ইনসাইড বাংলাদেশ

সামনে করোনার ভয়ঙ্কর রূপ দেখবে বাংলাদেশ?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 08/08/2020


Thumbnail

বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি আস্তে আস্তে কমে আসছে- এরকম মন্তব্য যারা করেছেন তাঁদের সঙ্গে একমত নন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে লন্ডনের ইম্পেরাল ইউনিভার্সিটি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির সাম্প্রতিক গবেষণাগুলোতে বলা হচ্ছে যে, খুব শীঘ্রই করোনার দ্বিতীয় ওয়েভ বা পর্যায় শুরু হতে যাচ্ছে। এই দ্বিতীয় পর্যায়ে বাংলাদেশে করোনা ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করতে পারে।

বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের পাঁচ মাস অতিবাহিত হচ্ছে আজ। গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছিল, এরপর থেকে এই পাঁচ মাসে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ প্রতিদিনই বেড়েছে। এখন আড়াই লাখের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এবং প্রায় সাড়ে তিন হাজারের কাছাকাছি মানুষ করোনায় মৃত্যুবরণ করেছে। যদিও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যুর হার অনেক কম এবং করোনায় আক্রান্ত হয়ে মানুষ দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছে। আর এই পর্যায়ে নানা কারণে পরীক্ষা কম হচ্ছে এবং আক্রান্তের সংখ্যাও কম দেখানো হচ্ছে। অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে নানারকম বাস্তবতার কারণে হাসপাতালে যাচ্ছেন না, বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাড়িতে চিকিৎসা করে অনেকে তথ্য গোপন করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এরকম পরিস্থিতিতে সবথেকে মৌলিক প্রশ্ন উঠেছে যে, বাংলাদেশে কি করোনা পরিস্থিতি আস্তে আস্তে কমে আসছে? বাংলাদেশ কি খুব শীঘ্রই করোনার প্রকোপ থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছে?

এই প্রশ্নে বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। তাঁরা বলছেন যে, বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি এখনো শেষ হয়নি, বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে আছে তা বলার মতো তথ্য-উপাত্ত এখনো পাওয়া যায়নি। কারণ বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ১৩ লাখেরও কম পরীক্ষা করা হয়েছে এবং সারাবিশ্বে যে জনসংখ্যার হার, সেই হারে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ১৫৩ তম। তাই বাংলাদেশের প্রকৃত পরিস্থিতি বোঝার জন্যে আরো বেশি পরীক্ষা করা দরকার, কিন্তু এখন পরীক্ষা কম হচ্ছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, মানুষ এখন নানা কারণে পরীক্ষার জন্যে আগ্রহী নয়, তাছাড়া বন্যা পরিস্থিতির কারণে পরীক্ষার সংখ্যা কমে গেছে।

তবে দেশের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন যে, দেশে করোনা সংক্রমণ কমার কোন লক্ষণ নেই, বরং আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে কোন কোন বিশেষজ্ঞ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। আর এই অভিমত প্রকাশের ক্ষেত্রে তাঁরা দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাকে উপজীব্য করছেন। একটি হলো লন্ডনের ইম্পেরাল ইউনিভার্সিটির গবেষণা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির ফোরকাস্ট রিপোর্ট বা পূর্বাভাস প্রতিবেদন। ইম্পেরাল ইউনিভার্সিটির গবেষণায় বলা হচ্ছে যে, বাংলাদেশের বহু মানুষ করোনা পরীক্ষার বাইরে চলে যাচ্ছে এবং মৃদু সংক্রমণ বেশি হওয়ার কারণে করোনা আক্রান্তরা তথ্য গোপন করছেন। এই কারণে বাংলাদেশকে নিয়ে ভয়, বাংলাদেশে করোনার অনেকগুলো জিন উপস্থিত রয়েছে বলেও ইম্পেরাল ইউনিভার্সিটির গবেষণায় বলা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে যে জিনটি করোনা সংক্রমণকে অত্যন্ত ভয়ার্ত এবং আক্রান্ত ব্যক্তিকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে সেই জিনটি যদি বেশি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে বাংলাদেশে করোনার ভয়ঙ্কর রূপ দেখা যেতে পারে।

জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি তাঁদের প্রতিবেদনে বলছে যে, বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি দ্বিতীয় পর্যায়ের অপেক্ষায় রয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রথম পর্যায়ই শেষ হয়নি। দেখা গেছে বিভিন্ন দেশে দ্বিতীয় পর্যায়ে করোনা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে এবং তাঁতে মৃত্যুহার বেড়ে গেছে। বাংলাদেশের করোনা নিয়ে আশাবাদের প্রধান জায়গা হলো কম মৃত্যু হার।

কিন্তু দ্বিতীয় পর্যায়ে যদি করোনা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে তাহলে মৃত্যুহার বাড়বে এবং তখন বাংলাদেশ এক জটিল পরিস্থিতির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অবশ্য বিশেষজ্ঞদের এই ধরণের বক্তব্যের সঙ্গে পুরোপুরি একমত নয় সরকারি মহল। তাঁরা বলছেন যে, গত পাঁচ মাসে বাংলাদেশে করোনার যে পরিস্থিতি গিয়েছে এর থেকে খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা নেই এবং সামনে হয়তো করোনা সংক্রমণ কিছুটা বাড়তে পারে সবকিছু খুলে দেওয়ার কারণে। তবে সেটাও সহনীয় মাত্রায় থাকবে। সামনে মৃদু উপসর্গসহ করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাই বেশি হবে এবং করোনা বাংলাদেশে ভয়ঙ্কর রূপ নেবে না।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭