ইনসাইড বাংলাদেশ

‘মিডিয়ায় যে খবরটি আসে সত্য মিথ্যা যাচাই করে সরকারের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 14/07/2020


Thumbnail

‘স্বাস্থ্য খাতকে আমরা কিছুতেই বাগে আনতে পারছি না। এই জায়গাটি থেকে সমস্ত অসহায়ত্ব স্পষ্ট হয়ে উঠছে। তবে এটাকে গণমাধ্যম এতটা হাইলাইট করছে যাতে করে রাজনৈতিকভাবে একটি হতাশা তৈরি করছে। শুধু এটাই তো প্রধান দিক নয়, অনেক ভালো ভালো দিকও রয়েছে। অনেক ইতিবাচক ঘটনা ঘটছে, মানুষ একজন আরেকজনের পাশে দাঁড়াচ্ছে। সেই খবরগুলো আরো বেশি করে গণমাধ্যমে আসা উচিত ছিল। তবে তা না এসে শুধু স্বাস্থ্যখাত নিয়েই সবাই হামলে পড়েছে। এটা সত্যি যে, এখানে দুর্ঘটনাও অনেক বেশি ঘটেছে এবং সেক্ষেত্রে সরকার ব্যবস্থা নেবে। তবে অর্থনৈতিকভাবে সরকারের পলিসি ঠিকই আছে, শুধু ইমপ্লিমেন্টশনে যাওয়া উচিত।’

বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে কথাগুলো বলছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান।

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন যে, মাত্র ৪০ বছর বয়সী ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক এমন কিছু রিকভারি পরিকল্পনা করেছে যেগুলোর বাস্তবয়ায়নগুলো খুব দ্রুত হচ্ছে। যেমন সেইসব ফ্যাক্টরিগুলোতে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে যেগুলো কোন ছাঁটাই করছে না। তারপর যদি ২৫ বছরের নিচে কোন তরুণ-তরুণীকে চাকরি দেয় কোন ফ্যাক্টরি তাঁর জন্যে ২ হাজার পাউন্ড ইনসেন্টিভ দিচ্ছে। এছাড়া দোকানে খেলে ১০ পাউন্ড পর্যন্ত ভ্যাট নেওয়া হচ্ছেনা। অর্থাৎ এরকমভাবে ইনোভেটিভ পদ্ধতিতে কিছু পরিকল্পনা তাঁরা দ্রুত বাস্তবায়ন করছে।’

বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ বলেন,‘আমার মনে হয় যে আমাদের ওরকম আরো এগ্রেসিভ হওয়ার সুযোগ আছে। ব্যাংক যেসমস্ত পরিকল্পনা নিয়েছে সেগুলো বাস্তবায়িত করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরো বেশি আগ্রাসী ভূমিকা পালন করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক শুধু কিছু পলিসি দিয়ে চুপচাপ বসে আছে। এটা বাস্তবায়িত হচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছে না। যেমন ২০ হাজার কোটি টাকার স্টিমুলাইজ দেওয়া হয়েছে এসএমই এর জন্যে, যার মধ্যে ২০০ কোটি টাকাও খরচ হয়নি। কেন এটা হচ্ছেনা? সমস্যাটা কোথায়? ব্যাংকগুলোকে প্রত্যেকদিন নাম্বার দিতে হবে যে আজকে কয়জনকে দেওয়া হয়েছে, গতকাল কয়জনকে দেওয়া হয়েছে। আর যদি সত্যিই কোন সমস্যা থাকে তাহলে সেগুলো আলাপ করে মিটিয়ে দিতে হবে। আমি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় এইভাবেই কাজ করতাম। তবে বর্তমানে দায়িত্বে থাকা লোকজন কিভাবে কাজ করছেন সেটা আমার বোধগম্য নয়।’

সঙ্কট মোকাবেলায় কৃষিকে প্রথম অগ্রাধিকার দেওয়াটাকে যুক্তিযুক্ত উল্লেখ করে সাবেক এই গভর্নর বলেন, আমাদের দেশে কৃষিকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত, যা সরকার করছে। এবং এরপরে এসএমই তে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। ছোট ছোট উদ্যোক্তরা যারা গ্রামে ফিরে যাচ্ছে, যেসব প্রবাসী দেশে ফিরে এসেছে তাঁদেরকেও সুযোগ করে দিতে হবে। একইসঙ্গে আমার মনে হয় যে, ত্রাণ চালিয়ে যেতে হবে। অনেকে হঠাৎ করে কাজ পাবে না তাঁদেরকে সহায়তা দিতে হবে।

উচ্চবিত্তরা ভালো আছে এবং নিম্নবিত্তরা নানান ধরণের সহায়তা পেলেও করোনায় সঙ্কটকাল পার করছে মধ্যবিত্তরা। মধ্যবিত্তদের নিয়ে ড. আতিউর রহমানের ভাবনার কথা জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, মধ্যবিত্তদের সরকার কিভাবে সাহায্য করতে পারে সেটা আমি নিজেও বুঝে উঠতে পারছি না। কারণ তাঁদের সামনে অন্যতম সমস্যা হচ্ছে বাড়ি ভাড়া। আবার যারা বাড়ি ভাড়া নিচ্ছে তারাও বিপদে। অনেকে হয়তো এই ভাড়া দিয়েই চলে। এদেরকে সরকার কিভাবে সাহায্য করবে সেক্ষেত্রে অন্য দেশগুলোকে অনুসরণ করা উচিত। আমার মনে হয় ব্রিটেনের অভিজ্ঞতা ভালো। তাঁরা ৩০ বিলিয়ন ডলারের স্টিমুলাইজ প্যাকেজ করেছে। এমনকি বাড়িওয়ালাদেরকেও একটা ভাড়ার নিশ্চয়তা দিচ্ছে সরকার। সেটা বাংলাদেশ সরকার পারবে কিনা সে বিষয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে।’

করোনাকালে স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতির একের পর এক ভয়াবহ চিত্র বেড়িয়ে আসছে। এই খাতে কেন এত দুর্নীতি সেই প্রশ্নের উত্তরে সাবেক এই গভর্নর বলেন যে, স্বাস্থ্যখাতে আগে থেকেই দুর্নীতি ছিল। কিন্তু আমাদের নজরে আসেনি। দীর্ঘমেয়াদী এক সঙ্কট এখানে চলছিল। উদাহরণ দিয়ে বলেন যে, এই যে মিঠু সঙ্কট তা কিন্তু আজকের নয়, এটা সেই রুহুল হকের আমল থেকে চলছে। কিন্তু আমরা এটার কোন বিচার করিনি বরং সবাই নিজেদের মতো সুবিধা নিয়েছে। আরেকটি হলো সরকারি কেনাকাটা। দেশের এক শীর্ষ পত্রিকায় দেখা গেছে যে, ৪ লাখ টাকার মেশিন ৯ লাখ টাকা দিয়ে কিনছে সরকার। এই অব্যবস্থাপনাগুলোর তত্ত্বাবধান আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে করা উচিত ছিল। কিন্তু তা করা হল না। আমার মনে হয় যে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি মনিটরিং টিম থাকা উচিত ছিল। আমি জানি না সেখান থেকে মনিটরিং হচ্ছে কিনা। আর একটা গ্রিভেন সেন্টার থাকা উচিত। যেখানে যেখানে এই ধরণের খবর, যেমন আজকের পত্রিকায় বা টেলিভিশনে যে খবরটি এসেছে সেটা কেটে নিয়ে সন্ধ্যেবেলায় একটি কমিটি বসবে যে আজকে যে সংবাদটি এসেছে সেটা সত্য না মিথ্যা তা যাচাই করো এবং সে সম্পর্কে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু এরকম কি কোন পদ্ধতি চালু আছে? প্রতিদিনের খবর প্রতিদিন যাচাই করতে হবে। হাবিবুর রহমান যখন চিপ এডভাইজার ছিলেন তখন প্রত্যেকদিন সন্ধ্যেবেলা ওয়াহেদ উদ্দিন মামুন, প্রফেসর ইউনুস আর একজনকে নিয়ে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়ছিল এবং তাঁরা সন্ধ্যেবেলায় বসতেন। তাঁরা সারাদিনের সংবাদ নিয়ে বসে ইন্টিলিজেন্স বা অন্যদেরকে সেই সংবাদ যাচাই করতে বলতেন পরের দিন আবার বসে সেই সংবাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জিজ্ঞাসা করতেন।’

আমাদের ফাইনান্সিয়াল রিকভারি হচ্ছে কিনা তা যাচাইয়ের জন্য কোন কমিটি আছে? কেউ কি প্রধানমন্ত্রীর হয়ে দায়িত্ব নিয়েছেন? তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তো একা পারবেন না, তাঁর পক্ষ থেকে কাউকে মনিটরিং এর দায়িত্ব নেওয়া দরকার। ব্যাংকগুলো যে টাকা দিতে পারছে না, তা কেন পারছে না সেগুলো যাচাই করতে হবে। এই জায়গাগুলোতে এতটুকু পরিবর্তন আনলেই হবে। যা আমার কাছে কঠিন কিছু মনে হয়না।’  



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭