কালার ইনসাইড

বলিউড ছবিতে রবীন্দ্রনাথের ১০ গান

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 06/08/2020


Thumbnail

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজের লেখা গানের বিষয়ে বলেছিলেন, ‘আমার গান তোমাদের গাইতেই হবে।’ দেড় শ বছর-এর বেশি পেরিয়ে গেল তাঁর জন্মের। লোকান্তরিত হয়েছেন তা-ও হয়ে গেল ৭৯ বছর। তাঁর গান বাঙালিসহ উপমহাদেশের মানুষের নিত্যদিনের জীবনচর্চায় মিশে আছে গভীরভাবে। মঞ্চ, ছোট পর্দা, বড় পর্দাকে প্রভাবিত করেছে নানাভাবে, নানা সময়ে।

উপমহাদেশসহ সারা পৃথিবীতে যুগের পর যুগ প্রভাব খাটানো বলিউড দুনিয়াও বারবার প্রভাবিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথের গানে। ‘মনে রবে কিনা’ কিংবা ‘ভেঙে মোর ঘরের চাবি’র মতো রবীন্দ্রনাথের কালজয়ী গানগুলো অনুকরণের প্রচেষ্টা ছিল বলিউডে। 
রবীন্দ্র সংগীতকে হিন্দি চলচ্চিত্রে যোগ করার ব্যাপারে সবার চেয়ে এগিয়ে আছেন শচীন দেববর্মন। এ কথা বললে অত্যুক্তি হবে না, বলিউডে ছবির গানে রবীন্দ্র সংগীত নিয়ে কাজ করাটা নিজের স্বাক্ষর করে ফেলেছিলেন কিংবদন্তি জনপ্রিয় সুরকার শচীন দেববর্মন। এর অবশ্য একটা বড় কারণ, শচীন দেব মূলত বাঙালি। ছিলেন বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলার মানুষ। ছোটবেলা থেকেই রবীন্দ্র সংগীত শুনে বড় হয়েছেন। যুগে যুগে নানা সুরকার প্রভাবিত হন বলিউড গানে। জেনে নিই সেখান থেকে বাছাই করা ১০টি গানের কথা।

‘রোদন ভরা এ বসন্ত’ যখন ‘মেরা সুন্দার স্বপ্না বিত গায়া’ 

১৯৪৯ সালের কথা। এ বছর মুক্তি পাওয়া ‘দো ভাই’ ছবিতে রবীন্দ্রনাথের জনপ্রিয় ‘রোদন ভরা এ বসন্তে’ গানটির অনুকরণে ‘মেরা সুন্দার স্বপ্না বিত গায়া’ গানটি করেছিলেন শচীন দেববর্মন। সুরের সঙ্গে শতভাগ মিল থাকলেও নতুন কথা নিয়ে গানটি করেছিলেন শচীন। 

‘সেদিন দুজনে’ যখন ‘নায়েন দিভানি’

ঠিক পরের বছর ১৯৫০ সালে মুক্তি পাওয়া ‘আফসার’ ছবিতে শচীন দেব আবারও আশ্রয় নিলেন রবীন্দ্রনাথের। ওই ছবিতে ‘নায়েন দিভানি এক নাহি মানে’ গানটির সুর পুরোপুরি ‘সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে’ গানের অনুকরণে করেছেন। 

‘মনে রবে কিনা’ থেকে ‘বাচপান কে দিন’

‘পেয়ারকিয়া তো ডরনা কেয়া’র স্রষ্টা নওশাদ আলীকে ভারতীয় চলচ্চিত্রের সর্বকালের অন্যতম সেরা সংগীত পরিচালক বলা হয়ে থাকে। বলিউডের সবচেয়ে হিট বেশ কিছু ছবির সংগীত পরিচালনা করেছেন তিনি। মেলোডি সুরকার হিসেবে তিনি অতুলনীয় এ সুরকার রবীন্দ্রনাথ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন তাঁর অন্যতম আলোচিত গান ‘বাচপান কে দিন ভোলা না দেনা’ গানটিতে। ১৯৫১ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দিদার’ ছবির এই গানটি পুরোপুরি কবিগুরুর ‘মনে রবে কিনা রবে আমারে’ গানটির অনুকরণ। 

‘হে ক্ষণিকের অতিথি’ যখন ‘জায়েন তো জায়েন কাহা’

আবার শচীন দেব। ১৯৫৪ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ট্যাক্সি ড্রাইভার’ ছবিতে ‘হে ক্ষণিকের অতিথি’ গানটি রূপান্তর করেন ‘যায়ে তো যায়ে কাহা’ শিরোনামে। তালাত মাহমুদের কণ্ঠে গানটি দেব আনন্দের ঠোঁটে দেখা গেছে।

‘ওরে গৃহবাসী’ থেকে ‘রাহি মাতওয়ালি’ 

একই বছর সুরকার অনিল বিশ্বাস বিখ্যাত ‘ওয়ারিশ’ ছবিতে ‘রাহি মাতওয়ালি’ গানটি পুরোপুরি করেছেন রবীন্দ্রনাথের ‘ওরে গৃহবাসী খোল্ দ্বার খোল্’ গানের অনুকরণে। এ গানেও কণ্ঠ দিয়েছেন দুজন বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী তালাত মাহমুদ ও সুরাইয়া জামাল শেখ। 

‘যদি তারে নাই চিনি’ যখন ‘তেরে মেরে মিলন কি’

অমিতাভ-জয়া জুটির ‘অভিমান’ ছবিটি দেখেননি, এমন সিনিয়র দর্শক খুঁজে পাওয়া কঠিন। এ ছবির সব কটি গানই জনপ্রিয় হয়েছিল। যেখান অমিতাভ ও জয়া দুজনই সংগীতশিল্পীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। এ ছবিতে জনপ্রিয়তা পাওয়া ‘তেরে মেরে মিলন কি ইয়ে র‍্যায়না’ গানটি পুরোপুরিই ‘যদি তারে নাই চিনি গো’ গানের অনুকরণে। গানটির সুর নিলেও নতুন কথায় বেঁধেছিলেন শচীন দেববর্মন। কণ্ঠ দিয়েছিলেন কিশোর কুমার ও লতা। ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৭৩ সালে।

‘ভেঙে মোর ঘরের চাবি’ থেকে ‘নানহা সা পাঞ্চি’ 

১৯৭৭ সালে মুক্তি ‘টটি খিলানে’ মুক্তি পায়। এ ছবিতে বাপ্পি লাহড়ি রবীন্দ্রনাথের ‘ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি’ অনুকরণে করেন ‘নানহা সা পাঞ্চি রে তু’ গানটি। এ গানে কণ্ঠ দেন কিশোর কুমার। 
আট।

‘তোমার হলো শুরু আমার হলো সারা’ গানের সুরে করা ‘ছুঁ কার মেরে মান কো’

‘তোমার হলো শুরু আমার হলো সারা’ গানটি বহুশ্রুত রবীন্দ্রসংগীত। এ গানের সুরের অনুকরণে করা ‘ছুঁ কার মেরে মান কো’ বলিউডে রবীন্দ্রসংগীত ব্যবহারে আরেক মাইলফলক। ১৯৮১ সালে রাজেশ রোশনের সংগীতায়োজনে ‘ইয়ারানা’ ছবির এই গানে কণ্ঠ দেন কিশোর কুমার। অমিতাভ ঠোঁট মিলিয়েছেন রোমান্টিক এ গানের সঙ্গে। 
নয়।

‘পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে’ থেকে ‘বান্ধান খুলা পানছি উড়া’

এই তো সেদিনের কথা। ১৯৯৭ সালে মুক্তি পাওয়া নানা পাটেকার ও মনীষা কৈরালা অভিনীত ‘যুগপুরুষ’ দারুণ হিট হয়। ওই ছবিতে ‘বান্ধান খুলা পানছি উড়া’ গানের সঙ্গে মনীষার নাচ বেশ লেগেছিল দর্শকের। রাজেশ রোশনের ‘বান্ধান খুলা পানছি উড়া’ সুর নেওয়া হয় ‘পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে’ থেকে। মূল কথার সঙ্গে কোনো মিল না থাকলে ভিডিও দেখলে মনে রবীন্দ্রনাথের কথার সঙ্গে মিল আছে দৃশ্যায়নে। 

‘ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে’ গানের ছায়ায় ‘পিয়ু বলে পিয়া বলে’

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস ‘পরিণীতা’ নিয়ে প্রদীপ সরকারের চলচ্চিত্র ‘পরিণীতা’তেও আছেন রবিঠাকুর। ‘ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে’ গানের ছায়া অবলম্বনে শান্তনু মৈত্র সুর করেন ‘পিয়ু বলে পিয়া বলে’ গানটি। সোনু নিগাম ও শ্রেয়া ঘোষাল কণ্ঠ দিয়েছেন এ গানে। অভিনয় করেছেন বিদ্যা বালান ও সাইফ আলী খান।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭