নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 27/07/2020
ইসলাম ধর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত কোরবানি। মহান রাব্বুল আলামীন আগের নবীদের জন্যও এই বিধান রেখেছিলেন। এই বিষয়ে পবিত্র কোরআনে বলা হয়, আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কোরবানির নিয়ম করে দিয়েছি, যাতে আমি তাদের জীবনোপকরণস্বরূপ যেসব চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছি, সেগুলোর ওপর তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে।
কোরবানির ইতিহাস খুঁজলে দেখা যায়, পৃথিবীতে মানব ইতিহাসের সর্বপ্রথম কোরবানি হয়েছিল হজরত আদম (আ.)-এর দুই পুত্র হাবিল ও কাবিলের কোরবানি। কোরবানির ইতিহাসে নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন হজরত ইবরাহিম (আ.) ও তাঁর পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)। হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর অতুলনীয় ত্যাগ ও হজরত ইসমাইল (আ.)-এর আত্মোৎসর্গ আল্লাহর অনেক পছন্দ হয়েছিল। আর তাই তিনি হজরত ইবরাহিম (আ.)-কে খলিলুল্লাহ বা আল্লাহর বন্ধু উপাধিতে ভূষিত করেন। হজরত ইবরাহিম (আ.) ইহুদি, খ্রিস্টান ও মুসলমানদের কাছে শ্রদ্ধাশীল ব্যক্তি। সেইসাথে সনাতন ধর্মীরাও তাঁকে জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে অনুসরণ করে। ইসলাম ধর্মের বাইরেও বেশ কিছু ধর্মে নিজ নিজ বিশ্বাস অনুযায়ী সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি বিধানের জন্য ‘কোরবানি’র বিধান আছে।
সনাতন ধর্ম
সনাতন বা হিন্দু ধর্মে পাঁঠা বলির কথা সর্বজন বিদিত। এখানে দেবীর উদ্দেশে পাঁঠা বলি দেওয়া হয়। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী মায়ের পদতলে পশুত্বকে বিসর্জন দেওয়া হয়। অনেক হিন্দু ধর্মাবলম্বী বিশ্বাস করেন যে মা স্বয়ং এই বলি গ্রহণ করেন। ফলে বলি দেওয়া পাঁঠার মাংস তুলনামূলক কম স্বাদের হয়ে থাকে। এই স্বাদটা মা গ্রহণ করেন। ধর্মাচার্য অধ্যাপক ড. বেদপ্রকাশ উপাধ্যায় লিখিত ‘হিন্দু ধর্মগ্রন্থ বেদ ও পুরাণে আল্লাহ ও হযরত মোহম্মদ’ বইয়ে লিখেন—আদিকালে ব্রহ্মার (ইব্রাহীম-আব্রাহাব-ব্রাহাম-ব্রহ্মা) দুই পুত্র ছিল—১. অথর্ব এবং ২. অঙ্গিরা। তিনি ঐশী প্রত্যাদেশপ্রাপ্ত হইয়া জ্যেষ্ঠ পুত্র অথর্বকে বলি দিতে উদ্যত হন। শাস্ত্রে উহা ‘পুরূষ মেধযজ্ঞ’ নামে খ্যাত। অদ্যাবধি নরবলির সহলে পশুবলি দ্বারা উহা পালিত হইতেছে এবং বলি দেওয়ার সময় উক্ত পুরূষ মেধযজ্ঞের সুক্তগুলি পঠনের বিধান আছে।
ইহুদি ধর্মে কোরবানি
হুবহু মুসলমানদের মতো না হলেও ইহুদি ধর্মেও কয়েক ধরনের কোরবানি রয়েছে। যার মধ্যে পাঁচটি মৌলিক হল পোড়ানো কোরবানি, শস্য কোরবানি, গুনাহর কোরবানি, যোগাযোগ কোরবানি, দোষের কোরবানি। পোড়ানো কোরবানি হলো—কোরবানির বস্তুর সম্পূর্ণটাই কোরবানগাহের ওপর পোড়ানো হতো। এছাড়া রয়েছে প্রথমে তোলা শস্যের কোরবানি। ফসল তোলার বা কাটার সময় প্রথম তোলা বা কাটা ফসল আল্লাহকে দেওয়া হতো। এটা ছিল তাঁর রহমতের জন্য তাঁকে শুকরিয়া জানানোর একটা উপায়। যোগাযোগ কোরবানি শুকরিয়া আদায় কিংবা মানত পূরণের জন্য এটি দেওয়া হতো। আবার নিজের ইচ্ছায় করা কোরবানি হিসেবেও এটি করা যেত। শস্য কোরবানি শুকরিয়া জানানোর জন্য এবং আল্লাহর রহমত পাওয়ার জন্য লবণ দেওয়া খামিহীন পিঠা অথবা শস্য দিয়ে এই কোরবানি দেওয়া হতো। সকাল বেলার কোরবানি ও সন্ধ্যাবেলার কোরবানি ছিল এক রকম পোড়ানো-কোরবানি, যা প্রতিদিন দেওয়া হতো।
খ্রিস্ট ধর্মে কোরবানি
কিতাবুল মুকাদ্দাসে উল্লেখ রয়েছে যে ইউসুফ ও মরিয়ম ঈসা মসিহর জন্মের সময় দুটি কবুতর কোরবানি করেছেন। সেই থেকে গ্রিসে পশু উৎসর্গ একটি কমন প্রথা। সেখানে সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে একেশ্বরবাদী অর্থোডক্স চার্চে বকরি ও মুরগি দেওয়া একটি সুপ্রাচীন রীতি।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭