শাসন বিভাগ না আইন বিভাগ না বিচার বিভাগ? অবশ্যই বিচার বিভাগ। আইন বিভাগের কাজ নতুন আইন প্রয়োজন বা বিদ্যমান আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন করা। আর প্রশাসনে কাজ হচ্ছে অপরাধের মাত্রা ও গুরুত্ব অনুধাবন করে বড় জোর দ্রুত বিচার আইনে বিচারের জন্য বিচার বিভাগে অর্থাৎ আদালতে মামলা রজ্জু করা, রায় কার্যকর করা।
এর বাইরে আছে সংবিধানের মূল স্পিরিট দুর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গঠিত দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এটি অন্য দেশের মত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান না হলেও স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের কাজও অপরাধের তদন্ত করে বিচারের জন্য আদালতে মামলা দায়ের করা।
দুর্নীতি বা অপরাধের বিচারে বা অপরাধীর শাস্তি বিধানে সরকার তথা প্রশাসনের কতটুকু ক্ষমতা আছে তা খতিয়ে দেখলে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া শুধু হতাশার চিত্র পাওয়া যায়। ফেনীতে মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাতের শরীরে আগুন দিয়ে হত্যার ঘটনায় দ্রুত বিচার আইনে করা মামলা ছাড়াও কিছু শিশু হত্যা বা ধর্ষণ মামলা মহামান্য আদালত দ্রুত নিষ্পত্তি করেছেন।
কিন্তু ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা করে। তাতে আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ প্রাণ হারান ২৪ জন। শেখ হাসিনা সহ বেশ কিছু নেতা কর্মী অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। দীর্ঘ ১৪ বছর পর আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা মামলার রায় হয়। কিন্তু রায় এখনো কার্যকর করা যায় নি।
বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা ২০০৭-২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে শুরু করা হয় দ্রুত বিচার আইনে। এই মামলার নিষ্পত্তি হওয়ারও কথা ছিল ৬০ কর্ম-দিবসের মধ্যেই। কিন্তু মামলাটির রায় আসতে সময় লেগেছে ১০ বছর। অর্থাৎ ৬০ কর্ম-দিবসের পরিবর্তে ২৬১ কর্ম-দিবস। অর্থাৎ নির্ধারিত সময়ের চাইতে ২০১ দিন সময় বেশি লেগেছিল মামলাটি বিচারিক আদালতে নিষ্পত্তি করতে। এর মধ্যে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা এই বিচারিক আদালতের বাইরেও ১৩বার উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন, মামলার যৌক্তিকতা নিয়ে এবং মামলা বাতিলের দাবি জানিয়ে। এটা করেছেন এমপি ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার দলের আইনজীবীরা। ফলে এটা প্রমাণিত সত্য যে হত্যা বা দুর্নীতি মামলা বিলম্বিত করে সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় বাঁধা সৃষ্টি করেন রুমিন ফারহানার দল বিএনপি বা তাদের রাজনৈতিক জোটের পক্ষের আইনজীবীরা।
রুমানা ফারহানা তাঁর ফেসবুক পেজে বলেছেন, সরকার অনুমোদিত হাসপাতাল জেকেজি আর রিজেন্ট হাসপাতাল এই দুইটায় ভুয়া করোনা রিপোর্ট দিয়েছে ২১,০০০+। এছাড়াও তিনি একটা শিশুর বক্তব্যের ভিডিও দিয়েছেন যাতে জেকেজি আর রিজেন্ট হাসপাতাল অপকর্মের জন্য দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা না নেওয়ার দায় কৌশলে সরকারের রাজনৈতিক অংশের উপর চাপানোর জন্য শিশুর বক্তব্যকে ব্যবহার করেছেন। এর দায় সরকারের উপর চাপানোর অপচেষ্টা রুমিন ফারহানাদের অপকৌশল আর অপ-প্রচার। যার মাধ্যমে দেশের মানুষের মাঝে অসন্তোষ সৃষ্টি করা যা বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনের অপরাধ।
দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ, দেশপ্রেমিক আমলা, দেশপ্রেমিক ব্যবসায়ী আর নাগরিক অধিকার ও নাগরিক দায়িত্ব সচেতন দেশের জনগণ ছাড়া কোন দেশের সার্বিক উন্নয়ন আশা করা যায় না। জানি না আমাদের সেই প্রত্যাশা কবে পূরণ হবে!
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭