কালার ইনসাইড

এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে ফেসবুক-গুগল-ইউটিউব-নেটফ্লিক্সরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 03/08/2020


Thumbnail

করোনাকালে একটি জিনিসের প্রতি নির্ভরতা আমাদের সবচেয়ে বেশি বেড়েছে, তা হলো অনলাইন। আমাদের ২৪ ঘন্টাই যেন অনলাইনের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়েছে। আর বাংলাদেশিদের এত এত অনলাইন নির্ভরতা বাড়িয়েছে গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব, ইয়াহু, টুইটার, টিকটক, নেটফ্লিক্স, অ্যামাজানের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু দেশ তাতে কতটা লাভবান হচ্ছে?

গুগল-ফেসবুক-ইউটিউব- ইয়াহু বাংলাদেশ থেকে বছরে হাজার কোটি টাকার বেশি নিয়ে যাচ্ছে। এই মাধ্যমগুলো ব্যবহার করতে ব্যবহারকারীদের কোনও টাকা না লাগলেও মূলত বিজ্ঞাপন থেকেই এই বিপুল পরিমাণ অর্থ পায় প্রতিষ্ঠানগুলো। এছাড়া নিজের একটি পোস্ট বা ছবি ফেসবুকের মাধ্যমে অধিক সংখ্যক ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছাতেও টাকা দিতে হয়। টাকা দিয়ে পোস্ট বুস্ট করলে তা আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছায়। এর মাধ্যমেই সংশ্লিষ্ট মাধ্যমগুলো হাজার কোটি টাকা দেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছে। এর সঙ্গে রয়েছে বিনোদনের অনলাইন প্লাটফর্মগুলো- নেটফ্লিক্স, জি ফাইভ, হইচই, অ্যামাজান, জি ফাইভ। বিনোদনের এই প্লাটফর্মগুলো ভারতসহ বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ করলেও বাংলাদেশে তাদের কড়ি পয়সা বিনিয়োগের নাম নেই। অন্যদিকে নেটফ্লিক্স, অ্যামাজানের মতো এমন বিশ্ব মাত করা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে লড়ে আমাদের দেশীয় ওয়েব প্লাটফর্মগুলোর বেহাল দশা। বিদেশি এ কোম্পানিগুলো অবাধে বাংলাদেশে বিচরণ করলেও সরকার কোনভাবেই লাভবান হচ্ছে না।

প্রতিবছর দেশ থেকে অবৈধভাবে দুই শ’কোটি টাকারও বেশি নিয়ে যাচ্ছে নেটফ্লিক্স। যার কোনও খবর কারো কাছে নেই। সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর কাছে নেটফ্লিক্স সংক্রান্ত কোনো তথ্যও মিলছে না। অথচ ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশে দিব্যি ব্যবসা করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশে নেটফ্লিক্স ব্যবহারকারীর সংখ্যা দুই লাখেরও বেশি। যাদের কাছ থেকে মাসে গড়ে অন্তত ১০ ডলার চার্জ করলেও বিশাল অঙ্ক দাড়ায়। অনলাইন স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে সিনেমা, নাটক ও সিরিজ দেখিয়ে, কার্ড থেকে অনলাইনেই চার্জ করে নিয়ে নিচ্ছে এই অর্থ। যার জন্য কোনো ভ্যাট-ট্যাক্স আরোপ করা হচ্ছে না। যা অবৈধ ও দেশের জন্য বড় ক্ষতি বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশের জন্য অনুমোদিত সেলস পার্টনার হিসেবে এইচটিটিপুল’কে গতমাসে নিযুক্ত করেছে ফেসবুক। এইচটিটিপুল স্থানীয় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও এজেন্সিগুলোকে সহায়তা করবে। বিজ্ঞাপনের জন্য ফেসবুককে টাকায় অর্থ পরিশোধ করা যাবে এইচটিটিপুলের মাধ্যমে। ফেসবুকের অনুমোদিত সেলস পার্টনার হিসেবে এইচটিটিপুল বাংলাদেশের স্থানীয় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও এজেন্সিগুলোকে বিনামূল্যে উন্নতমানের ফেসবুক মিডিয়া পরামর্শ দেওয়ার জন্য প্রশিক্ষিত করবে। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও এজেন্সিগুলোকে নতুন ও প্রয়োজনীয় কৌশল শেখাতে ফেসবুক ব্লুপ্রিন্টসহ বিভিন্ন প্রোগ্রাম ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারবে। এইচটিটিপুলের মাধ্যমে টাকায় ফেসবুককে বিজ্ঞাপনের জন্য অর্থ পরিশোধ করা যাবে। বিশ্বব্যাপী আরও ১০টি মার্কেটে এইচটিটিপুল ফেসবুক অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে। সেক্ষেত্রে এইচটিটিপুল নামের বিজ্ঞাপনী সংস্থাটি থার্ড পার্টি হিসাবে কাজ করছে।

গুগল-ফেসবুক-ইউটিউব হাজার কোটি টাকা এ দেশ থেকে নিয়ে গেলেও সরকারকে কোনও কর দিচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানগুলো এ দেশে নিবন্ধিত না হওয়ায় বা কোনও অফিস না থাকায় তাদের করের আওতায় আনতে পারছে না সরকার। বৈধ চ্যানেলে না থাকার কারণে (বৈধ চ্যানেলে গেলেও তার পরিমাণ খুব অল্প) ঠিক কত পরিমাণ অর্থ বছরে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে তার কোনও সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। তবে হাজার কোটি টাকার বেশিই যে দেশের বাইরে যায় বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।

জানা গেছে, দেশের বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান, টেলিকম অপারেটর, বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো দিন দিন ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের দিকে বেশি ঝুঁকে যাচ্ছে। টেলিকম অপারেটরগুলোর সাম্প্রতিক ট্রেন্ড দেখলে দেখা যায়, সংবাদ মাধ্যমগুলোতে তাদের বিজ্ঞাপন নেই বললেই চলে। অনেক প্রতিষ্ঠান অনলাইনে প্রচার-প্রচারণা চালানোর জন্য পৃথক বিজ্ঞাপন ক্যাম্পেইনও করে থাকে।

দেশের প্রতিষ্ঠিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে মাসে গড়ে ৮-১০ হাজার ডলার খরচ করে থাকে। সেই হিসেবে এসব প্রতিষ্ঠান বছরে ১ লাখ ডলারের বেশি খরচ করে। প্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইনে প্রমোশনের জন্য এই ব্যয় করে থাকে। অনলাইনে বিজ্ঞাপন না দিলে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে পণ্যের অর্ডার আসা কমে যায়। ফলে বিজ্ঞাপন না দিয়ে উপায় থাকে না প্রতিষ্ঠানগুলোর। অন্যদিকে ফেসবুক নির্ভর ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের সাইটের ও নতুন পণ্যের প্রচারের কারণে বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে।

প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিদিন ৫-১০ ডলারের বিজ্ঞাপন বুস্ট (বিজ্ঞাপন প্রচার বাবদ খরচ) করে থাকে। আর্থিক সক্ষমতা কম থাকায় স্বল্প পরিমাণে করে হয়। বর্তমানে ১০-১৫ হাজার এফ-কমার্স প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে সক্রিয় পেজগুলোই সাধারণত নিজেদের পেজ থেকে বুস্টিং করে থাকে।

ফেসবুক-গুগলকে করের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। যদিও ফলপ্রসু কোন ফলাফল মেলেনি। কোন কিছুকেই তোয়াক্কা করে না এসব প্রতিষ্ঠান। একটি ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সির প্রধান নির্বাহী বলেন, ‘এটা করা হলে সরকার বিপুল অংকের অর্থ আয় করতে পারবে। তবে তার আগে গুগল-ফেসবুক-ইউটিউবকে এ দেশে নিবন্ধন বা অফিস খুলতে বাধ্য করতে হবে। যদি ফেসবুকসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান সরকারকে টাকা দিতে না চায় তাহলে তাদের কঠোর ভাষায় জানাতে হবে, এ দেশের কোনও বিজ্ঞাপন যেন ওরা না দেখায়। তাহলে ওরা একটা ইতিবাচক আয়োজনে আসতে বাধ্য হবে। ওদের আয় বন্ধ করার উদ্যোগ নিলে ঠিকই ওরা আমাদের কথা শুনতে বাধ্য।’

তিনি বলেন, ‘এই খাতে কাজ করতে এসে দেখছি বছরে প্রায় হাজার কোটি টাকা দেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছে গুগল-ফেসবুক-ইউটিউবসহ অন্যরা। যদিও এর বেশি অংশই বৈধ চ্যানেলে যাচ্ছে না।’

সেক্ষেত্রে যতদূর জানা যায়, ফেসবুক, গুগল, ইউটিউবের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা বলেছে বাংলাদেশের যে মার্কেট তাতে অফিস দিতে চাচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন শত কোটি টাকার মার্কেট হলেও হাজার কোটি টাকার মার্কেট হতে খুব বেশি সময় নেবে না বাংলাদেশ। সেক্ষেত্রে অবশ্যই এর লাগাম টেনে ধরা উচিত।

গুগল, ফেসবুক, ইয়াহু, ইউটিউব ও অ্যামাজনের মতো অনলাইন জায়ান্টের বাংলাদেশে কার্যালয় থাকা দরকার বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও। এতে জনপ্রিয় এসব মাধ্যমে প্রচারিত বিজ্ঞাপন বাবদ লেনদেন তদারকি সহজ হবে। এমন সুপারিশসহ উচ্চ আদালতে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে গত বছর বাংলাদেশ ব্যাংক। যদিও এখন পর্যন্ত তার সুরাহা হয়নি।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭