ইনসাইড পলিটিক্স

১৬ জুলাই; শেখ হাসিনার রাজনীতির টার্নিং পয়েন্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 15/07/2020


Thumbnail

১৬ জুলাই ২০০৭ সাল, ড. ফখরুদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে সেনাসমর্থিত তৎকালীন অনির্বাচিত সরকার বিরাজনীতিকরণকে পোক্ত করতে মাইনাস ফর্মূলার অংশ হিসেবে শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করেন। মিথ্যা মামলায় শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। শেখ হাসিনার গ্রেপ্তারটা ছিলো একটা অজুহাত মাত্র। এর মূল লক্ষ্য ছিলো বিরাজনীতিকরণ এবং অগণতান্ত্রিক শক্তি যেন দীর্ঘদিন ধরে দেশ শাষন করতে পারে তারই একটা নীরব আয়োজন। কারণ শেখ হাসিনা সবসময় গণতন্ত্রের পক্ষে ছিলেন। ওয়ান ইলেভেন সরকার আসার পরপরই শেখ হাসিনা বলেছিলেন যে, তিনি দ্রুত নির্বাচন চান এবং জনগনের প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের চান। আর এ কারণে দলের ভিতরে এবং বাইরে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছিল, সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ১৬ জুলাই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে ঘরের বাইরে সংগ্রাম করতে হয়েছে তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য। কিন্তু এই গ্রেপ্তার শেখ হাসিনার জন্য শেষ বিচারে একটা আশীর্বাদ হয়েছে। এই গ্রেপ্তারের পর শেখ হাসিনা রাজনীতিতে নানামুখীভাবে লাভবান হয়েছে।

প্রথমত, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হয়েছে তিনি গণতন্ত্রের জন্য নির্বিক সৈনিক। কারণ ৭৫ এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যার পরে শেখ হাসিনা যখন দেশে আসেন তখন থেকেই তিনি গণতন্ত্রের সংগ্রাম করছিলেন। গণতন্ত্রের জন্য নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। ২০০৭ সালে এই গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে তিনি গণতন্ত্রের প্রতীক হয়ে উঠেন। দেশের মানুষ বুঝতে পারে, গণতন্ত্রের সংগ্রামের জন্যই তাকে চরম মূল্য দিতে হয়েছে, তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, এই গ্রেপ্তারের পরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার ইমেজ অনেক বেড়ে যায়। তিনি আন্তর্জাতিক আলোচনার পাদপ্রদীপে আসেন। কারণ গণতন্ত্রের সংগ্রামের জন্য একটি অনির্বাচিত সেনা সমর্থনের সরকার যখন তাকে গ্রেপ্তার করে তখন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, শেখ হাসিনা জনগনের অধিকারের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন। গণতন্ত্রের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কারাভোগ করতে হচ্ছে তাকে। এর আগেও সেনাসমর্থিত সরকার তাকে বিদেশে পাঠানো, দেশে প্রবেশ করতে না দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটিয়ে বিশ্বের কাছে প্রমাণ করেছিল যে শেখ হাসিনা এবং গণতন্ত্র সমর্থক। অগণতান্ত্রিক সরকারের প্রধান বাধা হলো শেখ হাসিনা। যার ফলে আন্তর্জাতিকভাবে তিনি গণতন্ত্রের সৈনিক এবং জনগনের অধিকার প্রতিষ্ঠার নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।

তৃতীয়ত, এরফলে দলে তার অবস্থান সংহত হয়। দলে তিনি একচ্ছত্র নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। ওয়ান ইলেভেনে মাইনাস ফর্মূলা যে শুধুমাত্র সেনা সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকার করেছিল তা নয়। এর পেছনে ছিলো দেশের সুশীল সমাজ। আওয়ামী লীগের একটা অংশও যারা দলের হেভিওয়েট নেতা হিসেবে পরিচিত তারাও এই মাইনাস ফর্মূলাকে সমর্থন দিয়েছিলেন। সেই সময় আওয়ামী লীগের চার নেতা পৃথক পৃথকভাবে সংবাদ সম্মেলন করে মাইনাস ফর্মূলার পক্ষে সাফাই গেয়েছিলেন, আওয়ামী লীগে গণতন্ত্র এবং সভাপতি পদে পরিবর্তনের পক্ষে বক্তব্য রেখেছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের তৃণমূলের আপামর কর্মীরা এই চার নেতার সংস্কার প্রস্তাবকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিলো এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। এটি ছিলো আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার জন্য একটা টার্নিং পয়েন্ট। এই গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের একক অবিসংবেদিত এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। শেখ হাসিনার যে কোন বিকল্প নেই এবং শেখ হাসিনা ছাড়া যে আওয়ামী লীগ কি সেটা এই গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছিল। তৃণমূলের আবেগ ভালোবাসা এবং সংস্কারপন্থীদের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ, ঘৃণার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনার নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আর এর মাধ্যমেই আওয়ামী লীগের নবযাত্রা হয়েছিল।

এখন শেখ হাসিনা যে সারাদেশে একক জনপ্রিয় নেতা এবং তার যেমন কোন বিকল্প নেই। তাকে চ্যালেঞ্জ বা তার কর্তৃত্বকে বাধাগ্রস্থ করার মতো আওয়ামী লীগে কেউ নেই। এটা সম্ভব হয়েছে ওয়ান ইলেভেনে এই গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে। এই গ্রেপ্তার শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবনে পূর্ণতা দিয়েছে। তাকে করেছে অবিসংবেদিত নেতা এবং রাষ্ট্রনায়ক। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭