নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 01/08/2020
হাসি কান্নার যৌথ বন্ধনেই মানুষের জীবন বাঁধা। কখনো হাসি কখনো কান্না–এরই নাম জীবন। হাসি ছাড়া যেমন একটা জীবন কল্পনা করা যায়না তেমনি কান্না ছাড়াও জীবন হয়না। এই হাসি আর কান্নার সাথে অপর দুটি অনুভূতি ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত আছে,তা হচ্ছে সুখ আর দুঃখ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তার ব্যতিক্রম নন। তবে শেখ হাসিনার জীবনটা যতটা মর্মান্তিক এমনটা পৃথিবীতে খুব বেশি মানুষের জীবনে ঘটে না। তাইতো আগস্ট মাস আসলেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্যরকম হয়ে যান। কষ্টের স্মৃতিগুলো আরো বেশি কড়া নাড়ে বুকের ভিতরটায়। স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন পরিবারের জন্য। কথা বলতে গেলে তার কন্ঠকে কান্না জড়িয়ে ধরে।
পঁচাত্তর কিংবা ২০০৪, আগস্ট মাস শেখ হাসিনার বেদনার মাস। আগস্ট মাস এলেই দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীরা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। গর্তে লুকিয়ে থাকা বিষধর সাপের মত ওরা বের হয়ে আসে, ফণা তোলে, ছোবল মারে! ওৎ পেতে থাকে প্রিয় মাতৃভূমিকে রক্তাক্ত করতে!
আগস্ট মাসটির নাম উচ্চারিত হওয়ার সাথে সাথে বাঙালি-হৃদয় যন্ত্রণাদগ্ধ হয়, শোকে মুহ্যমান হয় বাঙালি-আত্মা। হৃদয়পটে ভেসে ওঠে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মর্মন্তুদ হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে সপরিবারে হত্যা করা হয়। যে কারণে আগস্ট মাস মানে বাঙালির হৃদয় জুড়ে শোকের আঁধার। আগস্ট এলেই শ্রাবণের এক অনিঃশেষ করুণ-ধারা যেনো ছুঁয়ে যায় বাঙালি-আত্মাকে। এ-মাসের বেদনার্ত আর্তি কালকে ছাপিয়ে মহাকাল, সীমানার গণ্ডি পেরিয়ে গোটা বিশ্ব বিবেককে স্তম্ভিত করেছে! সেই আগস্ট মাসকেই বাংলাদেশ-বিরোধী ঘাতকরা তাদের নিষ্ঠুর টার্গেটের মাস হিসেবে বেছে নিয়েছে বারবার। আগস্টের স্মৃতি তাই দগদগ করে শেখ হাসিনার মনে।
আজ শনিবার আগস্টের প্রথম দিন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগস্ট মাসে রুটিন কাজের বাইরে তেমন কাজ রাখেন না। তেমন কোন অনুষ্ঠান কর্মসূচীও রাখেন না। এবার একটি ভিন্ন প্রেক্ষাপটে আগস্ট মাস শুরু হলো। ঈদের দিন শুরু হলো আগস্ট মাস। এই ঈদটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য সত্যি শোকাবহ একটি ঈদ। একদিকে করোনা সঙ্কট, অন্যদিকে দেশের একটি বড় অংশ জুড়ে বন্যা। নিজের দু:খযাপনের দিনটাও নেই তার। এই করোনাকালে (কোভিড-১৯) শেখ হাসিনাকে একাই লড়তে হচ্ছে। তবে এই একা লড়া তার জীবনে প্রথম নয়। বরং সারা জীবন দলে ও দলের বাইরে তাকে মূলত একাই লড়তে হয়েছে। তিনি লড়ে যাচ্ছেন পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে। আজকের ঈদে তাই তাকে আনন্দ ছুঁতে পারেনি। যখন সারাদেশের মানুষ ঈদ আনন্দ করছেন, তখন তিনি ভাবছেন করোনাসঙ্কট কাটিয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ অর্থনীতি কি হবে? সোনার বাংলার কি হবে?
এই অবস্থায় ঈদের কোন আনুষ্ঠানিকতা নেই গণভবনেও। প্রতিবছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিভিন্ন নিকটজন, শুভানুধ্যায়ী উপহার দেন। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী অনেক অনেক শাড়ি উপহার পান। কিন্তু এবার তিনি সবাইকে বলেছেন, এবার উপহারটা আমাকে না দিয়ে সেই অর্থ গরীবদের মাঝে দান করুন। গণভবনে কোন ঈদের আনুষ্ঠানিকতাও রাখেননি। খুব সাদামাটাভাবে পালন হচ্ছে ঈদটা। পোলাও কোর্মা, রান্না বান্না – খুবই স্বল্প পরিসরে হয়েছে গণভবনে। একটা হলো একান্তই নিজের বেদনা, অন্যটা হলো নিজের দেশের বেদনা। শেখ হাসিনা তো সবসময় মানুষের জন্য চিন্তা করেন। এই বাস্তবতায় শেখ হাসিনার আর ঈদ পালন হলো না।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর দেশের এক চরম দুর্দশার সময় তিনি দেশে ফিরে এসেছিলেন। ১৯৮১ এর ১৭ মে ‘হতাশার কাফন মোড়ানো বিবর্ণ স্বদেশে ফিরে এসে’ শেখ হাসিনা স্বেচ্ছায় কাঁধে তুলে নিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ গড়ার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দায়িত্ব। কিন্তু প্রতি পদে তিনি বাধাগ্রস্ত হয়েছেন। একাত্তরের পরাজিত শক্তি, পঁচাত্তরের খুনি চক্র, মৌলবাদী চক্র, আমেরিকা-পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দাসহ আন্তর্জাতিক কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠী, দেশীয় সামরিক-বেসমারিক আমলা ও এলিটদের সুবিধাবাদী অংশ, এমনকি দলের নেতৃত্বের একাংশ অসংখ্যবার চেষ্টা করেছে তাঁকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে। কোন কিছুই তাকে আটকে রাখতে পারেনি। মানুষের কল্যানে তিনি এগিয়ে চলছেন।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭