নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 09/08/2020
বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করতে পারেন বা পদত্যাগ করতে পারেন দলের চেয়ারপারসনের পদ থেকে- এরকম গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে বিএনপিতে। আর এই প্রেক্ষাপটে বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতা যারা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে রাজনীতি করেছেন তাঁরা গণপদত্যাগের হুমকি দিয়েছেন বলে বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
দুটি দুর্নীতির মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত বেগম খালেদা জিয়া। ২৫ মাস জেল খাটার পর তিনি গত ২৫ মার্চ জামিন পান। প্রধানমন্ত্রীর অনুকম্পায় তাঁকে জামিন দেওয়া হয়। জামিন পাওয়ার পর বেগম খালেদা জিয়া গত সাড়ে চার মাস তাঁর ফিরোজার বাসভবনে রয়েছেন। সেখান থেকে তিনি বের হননি, কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেও অংশগ্রহণ করেননি। এই সময়ে তাঁর পরিবারের লোকজন ছাড়া পারতপক্ষে কারো সঙ্গে তিনি দেখা করেননি। দুই ঈদে বিএনপির স্থায়ী কমিটির কিছু নেতৃবৃন্দ তাঁর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেছেন। বিএনপির নেতারাই স্বীকার করেছেন যে, এই সময়ে কোন রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়নি, আলোচনা হয়েছে শুধুমাত্র সুখ-দুঃখের বিষয় নিয়ে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন যে, এই সময়ে আমরা শুধু স্মৃতিচারণ করেছি, সুখ-দুঃখের কথা বলেছি। কোন রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়নি।
বেগম খালেদা জিয়ার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে যে, তিনি এখন রাজনীতিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। রাজনীতির ব্যাপারে তাঁর তেমন কোন উৎসাহ নেই। বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের দুই সদস্য তাঁর ভাই শামীম এস্কান্দার এবং বোন সেলিমা ইসলামও চাননা তিনি রাজনীতির মধ্যে জড়িয়ে থাকুক। এর মধ্যে আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের ৬ মাসের সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে এবং নতুন করে জামিন নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে স্বীকার করেছেন বিএনপি নেতারা এবং বেগম খালেদা জিয়ার পরিবার। আর এই কারণেই বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা আবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করবেন বলেও জানিয়েছেন। তবে কবে এই সাক্ষাত হবে সে ব্যাপারে তাঁরা সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলেননি। বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি করে তাঁকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চাওয়া হবে।
সরকারের একাধিক সূত্র বলছে যে, বেগম খালেদা জিয়া গত সাড়ে ৪ মাস যেভাবে কাটিয়েছেন তাঁতে সরকার সন্তুষ্ট। তিনি কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেননি এবং জামিনের শর্ত ভঙ্গ করেননি। এই অবস্থায় তাঁর চিকিৎসার জন্যে শর্ত সাপেক্ষে তাঁর জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদনটি বিবেচনা করতে পারে। তবে আইনমন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল ইসলাম বলেছেন যে, এই ধরণের কোন আবেদনই আমাদের কাছে আসেনি। আবেদন আসার পর আমরা বিবেচনা করে দেখবো এবং এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবো। আবেদন পাওয়ার আগে এই ধরণের কোন আগাম মন্তব্য করা ঠিক নয়।
তবে একাধিক সূত্র বলছে যে, বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার শর্ত হিসেবে তাঁকে রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ বা দলীয় প্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে, তাঁর পরিবার এমন একটি প্রস্তাবনা নিয়ে কাজ করছে বলে তাঁরা জানতে পেরেছে। বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, তিনি যদি বিদেশে যেতে চান তাহলে সেক্ষেত্রে তিনি হয়তো রাজনীতি থেকে আপাতত অবসর নিবেন। বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন যে, যখন বেগম খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হন, তখনো তিনি দলের চেয়ারপারসনের পদ ছেড়েছিলেন এবং তাঁর পুত্র তারেক জিয়াকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করেছিলেন। এখন যেহেতু খালেদা জিয়া দণ্ডিত এবং শারীরিকভাবে অসুস্থ তাই বিএনপির দায়িত্ব পরিচালনা করা তাঁর পক্ষে অসম্ভব। আর এই কারণেই আনুষ্ঠানিকভাবে দলের প্রধানের পদ কিছুদিন হলেও ছাড়তে চান। কিন্তু বিএনপির মধ্যে এটা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।
বিএনপির একাধিক নেতা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছেন। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, ব্যরিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ব্যরিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়াঁ সহ প্রমুখ নেতারা মনে করছেন যে, বেগম খালেদা জিয়া নামকা ওয়াস্তে দলের প্রধান থাকলেও তারই দায়িত্ব পালন করা উচিত, অন্য কারো নয়। বেগম খালেদা জিয়া ছাড়া বিএনপি টিকতে পারবে না এবং জনগণের কাছে বিএনপির গ্রহণযোগ্যতাও থাকবে না। কারণ বিএনপির অনেক নেতাই মনে করেন যে, বিএনপিতে এখনো বেগম খালেদা জিয়ার বিকল্প তৈরি হয়নি। নানা কারণেই তারেক জিয়া দলের কাছে গ্রহণযোগ্য নন এবং দলের তৃণমূলেও তারেক জিয়ার অবস্থান দৃঢ় নয়। তারেক জিয়ার দুর্নীতি এবং তাঁর নানারকম অপকর্মের কারণে তাঁর অবস্থান জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবেও গ্রহণযোগ্য নয় বলে বিএনপি নেতৃবৃন্দ মনে করেন। আর এই কারণে বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতি করুক না করুক দলীয় প্রধানের পদে আলংকরিকভাবে হলেও তাঁর থাকা দরকার বলে মনে করেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ। আর এই জন্যেই তাঁরা বলছেন যে, বেগম খালেদা জিয়া যদি শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ বা রাজনৈতিকভাবে অবসরের সিদ্ধান্ত নেন তাহলে তাঁরা গণপদত্যাগ করবেন।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭