নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 03/08/2020
মানুষ কুৎসিত, বিভৎস, পশুর চেয়ে অধম, মনুষ্যত্বহীন আরো কত কিছু বলি! এই ইট, কাঠের শহর জানে কত বিভৎস মানুষের মন; এই আবেগের শহরে বিবেকহীন মানুষের অভাব নেই! মানুষ আর মানুষ নেই। আছে মনুষ্যত্ব ও বিবেকহীন আবেগে টইটুম্বুর মানুষের খোলস। মৃত্যুর আর্তনাদও এই আবেগের কাছে বড়ই তুচ্ছ।
তবে যে যাই বলুক, ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’- এর উপরে আর কোন সত্যি নেই!
তিনটে ঘটনা বলি, মনোযোগ দিয়ে শুনুন (পড়ুন)-
১.
২০১৮ সালের মে মাসের ঘটনা!
জাপানের একটি রেল সংস্থা তাদের একটি ট্রেন নির্ধারিত সময়ের ২৫ সেকেন্ড আগে স্টেশন ছাড়ায় দু:খ প্রকাশ করে! গত প্রায় ছয় মাসে এটি এধরনের দ্বিতীয় ঘটনা ঘটে!
রেল পরিচালনা সংস্থা বলেছে, ``আমাদের খদ্দেরদের এর ফলে যে বড় রকমের অসুবিধা হয়েছে তা একেবারেই ক্ষমার অযোগ্য।``
জাপানে ট্রেন এতই ঘড়ির কাঁটা ধরে ছাড়ে অর্থাৎ সময়ানুবর্তিতার মাপকাঠি সেখানে এতই উঁচু যে এই ঘটনাকে সেখানে দেখা হচ্ছে ``মান পড়ে যাওয়া`` হিসাবে। তারা বলছে, মাত্র ছয় মাস আগেই নভেম্বরের শেষে তাদের একটা ট্রেন ছেড়েছিল নির্ধারিত সময়ের বিশ সেকেণ্ড আগে- আর এবারে সেটা গিয়ে দাঁড়াল পুরো ২৫ সেকেন্ড! ফলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এটা নিয়ে শুরু হয়ে গেছে রীতিমত শোরগোল। রেল পরিচালনা সংস্থা পুরোদমে ক্ষমা-টমা চেয়ে আর ভবিষ্যতে কখনো এরকম হবে না বলে ক্ষান্ত পান! বেশি না কিন্তু মাত্র ২৫ সেকেন্ড!
২.
দ্বিতীয় ঘটনাটি অনেকেই জানেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল, তবে ঘটনাটি সত্য!
জাপানের একটি জনহীন রেলওয়ে স্টেশন শুধুমাত্র এক ছাত্রীর জন্য এখনও চালু রয়েছে।
যাতে সে ঠিক সময়ে স্কুলে পৌঁছতে পারে।
জাপানের হোক্কাইডো দ্বীপের একদম উত্তর প্রান্তে রয়েছে কামি শিরাতাকি স্টেশন। নিতান্তই অজ পাড়া-গাঁ বলতে যা বোঝায় অনেকটা তাই। যাতায়াতের জন্য অন্যান্য মাধ্যম থাকায় রেলপথে কেউই খুব একটা কোথাও যাওয়া-আসা করেন না। এ কারণেই রেলদপ্তর ওই স্টেশনটি বন্ধ করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করে। কিন্তু পরিদর্শকরা তখন লক্ষ করেন, একটি মেয়ে সারা বছর ট্রেন ধরে স্কুলে যাতায়াত করে। ট্রেন না চললে তাঁর স্কুলে পৌঁছতে খুবই কষ্ট হবে। তাই ওই ছাত্রীর জন্যই একটি গোটা স্টেশন চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
শুধু তাই নয়, মেয়েটি যাতে সঠিক সময়ে স্কুলে পৌঁছতে পারে তার জন্য ট্রেনের টাইমও পাল্টে দেওয়া হয়। সারা দিনে ওই একটি ট্রেন তাঁকে স্কুলে পৌঁছে দেয় এবং বিকেলে তাঁকে ফের ওই জনহীন স্টেশনে নামিয়ে দিয়ে যায়। রেলদপ্তর এমনটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, যত দিন না মেয়েটি স্নাতক হচ্ছে, ততদিন এই ট্রেন পরিষেবা চালু রাখা হবে।
৩.
গ্রামের বিদ্যুতের কমিউনিটি সুইচবোর্ডের ভিতর বাসা বেঁধেছিল একটি বুলবুলি পাখি। সেই বাসায় আবার তিনটে ডিম পেড়েছিল পাখিটি। একজন গ্রামবাসী সবার আগে সেটি দেখতে পান। তিনি তার ছবি তুলে সেটি গ্রামের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পাঠান। তারপরই পুরো গ্রাম অন্ধকার। এক-দু দিন নয়। টানা ৩৫ দিন গ্রামবাসীরা অন্ধকারে থাকলেন। কেন, বা কিভাবে বলছি! এমন মানবিক ঘটনা মানুষের দ্বারাই সংঘটিত হয়েছে ভারতের তামিলনাড়ুর শিবগঙ্গা জেলার একটি গ্রামে।
গ্রামবাসীরা সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে পাখির ডিম থেকে ছানা ফুটে বের না হওয়া পর্যন্ত ওই গ্রামে আলো জ্বালানো হবে না। বুলবুলি পাখিটির বাসা ও ডিম বাঁচাতে টানা ৩৫ দিন গ্রামবাসী রাস্তার আলো জ্বালাননি। এই ভরা বর্ষায় পুরো গ্রামের লোকজন অন্ধকার রাস্তা দিয়েই চলাচল করেছেন। গ্রামে মোট ৩৫টি স্ট্রিটলাইট রয়েছে। কিন্তু তাঁরা গত ৩৫ দিন একটিও জ্বালাননি। কারণ সব সুইচ ওই কমিউনিটি সুইচবোর্ডে। সুইচ দিতে গেলেই পাখিটির অসুবিধা হবে! মোবাইলের টর্চ, টর্চ লাইট ব্যবহার করেই গ্রামবাসী এই কদিন রাস্তায় যাতায়াত করেছেন। জানা গেছে, গ্রামটিতে মোট একশ পরিবার রয়েছে। প্রথম দিকে কেউ কেউ সামান্য পাখির বাসার জন্য এতদিন অন্ধকারে চলাচল করতে রাজি হচ্ছিলেন না। কিন্তু গ্রামের যুবক-যুবতীরা তাদের অনুরোধ করেন।
মূর্তি ও কার্তি নামের দুই ভাইয়ের ওপর ছিল পাখিদের আচরণ লক্ষ্য রাখার দায়িত্ব। তারা রোজ মা পাখি উড়ে গেলে একবার করে দেখে আসতেন ডিমগুলো কী অবস্থায় রয়েছে! এর পর একদিন ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। তারপর সেই বাচ্চাগুলো বড় হতে থাকে। গ্রামবাসী অপেক্ষা করতে থাকেন। গ্রামবাসীর কেউ কেউ পাখির বাসা পরিষ্কারও করে দিতেন।
৭০০ কোটি মানুষ ভরা বিশ্বে সত্যিই কি মানবিকতা আছে? প্রশ্নটা এখনকার সময়ে খুবই প্রাসঙ্গিক। তবে এ সময়েও এমন এমন ঘটনা মানবিকতার ওপর বিশ্বাস রাখতে শেখায়, রাখতে বাধ্য করে!
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭