ইনসাইড আর্টিকেল

কোরবানির মাংস বন্টন নিয়ে যা বলে ইসলাম


প্রকাশ: 31/07/2020


Thumbnail

মহান আল্লাহ পাকের অশেষ রহমত লাভের আশায় ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা কোরবানি করে থাকে। তবে কোরবানির গোশত বন্টন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাদের অনেকেই এই সম্পর্কে না জানার কারণে গোশত ভাগের সময় নিজের ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে। কিন্তু কোরবানির গোশত যদি সঠিকভাবে বন্টন করা না যায়। তবে কোরবানি কবুলের শর্ত পূরণ হবে না। তাই গোশত বন্টনের ক্ষেত্রে সতর্কতার সাথে বন্টন করা আবশ্যক।

তিনভাগ

কোরবানির পশুর সব গোশতকে সমান তিনভাগে ভাগ করতে হবে। পরিমাপের ক্ষেত্রে দাড়িপাল্লা ব্যবহার করা যেতে পারে। গোশত সমান তিন ভাগ করার পর এক ভাগ গরিব-দুঃখীকে, এক ভাগ আত্মীয়স্বজনকে এবং এক ভাগ নিজে খাওয়ার জন্য রাখতে হয়। এই বিষয়ে পবিত্র কোরআনে সূরা আল হজের ২৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়, তোমরা খাও এবং অভাবগ্রস্ত দরিদ্র লোকদের খাওয়াও। সেইসাথে কোরবানির মাংস খাওয়ানোর সূরা আল হজের ৩৬ নম্বর আয়াতে আরও বলা হয়, তখন তোমরা তা থেকে খাও এবং আহার করাও এমন দরিদ্রকে যে ভিক্ষা করে এবং এমন দরিদ্রকে যে ভিক্ষা করে না। এভাবে আমরা সেগুলোকে তোমাদের বশীভূত করে দিয়েছি যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।

সেইসাথে সবচেয়ে ভালো পশুর প্রতিটা অংশের মাংস, কলিজা ইত্যাদি একসঙ্গে মিশিয়ে ফেলা। তারপর তা সমান তিনভাগে ভাগ করা। জানা যায়, কোরবানির মাংস তিন ভাগে বন্টন মুস্তাহাব। আপনি চাইলে পুরোটাই বিলিয়ে দিতে পারেন। চাইলে পুরোটাই নিজের কাছে রাখা দোষের নয়। তবে গরীব, মিসকিন, আত্মীয়দের হক আছে এই মাংসে। কাজেই বিলিয়ে দিলেই মানসিক শান্তি মেলে। কুরবানীর গোশতের এক তৃতীয়াংশ গরীব-মিসকীনকে এবং এক তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীকে দেওয়া উত্তম। অবশ্য পুরো গোশত যদি নিজে রেখে দেয় তাতেও কোনো অসুবিধা নেই। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪, আলমগীরী ৫/৩০০

চামড়া

কোরবানির গরুর আরেকটি অংশ হচ্ছে চামড়ার টাকা। যাতে গরিব-মিসকিনদের হক রয়েছে। চামড়ার টাকা আশেপাশের এতিমখানায় কিংবা চামড়া তাদের কাছে দিতে পারেন।

হাদিসের দলিল

কোরবানির মাংসের বিষয়ে সহিহ বুখারিতে সালামা বিন আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম (সা.) বলেন, তোমরা খাও, খাওয়াও এবং সংরক্ষণ করে রাখ। এখানে হাদিসে বর্ণিত ‘খাওয়াও’ কথাটি ধনীদেরকে হাদিয়া দেয়া এবং দরিদ্রদেরকে দান করাকে অন্তর্ভুক্ত করবে। একই সহিহ মুসলিম শরিফে আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম (সা.) বলেন, তোমরা খাও, সংরক্ষণ করে রাখ এবং দান করো। জানা যায়, ইবনে মাসঊদ (রাঃ) কুরবানির গোশত তিনভাগ করে একভাগ নিজেরা খেতেন, একভাগ যাকে চাইতেন তাকে খাওয়াতেন এবং একভাগ ফকির-মিসকিনকে দিতেন। আবদুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বর্ণিত নবী করীম (সা.)-এর কুরবানির গোশত বন্টন সম্পর্কে বলেন যে, তিনি একভাগ নিজের পরিবারকে খাওয়াতেন, একভাগ গরিব প্রতিবেশীদের দিতেন এবং একভাগ সায়েল-ফকিরদের দিতেন।

সংরক্ষণের বিধান

আজকাল অনেকেই কোরবানির গোশত জমা করে। সেখান থেকে প্রতিবেশী ও ফকির-মিসকিনদের কিছু কিছু দিয়ে বাকি গোশত পুনরায় নিজেদের মধ্যে বণ্টন করে নেন। এটি একটি কুপ্রথা। এর মাধ্যমে কৃপণতা প্রকাশ পায়। নিজের জন্য যে অংশটুকু খাওয়া জায়েয সে অংশটুকু সংরক্ষণ করে রাখাও জায়েয। এমন কি সেটা দীর্ঘ দিন পর্যন্ত হলেও যতদিন পর্যন্ত রাখলে এটি খাওয়া ক্ষতিকর পর্যায়ে পৌঁছবে না। কিন্তু যদি দুর্ভিক্ষের বছর হয় তাহলে তিনদিনের বেশি সংরক্ষণ করা জায়েয নয়।


দলিল হচ্ছে সালামা বিন আকওয়া (রাঃ) এর হাদিস। তিনি বলেন, নবী করীম (সা.) বলেন, তোমাদের যে মধ্যে ব্যক্তি কোরবানি করেছে তৃতীয় রাত্রির পরের ভোর বেলায় তার ঘরে যেন এর কোনো অংশ অবশিষ্ট না থাকে। পরের বছর সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমরা কি গত বছরের মত করব? তখন নবী করীম (সা.) বলেন, তোমরা খাও, খাওয়াও এবং সংরক্ষণ কর। ঐ বছর মানুষ কষ্টে ছিল। তাই আমি চেয়েছি তোমরা তাদেরকে সহযোগিতা কর। এই বিষয়ে সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম শরিফ উভয় হাদীসেই বলা হয়েছে।

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭