ইনসাইড থট

আমরা যারা প্রধানমন্ত্রীকে নানা পরামর্শ দেই…

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 12/07/2020


Thumbnail

আমরা অনেকেই আছি যারা নিজেরা নিজেদেরকে দাবি করি যে, আমরা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার একজন শুভাকাঙ্ক্ষী। আমরা বিভিন্ন বক্তব্য এবং লেখার মাধ্যমে তাকে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকি। আমরা পরামর্শ শব্দটা ব্যবহার করি না ঠিকই, কিন্তু আমাদের এ বক্তব্য এবং লেখার উদ্দেশ্য থাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে মনে করিয়ে দেওয়া অথবা উপদেশ দেওয়া, যেন তিনি কিছু কাজ করেন অথবা কিছু কাজ না করেন, যাতে তার রাষ্ট্র পরিচালনায় সুবিধা হয়। কিন্তু অনেক সময়ই আমাদের মনে হয় যে, আমাদের বক্তব্য প্রধানমন্ত্রী দেখেন না বা শোনেন না। তাই আমরা যেই পরামর্শগুলো দেই, সেটার উল্টো কাজ তিনি করেন। এখানে আমি একটি উদাহরণ দিতে চাই-

আমরা যখন ঢাকার কোনো রাস্তা দিয়ে গাড়ি চড়ে যাই, তখন ওই রাস্তাটাই শুধু দেখতে পাই। আমি প্রধানমন্ত্রীকে যদি ওই রাস্তা সম্পর্কে বক্তব্য দেই, আমি হয়তো পিএইচডি থিসিস করার মতো সুন্দর করে বর্ননা তাকে দিতে পারবো। আর প্রধানমন্ত্রী যদি একটা হেলিকপ্টারে করে অর্থাৎ অনেক উঁচু থেকে ঢাকা শহর দেখেন, তাহলে তিনি শুধু একটা রাস্তা নয়, বরং শহরের পুরো দৃশ্যটাই দেখতে পাবেন। এখানে ধারণার পার্থক্যটা বুঝতে হবে। আমার যা দেখছি, তাতে আমি ধারণা পাচ্ছি একটি রাস্তা সম্পর্কে। আর প্রধানমন্ত্রী যা দেখছেন, তাতে তিনি ধারণা পাচ্ছেন পুরো শহর সম্পর্কে। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই এখানে আমদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং মতামতের পার্থক্য হবে বিশাল।

আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ৫৯ বছর ধরে চিনি। অনেকেই অত্যুক্তি ভাববেন, কিন্তু আমি জানি, বিভিন্ন পর্যায়ের তথ্য, বক্তব্য প্রধানমন্ত্রী দেহেন, শোনেন। সেসব তথ্যের মধ্যে আমরা যারা তার শুভাকাঙ্ক্ষী তাদের বক্তব্য তথ্যও তিনি পান। সবকিছু হিসেব নিকেশ করেই তিনি কাজ করেন, সিদ্ধান্ত নেন। প্রায় ৬ দশক ধরে আমি তাকে চিনি। আমি জানি, প্রতিটা মানুষের কথাকে তিনি গুরুত্ব দেন। তিনি সবকিছুই দেখেন, সবার কথা শোনেন। এর মধ্যে যেটা গুরুত্বপূর্ণ সেটাই তিনি করেন।

সমস্যাটা তখন হয়, যখন প্রধানমন্ত্রী কাউকে বিশ্বাস করে একটা দায়িত্ব দেন, কিন্তু সে সেটা পালন করে না। এই বিশ্বাস ভঙ্গ করা বা দায়িত্ব পালনে গাফেলতির বিষয়টা দেখা যায় যে, প্রধানমন্ত্রীর কানে পৌঁছাতে সময় লাগতে পারে বা দেরি হতে পারে। বহু বছরের আস্থাভাজন একজন বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন, এটা বুঝতেও তার সময় লাগতে পারে। দুর্ভাগ্যবশত, প্রধানমন্ত্রী যাদেরকে বিভিন্ন জায়গা থেকে এনে বিভিন্ন দায়িত্ব দিয়েছেন, অল্প কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া তাদের অধিকাংশ লোকই দায়িত্বটা যথাযথভাবে পালন করতে সক্ষম হয়নি।  

আমরা যেকোনো দায়িত্ব পাওয়ার পর চেয়ারের গরমে নিজেদের খুব বড় ভাবতে শুরু করি। চেয়ারের গরম খুব দ্রুত মাথায় উঠে যায়। আমরা ভাবতে শুরু করি, আমরা বোধ হয় সব কিছুর উর্ধ্বে।

প্রধানমন্ত্রী সব সময়ই বলেন যে, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত। আমার দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্র পরিচালনা করা। দেশের প্রতিটা মানুষের ভাল মন্দ তদারকি করা।’ আর আমাদের যখন প্রধানমন্ত্রী কোনো দায়িত্ব দেন, আমরা মনে করি আমাদের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। দায়িত্বকে ক্ষমতা মনে করার কারণেই প্রধানমন্ত্রী আমাদের যে কাজটা দেন, সেটার উদ্দেশ্যটা ব্যাহত হয়। যেমন- করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই প্রধানমন্ত্রী বিভিন্নভাবে বলেছেন, কীভাবে কী করতে হবে।

আমার জানা মতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম ব্যক্তি, যিনি দেশবাসীকে বলেছিলেন যে, করোনা লাইফ স্টাইল ডিজিজ। এতদিন আমরা কেবল ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেশার এসব রোগকে লাইফস্টাইল ডিজিস বলতাম। কারণ এগুলো জীবন ধারণের সঙ্গে সম্পর্কিত, যাতে খাওয়া দাওয়া মেপে করতে হয়, সময় মেনে, নিয়ম মেনে জীবন যাপন করতে হয়। প্রধানমন্ত্রীই প্রথম দেশবাসীকে বোঝালেন যে, করোনা সংক্রামক বটে, কিন্তু এটাও এক ধরনের লাইফস্টাইল ডিজিজ। অর্থাৎ আমরা যদি নিয়ম মেনে চলতে পারি, তাহলে এই রোগে আমাদের ভয়ের কিছু নেই। মাস্ক ব্যবহার করতে হবে, সামাজিক দূরত্ব মানতে হবে, প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাওয়া যাবে না। এই প্রতিটা কথা শেখ হাসিনা বারবার করে বলেছেন।

দেশবাসীকে প্রধানমন্ত্রী যেমন সচেতন করার চেষ্টা করেছেন, ঠিক তেমনি তিনি করোনা মোকাবেলায় কার কী করতে হবে, সেই দায়িত্বটাও বুঝিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু সেই দায়িত্বটাই অনেকে ক্ষমতা ভেবে বসে আছেন। আবার আমরা সাধারণ মানুষও কি নিজেদের কাজটা করছি? আমরা যখন ইচ্ছা বাইরে যাচ্ছি। সামজিক দূরত্বের তোয়াক্কা না করে ছুটি কাটাতে গাদাগাদি করে বাড়ি ফিরছি। আবার আমরাই প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করছি যে, তিনি এটা ভুল করেছেন, ওটা ভুল করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা বিশ্বে প্রশংসিত। তাকে নিয়ে অনেক সমালোচনা থাকতে পারে, কিন্তু দেশ কিংবা বিদেশ সব জায়গারই বোদ্ধা যারা, সু বিবেচক যারা, তারা একমত হবেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প এখন পর্যন্ত কেউ নেই। সত্যিকার অর্থেই দেশ এবং দেশের মানুষের মঙ্গলের জন্য কাজ করেন শেখ হাসিনা। তিনি চোখ-কান খোলা রেখে প্রত্যেকের যেকোনো যুক্তিপূর্ণ কথা শোনেন।

অনেকেই আছেন, যারা প্রধানমন্ত্রীর ভালো কাজগুলো বলে তারপর বলেন, ‘তবে…’। আমি একটা উদাহরণ দেই। যদি একজন শিক্ষক তার ছাত্রকে বলেন, তোমার লেখাটা খুবই ভালো হয়েছে, খুবই ইনফরমেটিভ, তবে হাতের লেখাটা জঘন্য। তাহলে ওই ছাত্রের শুরুর কথাগুলো হয়তো মাথায় থাকবে না। সে ‘তবে’র পরে যা বলেছি অর্থাৎ ‘জঘন্য’- এই কথাটুকুই শুধু মনে রাখবে। আর তার যে পরিশ্রমটুকু সেটার মূল্যায়ন হলো না বলে কষ্ট পাবে। ঠিক তেমনিভাবে প্রধানমন্ত্রীর ভালো কাজের প্রশংসা করার ক্ষেত্রেও অনেকে দেখা যায় ‘তবে’র পর কিছু কথা বলেন। যা প্রশংসাটাকে ছাপিয়ে যায়। করোনাকালে লকডাউনের কথাই ধরা যাক। প্রধানমন্ত্রীর অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী তার গুণোকীর্তন করার পরে বলেছেন, লকডাউন না দেওয়াটা ভুল সিদ্ধান্ত, এতে অনেকে মারা যাবে। একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে আমি এমন মন্তব্য করে বসতেই পারি। কিন্তু দেশটা কীভাবে চলবে সেটা ভাবতে হয় প্রধানমন্ত্রীকে। শুধু কীভাবে চলবে সেটাই নয়, বরং প্রতিটি স্তরের মানুষ যেন খেয়ে পড়ে বাঁচতে পারে, সেটাও তাকেই ভাবতে হয়। সামনের দিনগুলোকে দেশ কীভাবে চলবে, কীভাবে এগিয়ে যাবে, সেটাও তাকেই ভাবতে হয়।

এজন্য আমরা যারা প্রধানমন্ত্রীকে নানা পরামর্শ দেই, যারা প্রশংসা আর সমালোচনা সমান তালে বা কম বেশি করি, তাদের সবার একটু ভাবা উচিৎ। আমাদের বোঝা উচিৎ যে, প্রধানমন্ত্রী সব দেখে-বুঝেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, কোন একটা অংশ বা একটা জিনিসের অংশবিশেষ দেখে নয়।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭