ইনসাইড আর্টিকেল

কোরবানির যত ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও তাৎপর্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 21/07/2020


Thumbnail

কোরবানি আরবি ভাষার একটি শব্দ। শব্দটির অর্থ নিকটবর্তী হওয়া, সান্নিধ্য লাভ করা। কোরবানির মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে- বিধায় এটাকে কোরবানি বলে। কোরবানি একমাত্র আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করার নিমিত্তে হবে। আর তাই কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কোরবানি আদায় করা ওয়াজিব। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি এই ইবাদত পালন করে না। এমন ব্যক্তির বিষয়ে হাদিসে বলা হয়, যার কোরবানির সামর্থ্য রয়েছে কিন্তু কোরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে। যে কোনো ইবাদতের পূর্ণতার জন্য দুটি বিষয় জরুরি। ইখলাস তথা একমাত্র আলল্গাহর সন্তুষ্টি এবং শরিয়তের নির্দেশনা অনুসরণ।

ইতিহাস

কোরবানির প্রচলন হয় আদি পিতা হজরত আদম (আ.)-এর সময় থেকে। তখনকার নিয়ম অনুযায়ী দুটি করে সন্তান হতো। এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তান। বিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম পরে ছেলে দ্বিতীয় পরে কন্যার সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হতো। বিয়ে নিয়ে আদম (আ.)- এর দুই পুত্র হাবিল ও কাবিলের মাঝে দ্বন্দ্ব হয়। মহান রাব্বুল আলামীন এই ফয়সালার ব্যাপারে হজরত আদম (আ.) তার দুই সন্তানকে আহবান জানান। আল্লাহতায়ালা কোরবানি করার নির্দেশ দিলে তারা দুই পাহাড়ের চূড়ায় নিজেদের কোরবানির বস্তু রেখে আসে। তখন যার কোরবানি কবুল হতো তার বস্তু আসমান থেকে আগুন এসে ঝলসে দিতো। ফলে তার কোরবানি কবুল হয়েছে বলে প্রমাণিত হতো। এভাবেই হাবিলের কোরবানি আগুন এসে ঝলসে দিলে তার কোরবানি আল্লাহ কবুল করেছেন বলে নির্ধারিত হয়। এটাই কোরবানির সূচনালগ্ন।

পরে হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর সময়ে বর্তমান নিয়মে কোরবানির প্রচলন হয়। সেটাও ছিল কঠিন পরীক্ষার ঘটনা। হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর ঘরে তার বার্ধক্য বয়সে আল্লাহ একটি পুত্রসন্তান দান করেন। তার নাম ছিল হজরত ইসমাইল (আ.)। একদিন হজরত ইবরাহিম (আ.) নির্দেশপ্রাপ্ত হন তিনি যেন, প্রিয় বস্তু আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করেন। তিনি প্রথমে ১০টি উট আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবানি করলে পরের রাতে একই স্বপ্ন পুনরায় দেখতে পেয়ে তিনি ১০০টি কোরবানি করেন। তৃতীয় রাতে একই স্বপ্ন দেখলে তিনি গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে পড়েন। তিনি বুঝতে পারেন যে তার প্রিয় বস্তু পৃথিবীতে একমাত্র তার সন্তান ইসমাইল। হয়তো তাকেই কোরবানি করার জন্য আল্লাহ নির্দেশ দিচ্ছেন।  

এ প্রেক্ষিতে এ আয়াত নাজিল হয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করা হয়, অতঃপর আমি তাকে একটি পুত্রসন্তানের সুসংবাদ দিলাম। সে যখন পিতার সঙ্গে হাঁটা চলার উপযোগী হলো। তিনি (ইবরাহিম) বললেন, হে পুত্র! আমি স্বপ্নে দেখলাম আমি তোমাকে কোরবানি করছি। সুতরাং তোমার মতামত কী? সে (ইসমাইল) বললো, হে আমার পিতা! আপনি যে বিষয়ে আদিষ্ট হয়েছেন তা পালন করুন। আপনি আমাকে আল্লাহর ইচ্ছায় ধৈর্যশীল হিসেবে পাবেন। অতঃপর যখন তারা দুজন একমত হলো- তাকে আহবান করলাম, হে ইবরাহিম! তুমি তোমার স্বপ্নকে সত্যে রূপ দিয়েছ। আমি এভাবেই সৎপরায়ণ ব্যক্তিদের বিনিময় দিয়ে থাকি। নিশ্চয়ই এটা ছিল স্পষ্ট একটি পরীক্ষা। অতঃপর আমি তাকে দান করলাম একটি মহা কোরবানির পশু।

গুরুত্ব

কোরবানি হলো ইসলামের এক মহান নিদর্শন। পবিত্র কোরআনের সূরা আল-কাউসার এ বলা হয়, তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশে সালাত আদায় করো ও পশু কোরবানি করো। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদীসে নবী করীম (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের ধারে না আসে। যারা কোরবানি পরিত্যাগ করে, তাদের প্রতি এ হাদিস একটি সতর্কবাণী। নবী করীম (সা.) কোরবানি করার নির্দেশ দিয়ে আরও বলেন, হে লোক সকল, প্রত্যেক পরিবারের ওপর কোরবানি দেওয়া অপরিহার্য। উল্লিখিত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হয়, কোরবানি করা ওয়াজিব। তবে অনেক ওলামায়ে কেরাম কোরবানি করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহও বলেছেন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭