নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 07/08/2020
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদকে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুটি পৃথক পৃথক অভিযোগে আগামী ১২ এবং ১৩ আগস্ট তাঁকে দুদকে হাজির হতে হবে। ১২ তারিখে তিনি যাবেন মাস্ক কেলেঙ্কারিতে তাঁর সম্পৃক্ততার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের জবাব দিতে আর ১৩ তারিখে যাবেন রিজেন্ট হাসপাতাল কেলেঙ্কারিতে তাঁর ভূমিকা পরিষ্কার করতে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, দুদক রিজেন্ট হাসপাতালের অনুমোদন কিভাবে দেওয়া হলো সে ব্যাপারে তদন্ত করতে গিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালকের সম্পৃক্ততার তথ্য-উপাত্ত পেয়েছে। রিজেন্ট হাসপাতালের ঘটনা যখন ঘটলো তখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বিবৃতিতে বলা হয়েছিল যে, উপরের মহলের নির্দেশে তাঁরা রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করে। এরপর মন্ত্রণালয় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে এবং ডিজিকে এই ব্যাপারে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ৩ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশে জানান যে, সাবেক স্বাস্থ্যসচিব আসাদুল ইসলামের টেলিফোনের নির্দেশে তিনি এইরকম চুক্তি করতে গিয়েছিলেন। দুর্নীতি দমন কমিশন রিজেন্ট হাসপাতাল মামলায় কার ভূমিকা কতটুকু তা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে আরো একটি বিষয় নিয়ে দুদক তদন্ত করছে তা হলো রিজেন্ট হাসপাতাল যে ভুয়া রিপোর্ট প্রদান করছে সেই সম্পর্কে নিপসমের পরিচালক অধ্যাপক ডা বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালককে লিখিতভাবে অবহিত করেছিলেন, এই অবহিত করার পরেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেননি বা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে সেই বিষয়টিকে অবহিত না করে তিনি বরং অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) কে দিয়ে তাঁদের পরীক্ষা সীমিত করার একটি নির্দেশনা দিয়েছিলেন। কেন এবং কি পরিস্থিতিতে তিনি এই সমস্ত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছিলেন সেই ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা চায়।
দুদকের একটি সূত্র বলছে যে, শুধু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক নয়, সাবেক সচিব আসাদুল ইসলাম এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেককেও দুদক ডাকা হবে। কারণ রিজেন্টের অনুমোদন এবং জেএমআই-এর মাস্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রণালয়ের ব্যক্তিদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। এই ব্যাপারে তাঁদের অবস্থান স্পষ্ট করা দরকার। দুদকের কাছে সিএমএসডি’র সাবেক প্রয়াত পরিচালকের একটি চিঠিও রয়েছে, যে চিঠিটি তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে লিখেছিলেন। সেখানে তিনি স্বাস্থ্যখাতে বিভিন্ন দুর্নীতির ব্যাপারে মন্ত্রী এবং তাঁর পুত্রের সংশ্লিষ্টতার কথা উল্লেখ করেছিলেন। এই বাস্তবতায় জেএমআই-এর মাস্ক কেলেঙ্কারিতে মন্ত্রী এবং সচিবের ভূমিকা কি এবং মন্ত্রী এবং সচিব আসলে কতটুকু সম্পৃক্ত ছিল সে ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার।
উল্লেখ্য যে, দুদকের অন্যতম একজন কুশীল বলেছেন যে, দুদকের আইনে মন্ত্রী বা সচিবকে তলব করার ক্ষেত্রে আইনগত কোন বাধা নেই। তদন্তের স্বার্থে দুদক তা করতে পারে। এই জন্যেই মহাপরিচালকের জিজ্ঞাসাবাদের পর দুদক সাবেক স্বাস্থ্যসচিবকেও তলব করতে পারে। দুদকের একজন কর্মকর্তা বলেছেন যে, আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা আবুল কালাম আজাদের মুখ থেকে শুনতে চাই যে, তিনি কার নির্দেশে রিজেন্টের সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন এবং এটা জানার পরে তিনি যাদের নাম বলবেন তাঁদেরকেও আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করবো।
অন্যদিকে জেএমআই মাস্ক কেলেঙ্কারিতে মন্ত্রীর নাম যেহেতু এসেছে, সেহেতু মন্ত্রীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তবে দুদক বলছে যে, এটা অতীতেও হয়েছে। এর আগে পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের অনুরোধে দুদক যখন তদন্ত করেছিল তখন সাবেক সেতুমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে দুদকে তলব করা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমানকেও দুদকে ডাকা হয়েছিল।
কাজেই সুষ্ঠ তদন্তের স্বার্থে সাবেক সচিব এবং মন্ত্রীকেও দুদক ডাকবে বলে জানা গেছে। এসমস্ত জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁদের সম্পৃক্ততার প্রেক্ষিতে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭