ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

বাবরি মসজিদের জায়গায় রাম মন্দির: মোদির ভূমি পূজার ৭ তথ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 05/08/2020


Thumbnail

ভারতের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদের জায়গায় রাম মন্দির নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলো আজ। করোনা সংকটের মধ্যেও দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজে উপস্থিত হয়ে এই ভিত্তি প্রস্তরের উদ্বোধন করেছেন। ভূমিপূজাও করেছেন তিনি। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক মোদির এই মহাযজ্ঞের কিছু তথ্য- 

এক

- আজ বুধবার সকালে দিল্লি থেকে লক্ষ্নৌ হয়ে অযোধ্যায় যান মোদি। পরে হনুমানগরি মন্দিরে যান তিনি। সেখান থেকে যান অযোদ্ধায়। এ সময় উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের মোহন ভগবত ও অন্যরা তার সঙ্গে ছিলেন।

দুই

- ৪০ কেজি ওজনের রুপার মুদ্রা বসিয়ে ভারতের উত্তরপ্রদেশের অযোদ্ধার বহুল বিতর্কিত রাম মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন মোদি। এ স্ময় ভূমিপূজা করা হয়। 

তিন

- ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘বহু দিনের প্রতীক্ষার অবসান ঘটল আজ। এত দিন তাঁবুতে মাথা গুঁজে ছিলেন রামলালা। এবার তার জন্য সুবিশাল মন্দির নির্মিত হবে। বহু শতক ধরে যে ভাঙা-গড়ার খেলা চলে আসছে, আজ রামজন্মভূমি তা থেকে মুক্ত হলো। সারায়ু নদীর তীরে সূচনা হলো স্বর্ণযুগের।’

চার

- ভারতের স্বাধীনতা দিবসের সঙ্গেও আজকের দিনটির তুলনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সারাদেশ স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দিয়েছিল। মন্দিরের জন্যও অনেকে বলিদান দিয়েছেন। ১৫ আগস্ট যেমন স্বাধীনতার প্রতীক। আজকের দিনটি তেমনই ত্যাগ, সংকল্প ও সংঘর্ষের প্রতীক।’

পাঁচ

- মন্দিরের নির্মাণকাজে ব্যবহারের জন্য সারাদেশ থেকে রামভক্তরা রুপা ও সোনার মুদ্রা, বার এবং ইট পাঠিয়েছেন। এসব মূল্যবান ধাতব মুদ্রা পাহারা দেয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ছয়

- গত কয়েক বছর ধরে ভক্তদের পাঠানো দেবতা ‘শ্রী রাম’র নাম খোদাইকৃত ২ লাখের বেশি ইট মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে ব্যবহার করা হয়েছে। প্রস্তাবিত মন্দিরের প্রধান নকশাকারী চন্দ্রকান্ত সম্পুরা বলেন, ভারতের উত্তরাঞ্চলের জনপ্রিয় ধাঁচের মন্দির নির্মাণশৈলী নাগারার অনুকরণে মন্দিরের কাঠামো নকশা করা হয়েছে।

সাত

- মন্দিরের অভ্যন্তরে প্রাথমিকভাবে দেবতাদের মূর্তি রাখা হয়েছে। মন্দিরের ভেতরে থাকবে বিশালাকারের তিনটি মেঝে। পাঁচটি গম্বুজ ও ৩৬৬টি স্তম্ভের ওপর গড়ে উঠবে তিনতলা বিশিষ্ট এই স্থাপনা। সম্পুরা বলেন, মন্দির আন্দোলনের সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন; তাদের সম্মানে একটি স্মৃতি প্রাচীর নির্মাণ করা হবে।

প্রসঙ্গত যে, অযোধ্যার রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদের ২ দশমিক ৭৭ একর বিতর্কিত জমির আইনি লড়াইয়ের শুরু হয় ১৯৫০ সালে। রামের ভক্ত গোপাল সিংহ বিশারদ বাবরি মসজিদকেই রামের জন্মভূমি দাবি করে সেখানে পূজার অধিকার চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন। পরমহংস রামচন্দ্র দাস সেখানে পূজার দাবি জানিয়ে মামলা করেন। ১৯৬১ সালে উত্তরপ্রদেশের সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড জমির অধিকার চেয়ে আদালতে যায়। ‘রামলালা বিরাজমান’ নিজেও মামলার পক্ষ হয়ে ওঠেন। এলাহাবাদ হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি দেবকীনন্দন আগারওয়ালের প্রধান দাবি, রামের জন্মভূমিই দেবতার চরিত্র পেয়েছে। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর সব মামলা এলাহাবাদ হাইকোর্টে চলে আসে। ২০১০ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্ট রায় দিয়েছিল, সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড, নির্মোহী আখাড়া, রামলালার মধ্যে জমি সমান ভাগে করে দেয়া হোক। ফলে হিন্দুরা পায় জমির তিন ভাগের দু’ভাগ। মুসলিমরা এক ভাগ। এর বিরুদ্ধে সব পক্ষই সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে। রামলালা বিরাজমানের আইনজীবীরা দাবি করেন, রামের জন্মভূমি দেবতাস্বরূপ। তার ভাগ হয় না।

বিতর্কিত জমি মন্দিরের জন্য দেয়ার রায় ব্যাখ্যা করে গত বছরের ৯ নভেম্বর দেশটির সুপ্রিম কোর্ট বলেন, আর্কিওলজি সার্ভে অব ইন্ডিয়া প্রমাণ পেয়েছে যে, মোঘল সম্রাট বাবরের ১৬ শতকের মসজিদ ফাঁকা জায়গায় নির্মাণ করা হয়নি। দেবতা রামচন্দ্রের জম্মভূমির ওপর তৈরি করা মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের ওপর মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে বলে ধারণা দেশটির কট্টরপন্থী হিন্দুত্ববাদীদের। ১৯৯২ সালে হামলা চালিয়ে এই মসজিদ ধ্বংস করার পর হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা শুরু হয়। এতে প্রায় ২ হাজার মানুষ মারা যান। মসজিদের স্থানে মন্দির নির্মাণের অনুমতি দিলেও ষোড়শ শতকের ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনাকে আইনের পরপন্থী বলে রায়ে বলেছিলেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট।

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭