ইনসাইড বাংলাদেশ

তাকসিম ওয়াসায় নিয়োগই পেয়েছিলেন অবৈধভাবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 08/08/2020


Thumbnail

পয়ঃনিষ্কাশনে ২০ বছরের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়েছিল নিয়োগের শর্তে। অথচ তার এ বিষয়ে ছিল না এক বছরের অভিজ্ঞতাও। তবুও তিনিই হয়েছিলেন ওয়াসার এমডি। কর্তা ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে একে একে ৫ বার বাড়িয়েছেন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ। আর এভাবেই এক দশকেরও বেশি সময় ওয়াসার শীর্ষ পদ দখল করে রেখেছেন তাকসিম এ খান।

বর্ষা আসে, বর্ষা যায়। এ নগরীর জলাবদ্ধতা আরো বাড়ে। প্রায় ১ যুগ ধরে ওয়াসার এমডির দায়িত্বে থাকা তাকসিম এ খানের সময় দখল, দূষণে ভরাট বেদখল হয়েছে নগরীর প্রায় সবকটি খাল। কয়েকগুণ দাম বাড়লেও নিশ্চিত হয়নি মানুষের সুপেয় পানির অধিকার।

সবচেয়ে দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালন করা এ ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নিয়োগ প্রক্রিয়া কতটা স্বচ্ছ? ২০০৯ সালের ৩১ মে একটি জাতীয় দৈনিকে এমডি পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতে পয়ঃনিষ্কাশন কাজে ২০ বছরের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু নিয়োগের জন্য করা ৫৩ বছর বয়সী তাকসিম এ খানের ছিল না ন্যূনতম এক বছরের অভিজ্ঞতা। তৎকালীন বোর্ড চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফার যোগসাজশে হয়েছিল অস্বচ্ছ এ নিয়োগ।

তবে তা মানতে নারাজ ২০০৯-১২ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করা তৎকালীন এই বোর্ড চেয়ারম্যান। তার মতে, ওয়াসায় এ পর্যন্ত যত এমডি ছিল তার মধ্যে ‘হি (তাকসিম) ইজ দ্যা বেস্ট’। তিনি এ নিয়ে তাকসিমের সাফাই গেয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানা জায়গায় কথাবার্তাও বলছেন।

জানা যায়, ১ম চুক্তির ৩ বছর পূর্ণ হওয়ার পর বোর্ডের সুপারিশে আবারও ১ বছর বাড়ানো হয় এমডির নিয়োগের মেয়াদ। পরের বার পূর্ণ মন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে বোর্ডের সুপারিশ ছাড়াই তৎকালীন প্রতিমন্ত্রীকে ধরে তড়িঘড়ি করে আরও একবার মেয়াদ বাড়িয়ে নেন তাকসিম, যা ওয়াসা আইনেরও পরিপন্থি। বোর্ডকে অবজ্ঞা করার জের ধরে পদত্যাগও করতে দেখা যায় তৎকালীন বোর্ড চেয়ারম্যানকে।

৪র্থ মেয়াদে বাড়ে আরও ১ বছর। কিন্তু ৫ মেয়াদে ঘটে উল্টো ঘটনা। যেখানে বোর্ড মন্ত্রণালয়কে নিয়োগের সুপারিশ করবে, সেখানে বর্তমান এমডিকে সুপারিশ করে নিয়োগের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ের পাঠানোর নির্দেশ আসে মন্ত্রণালয় থেকেই। এ ব্যাপারে মুখ খুলছেন না তাকসিমও।

বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির নানা অভিযোগ তদন্ত চলছে ওয়াসার দায়িত্বপ্রাপ্ত এ এমডির বিরুদ্ধে। প্রকল্পের কাজ শেষ। তুলে নেয়া হয়েছে ৩ হাজার ৮শ কোটি টাকা। অথচ তৈরি হয়নি সরবরাহ লাইন। ঢাকা ওয়াসার পদ্মা-যশোলদিয়া পানি সরবরাহ প্রকল্পের হাল এমনি। বছরে লোকসান দু`শো কোটি টাকারও বেশি। এসব অনিয়মের প্রতিবাদ করায় তৎকালীন প্রকল্প পরিচালককে সরিয়ে দিয়ে ঐ পদে পছন্দের এক প্রকৌশলীকে বসিয়েছিলেন ওয়াসার এমডি তাকসিম আলম খান।

পদ্মা-যশোলদিয়া পানি শোধনাগার প্রকল্প। রাজধানীবাসীর পানির সংকট মেটাতে ৭ বছর আগে হাতে নেয়া এ প্রকল্পের লক্ষ্য প্রতিদিন ৪৫ কোটি লিটার সুপেয় পানি সরবরাহ। কিন্তু ৬ বছর পর প্রকল্প শেষ, তুলে নেয়া হয়েছে পুরো টাকাই। যে ঢাকাবাসীর জন্য নেয়া এ প্রকল্প তাদের ঘরে পানি পৌঁছে দিতে এখন পর্যন্ত তৈরিই হয়নি সরবরাহ লাইন। থেকে গেছে পানির সংকট। পুরনো লাইনেই চলছে পানি সরবরাহ। দৈনিক ৪৫ কোটি লিটার করে যেখানে মাসে ১ হাজার ৩৫০ কোটি লিটার পানি সরবরাহের কথা সেখানে ঢাকাবাসী পানি পাচ্ছে মাসে ৪৬০ কোটি লিটারের মত। এতে বছরে এ প্রকল্পে ক্ষতি হচ্ছে ২শ কোটি টাকার বেশি।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭