ইনসাইড আর্টিকেল

খুনী মোশতাক সব সময়ই বিপজ্জনক ব্যক্তি ছিলেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 10/08/2020


Thumbnail

মোশতাককে কৃশ ও ক্ষুধার্ত দেখাত। মোশতাক তাদের সাথে দুপুর বা রাতে যখন খেতেন তখন মুজিব কিছুটা মজা করে তাঁর স্ত্রীকে বলতেন, তার দিকে বিশেষ নজর দিও। তাকে ক্ষুধার্ত অবস্থায় যেতে দেয়া উচিত নয়। সে দিনে মাত্র একবারই আহার করে।

মুজিব ছিলেন হাসিখুশী মেজাজের এবং তাঁর খোশ মেজাজী হাসি হৃদয় উষ্ণ করে দিত। কিন্তু মোশতাক ছিল তার বিপরীত এবং তার রুগ্ন পরিহাসের হাসি একজনকে থামানোর জন্য ছিল যথেষ্ট।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর পরই মোশতাকের অনুস্মৃতি করতে যেয়ে জয়প্রকাশ নারায়ণ বলে মোশতাক সবসময় খেলাধুলা করে তাদের গড় উচ্চতার চেয়ে রুগ্ন, লাঙ্গালীদের মতো টুপি পরত। মোশতাকের টুপি ছিল তার ব্যক্তিত্বেরই অংশ। ঢাকার একজন ব্যাংকার মোশতাককে বলতেন “টুপিওয়ালা। লক্ষ লক্ষ লোক টুপি পরে; কিন্তু মোশতাকের টুপি ব্যাংকারকে পাকিস্তানী অতীতকে স্মরণ করিয়ে দিত যা তিনি ভুলতে যাইতেন। স্বাধীনতার কিছুদিন পরেই ব্যাংকার তার কয়েকজন বন্ধুকে বলেছেন, “মোশতাক একজন অপরিবর্তিত মুসলিম লীগার, সে তার পূর্ব পুরুষের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। মোশতাক ছিল ১৯৪৯ সালে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের প্রতিপক্ষ হিসেবে গঠিত পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। নতুন দলের সদস্যরা ছিলেন পুরাতন মুসলিম লীগার, কিন্তু তাদের অধিকাংশের ছিল ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গী এবং তাদের মধ্যে বামপন্থীরাও ছিলেন। সবাই এটিকে আওয়ামী মুসলিম লীগ নয় আওয়ামী লীগ বলেই ডাকতেন। এটি ছিল একটি প্রাদেশিক দল যা ছিল বাঙালী জাতীয়তাবাদের সৌভাগ্যের প্রতীক এবং এটি পূর্ব বাংলায় রাজনৈতিক উন্নয়নের প্রেরণা যুগিয়েছিল।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী মাতৃ ভাষার জন্য বাঙালীরা প্রথম তাদের জীবন উৎসর্গ করেন। এর দুই বছর পর জনগণ প্রদেশে মুসলিম লীগ সরকারকে বর্জন করে।

১৯৫৪ সালে পূর্ব বাংলার নির্বাচন পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন মোড় নেয়। আমরা নির্বাচন সম্পর্কে আলোচনা করতে পারি। যাহোক, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে বুঝতে হলে এ নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এখানে তার সংক্ষিপ্ত খসড়া দিতে চেষ্টা করবো।

পাকিস্তানের সমপর্যায়ের মুসলিম লীগ নির্বাচনে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে নেতাদের এনে এবং স্থানীয় মোল্লাদের সংগ্রহ করে ব্যাপক প্রচারকার্য চালায়। এর নির্বাচনী প্রচারাভিযানের প্রধান দফা ছিল ভারত বিদ্বেষ`। আওয়ামী লীগ, কৃষক শ্রমিক পার্টি ও অন্য দুটি দলের সমন্বয়ে গঠিত যুক্তফ্রন্ট ২১ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করে। এটি ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারীর (ভাষা শহীদ দিবস) আবেগকে কাজে লাগায় এবং বাঙালী জাতীয়তাবাদ বিকাশের আবেদন জানায়। এর প্রধান দাবী ছিল শুধুমাত্র প্রতিরক্ষা, মুদ্রা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাদে পূর্ণ প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন। | মুসলিম লীগ সরকার নির্বাচনের পূর্বে শতশত বিরোধী ছাত্র ও রাজনৈতিক কর্মীকে আটক করে। তবুও ফজলুল হক, মাওলানা ভাসানী, এইচ এস, সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে যুক্তফন্ট ২৩৭ টি মুসলমান আসনের মধ্যে ২০৮ টিতে জয়লাভ করে মুসলিম লীগকে ধরাশায়ী করে। (৩০৫ সদস্য বিশিষ্ট আইন সভায় ৭২টি আসন। সংরক্ষিত ছিল)। মুসলিম লীগ মাত্র ৯টি আসন লাভে সমর্থ হয়। বালে এ.কে ফজলুল হক ১৯৫৪ সালের ৩ এপ্রিল পূর্ব বাংলার মুখ্যমী ছিল করেন, কিন্তু ইতিমধ্যেই তাঁর মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে গিয়েছিল।

১৯৫৪ সালের ২৪ মে করাচীতে মুখ্যমন্ত্রীদের সম্মেলনে পাকিস্তানের জন্য পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দাবা করেন। পরদিন কেন্দ্রীয় সরকার পাকিস্তানের স্বাধীনতা দাবী করার জন্য অভিযুক্ত করে।

ফজলুল হক বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের একক স্বশাসিত হওয়া উচিত। এটা ত আদর্শ এবং আমরা এর জন্য সংগ্রাম করবো। আমি একমুহূর্তের জন্যেও বলিনি আমাদের আদর্শ স্বাধীনতা। | ফজলুল হক দেশের অর্ধেকের বেশী জনগণের প্রতিনিধি। তবু তিনি এবং ১ মসিভার সহকর্মীরা যতদূর সম্ভব ঘোষণা করেন যে, পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন। হওয়া পূর্ব পাকিস্তানের লক্ষ্য নয়। কিন্তু এটিও তাদের সাহায্য করেনি। ১৯৫৪ সালের। ৩০ মে প্রধানমন্ত্রী বগুড়ার মোহাম্মদ আলা পাকিস্তানহ নিউইয়র্ক টাইমসের। সংবাদদাতার সাক্ষ্যের ভিত্তিতে ফজলুল হক মন্ত্রিসভাকে বরখাস্ত করে। কারণ। সংবাদদাতা বলেছে যে ফজলুল হক তার সাথে কথা বলার সময় পূর্ব পাকিস্তানের জন্য স্বাধীনতা চেয়েছিলেন তার প্রমাণ তার সংগ্রহে রয়েছে।

প্লেবয়’ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ আলীকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত থাকা অবস্থায় ওয়াশিংটন থেকে নিয়ে এসে প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনের স্থলাভিষিক্ত করা হয়। ফজলুল হক শের-ই-বাংলা (বাংলার বাঘ) হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। বাঘ হককে বরখাস্ত করল `প্লেবয়’ আলী।

পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম জনপ্রিয় নির্বাচিত মন্ত্রিসভা মাত্র ৫৭ দিন স্থায়ী হয়। কেন্দ্রীয় সরকার ভারত শাসন আইনের ৯২ এ ধারা ও পূর্ব বাংলায় গভর্ণরের শাসন আরোপ করে। | মেজর জেনারেল ইস্কান্দার মীর্জা নতুন গভর্ণর নিযুক্ত হবার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত প্রতিরক্ষা সচিব পদে বহাল ছিল।।

গভর্ণর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পরদিন একটি সাংবাদিক সম্মেলনে ইস্কান্দার। মীর্জা বলে যে, ভারতীয় দালাল ও কমিউনিষ্টরা পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক ও শ্রমিক সমিতির আন্দোলনে পরিপূর্ণ কর্তৃত্ব অর্জন করে এবং যুক্তফ্রন্টের নেতারা পূর্ব বাংলাকে। ভারতের সাথে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা করেছিল। সে সতর্ক করে বলে, “যদি প্রয়োজন হয় জাতীয় ঐক্য রক্ষার জন্য সেনাবাহিনী ১০ হাজার লোককে হত্যা করতে দ্বিধা করবে না।”১৯৭১ সালে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ৩০ লক্ষ বাঙালীকে হত্যা করে। ফজলুল হক মন্ত্রিসভাকে বরখাস্ত করার পর পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক শক্তিগুলোর। মধ্যে একটি মেরুকরণ হয়। কেন্দ্রের মুসলিম লীগ সরকার প্রতিনিধিত্বের সামান্য দাবা। হারালেও তা ক্ষমতা আঁকড়ে থাকে। ১৯৫৫ সালের প্রতিশ্রুত সাধারণ নির্বাচন অনুতা। হলোনা।

১৯৫৪ সালের শেষভাগে আওয়ামী মুসলিম লীগের অধিকাংশ সদস্য মনে করেন দলের নামে মুসলিম শব্দটি একটা বাধা বিশেষ এবং তারা এটাকে বাদ দিতে চাইলে কিন্তু মোশতাকের কাছে দলটি ছিল মুসলিম লীগ-এর সাথে আওয়ামী` শব্দটি দলের নাম থেকে বাদ দেয়ার পক্ষে ভোট দেন তখন সালাম খান ও মোশতাক অধিবেশন থেকে বেরিয়ে যান। অনেক লেখক বলেছেন, মোশতাক ফজলুল হকের কৃষক শ্রমিক পার্টিতে (কেএসপি) যোগ দেয়। তাদের কথা ভুল; মোশতাকের জন্য কেএসপিতে কোন স্থান ছিলনা। সে সালাম খানের নেতৃত্বাধীন ২২ জনের গ্রুপে যোগ দেয়ার ভান করে, যারা তখনও আওয়ামী মুসলিম লীগ বলত। কিন্তু বুদ্ধিমানের মতো এটায় যোগ না দেয়ার সিদ্ধান্ত উকে যাওয়া গ্রুপ খন্ড-বিখন্ড হয়ে যায় এমনকি ১৯৫৮ সালের পর আর।

মোশতাক অন্তরে একজন মুসলিম লাগারই রয়ে যায়। বাংলাদেশের চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতির একটি ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা। শোষক ও সাম্প্রদায়িক পাকিস্তানী বাহিনীর বিপক্ষে স্বাধীনতা সগ্রাম চলার সময় হতে এর উদ্ভব হয়েছিল। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতায় মোশতাক বিরক্ত বোধ করত। স্বাধীনতার মাত্র দুই মাস পর ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারীতে সে কয়েকজন ভারতীয় সাংবাদিককে যন্ত্রণাকাতর অভিব্যক্তিতে বলে যখন আমরা ঘোষণা করেছি আমাদের প্রতিশ্রুতি সমাজতন্ত্র, এর অর্থ আমরা। ধর্মনিরপেক্ষ। কেন তাহলে ধর্মনিরপেক্ষতার এই অপ্রয়োজনীয় জোরালো প্রকাশ?’’ মোশতাক ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করতো না এবং সমাজতন্ত্র ছিল তার কাছে অভিশপ্তনীতি। স্বাধীনতার পরপরই একজন মহিলা চিকিৎসক লিপিবদ্ধ করেন,” মুজিব নগরের দিনগুলোর গ্রুপ ছবিতে মোশতাককে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের একজন সদস্য নয় বরং একজন বহিরাগত বলে মনে হয়। তিনি সঠিক। এমনকি মোশতাক যখন সমানের সারিতে থাকতো, তাকে পেছনের বলে মনে হতো, সে তার সহকর্মীদের সাথে পুরোপুরি শনাক্ত হতে চাইতো না এবং সে নিজেকে পেছনে রাখার চেষ্টা করতো।

ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালে পাকিস্তান দিবসে (২৩ মার্চ) দেয়া তার বাণীতে বলে, “এখন সময় এসেছে সুষম কাজের মাধ্যমে পূর্ব ও পশ্চিম উভয় অংশের সমন্বয়পূর্ণ। পদ্ধতিতে সর্বজনীন লক্ষ্যের জন্য আমাদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের একসাথে কাজ করার।

এমনকি কল্পনার দুঃসাধ্যেরও অধিক শয়তানসুলভ বাণী। ক্ষমতা হস্তান্তরের নয়, শুরু হয় শক্তি প্রয়োগের প্রক্রিয়া। ‘অপারেশন ব্রিজ’ কিংবা যেটাকে আরো যথার্থভাবে বলা যায় ‘অপারেশন জেনোসাইড’ তার শেষ পর্যায়ের কাজের তুলির ছোঁয়া লাগানো। হছিল। ইয়াহিয়া খান পশ্চিম পাকিস্তানী নেতাদের অল্প কয়েক ঘন্টার মধ্যে ঢাকা ত্যাগের নির্দেশ দিয়ে শক্তি প্রয়োগের জন্য মঞ্চ পরিষ্কার করে। একমাত্র ভূট্টোই। আতশবাজি’ দেখার জন্য ঢাকায় অবস্থান করে।শওকত হায়াত খান ঢাকা বিমানবন্দরে যাওয়ার পথে মোশতাকের আগামাসি লেনস্থ বাসায় যায়। সে ছিল উত্তেজিত। তার তথ্য ছিল যে ২৪ মার্চ বাঙালীদের উপর বড় মানের সেনা অভিযান চালানো হবে। মুজিবের সাথে সাক্ষাৎ করা সম্ভব নয় বলে সে। হল এই বার্তা এবং মুজিবকে তার ছালাম মোশতাক পৌঁছে দেবে।

শওকত হায়াতের বার্তা নিয়ে তাড়াতাড়ি মুজিবের কাছে যাবার সময় মোশতাক তার বন্ধু ডাঃ টি, হোসেনকে এটা বলার জন্য ধানমন্ডির সিটি নার্সিং হোমে যায়।

মুজিব ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চে তার সাথে দেখা করতে আসা সমস্ত আওয়ামী লীগ নেতাদের ঢাকা ত্যাগ করে তাদের নিজ নিজ এলাকায় চলে যাবার নির্দেশ দেন। সেনা অভিযানের পূর্বে তারা শহর ছেড়ে যেতে পারেননি, কিন্তু তারা পূর্ব সতর্কতা হিসেবে নিজ বাসায় অবস্থান করেননি।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ সকালে কয়েকজন তাদের রেডিও বা টানজিষ্টার সেট একটি সামরিক ঘোষণা শুনতে পান। যা পুনরাবৃত্তি করাহল, বড়টিকে খাঁচায় আটক হয়েছে। অন্যান্য পাখীরা তাদের বাসায় নেই। অপর সেনা ঘোষণায় বলা হয় “টি ৮ গেছে।‘বড়টি’ হলেন মুজিব এবং ‘টি’ হলেন তাজুদ্দিন।

২৭ মার্চ কয়েক ঘন্টার জন্য সান্ধ্য আইন শিথিল করা হলে তাজুদ্দিন ভারতে যাবার। জন্য ঢাকা ত্যাগ করেন। বেশীরভাগ নেতাই প্রথম সুযোগে ঢাকা ত্যাগ করেন। কিন্তু সমস্ত আওয়ামী লীগ নেতাদের শহর থেকে পালানোর একদিন পর অর্থাৎ ২৮। মার্চ তার আগামাসি লেনের বাসা থেকে মোশতাককে উদ্ধার করে তার বন্ধু ডাঃ টি হোসেনের সিটি নার্সিং হোমে নিয়ে যাওয়া হয়। আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদে নিশ্চিত সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছিল এবং স্পীকার পদের জন্য প্রার্থী হিসেবে মোশতাকের নাম। ছিল। সেনাবাহিনী কি তাকে খুঁজতে তার বাড়ীর দিকে যায়নি যেখানে তারা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করার জন্যে খুজে বেড়াচ্ছিল?

এমনকি অবাঙালী চিকিৎসক ডাঃ রব তাকে দেখার পরও মোশতাক সিটি নার্সিং হোমে প্রায় দশদিন অবস্থান করে।।

যাহোক, ১৯৭১ সালের ৭ এপ্রিল সকালে কলকাতা অল ইন্ডিয়া রেডিও একটি বেতার ঘোষণায় বলে যে, কয়েকজন ভারতীয় নেতা অতিশীঘ্র বাংলাদেশের স্বীকৃতি দাবী করেছে। মোশতাক ও তার বন্ধু হোসেন এটা বুঝতে পারে যে, ভারত যে কোনদিন। বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবে; যদি বীকৃতি দেয়া হয় তবে তারাও তা থেকে বঞ্চিত হতে। চায়নি। হোসেন মোশতাককে বলে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা স্বীকৃতি (বাংলাদেশকে)। দিতে সিটি নার্সিং হোমে আসতে পারবে না। কাউকে গিয়ে তাদের কাছে প্রস্তাব করতে। হবে।” বিকেলে হোসেনকে মোশতাক জিজ্ঞেস করে, তুমি কি সত্যিই মনে কর আমার। দেশের বাইরে যাওয়া উচিত? হোসেন বলে, তুমি রাজনীতিবিদ, আমি নই। কিন্তু আমি মনস্থির করেছি এবং আমি তোমাকে সবরকমের সাহায্য করতে পারি।মোশতাকের ঢাকায় উপস্থিতি গোপন থাকতে পারে না। সিটি নার্সিং হোমে ৫০ জন লোক ছিল এবং তাদের মধ্যে কয়েকজন ছিল আওয়ামী লীগের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন। পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর জেনারেল টিক্কা খানের ভারপ্রাপ্ত উপদেষ্টা হামিদুল হক চৌধুরী। জানতে পারে যে, মোশতাক ঢাকায় আছে এবং সে মোশতাকের সংস্পর্শে যাওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু সে সময়ে মোশতাক ভারতের পথে রওয়ানা হয়ে গিয়েছিল।

হামিদুল হক চৌধুরীর অন্য কোন আওয়ামী লীগ নেতার সান্নিধ্যে যাওয়ার সাহস। ছিল না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় তাজুদ্দিন।।

হামিদুল হক মোশতাককে ভালভাবেই জানত; এমনকি যদিও তারা আপাতভাবে। বিরোধী শিবিরে ছিল তবুও তারা দু`জন অনেক ক্ষেত্রেই ছিল এক রকম।।

ভারতে পৌছে তাজুদ্দিন ঘোষণা করেন, আমরা যুদ্ধ করতে চাই, আমরা যুদ্ধ করতে চাই; কিভাবে?” তিনি প্রশ্ন করেন, তা তিনি জানতেন না। তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, আমরা যুদ্ধ করবো। কয়েকজন তাজুদ্দিনের কথা স্মরণ করে, ঠাট্টা করে কিন্তু সনে। প্রতিরোধ আন্দোলন শুরু হয়েছে আমরা যুদ্ধ করবো” এই ঘোষণার মাধ্যমে।

মোশতাকের চিন্তাভাবনা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। সে ভারতে গিয়েছিল তার বন্ধু ও সহকর্মী যারা সীমান্ত অতিক্রম করার সুযোগ পেয়েছিলো তাদের সাহায্যে সরকার গঠনের সম্ভাবনা পরীক্ষা করতে। হঠাৎ সে প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে সচেতন হলো যে, যদি জাতীয় পরিষদ সমবেত হয় তবে সে স্পীকার হতে পারে।

মোশতাক বেশ অনিচ্ছার সাথে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ গ্রহণ। করে। কিন্তু সে তার পদকে নিজের সুবিধার্থে ব্যবহার করে। মার্কিন কটনীতিকগণ এবং অন্যান্য কর্মকর্তা যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে বিভক্ত করতে চাইছিল। তার মোশতাকের সংস্পর্শে আসে।

মোশতাক পরে বলেছে যে সে মার্কিন কূটনীতিকদের থেকে শুধুমাত্র বাংলাদেশ। সম্পর্কে ওয়াশিংটনের সরাসরি চিন্তাভাবনা জানার জন্য চেষ্টা করেছিল। এমনকি দিল্লীস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত কেনেথ কিটিং, ঢাকার মার্কিন কনসাল জেনারেল হারবার্ট পিঙ্ক যখন। আমেরিকার পাকিস্তানের দিকে ঝুকে পড়ার সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছিল, সেখানে। মোশতাকের বাকচাতুর্যপূর্ণ ব্যাখ্যা হতবুদ্ধি করে দেয়। মোশতাকের ব্যাখ্যা হেনরী কিসিঞ্জার আরো হাস্যকর করে তোলে। কিসিঞ্জার দাবী করেছিল যে সে সময়ে ‘ভারতীয় আক্রমণ যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকদের ইয়াহিয়া খান ও কলকাতা কেন্দ্রিক বাংলাদেশ নেতৃত্বকে আপোস মীমাংসার আলোচনা আরম্ভ করতে প্ররোচিত করেছিল। কিসিঞ্জারের ‘কলকাতা কেন্দ্রিক বাংলাদেশ নেতৃত্ব` বলতে বাংলাদেশ সরকারের অন্য চার সদস্য অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজুদ্দিন আহমেদ, এম মনসুর আলী এবং এ,এইচ, কিট কামরুজ্জামানকে নয়, শুধুমাত্র পররাষ্ট্র মন্ত্রী মোশতাককেইবোঝাতো। ১৯৭১ সালের অক্টোবরে দৈনিক টেলিগ্রাফ বলে, একমাত্র বাস্তব সমাধান হলো এখন গোপন বিচারের সম্মুখীন শেখ মুজিবের সাথে আপোস করা, এমনকি তার সময়ও। অতিবাহিত হয়ে যাচ্ছে। এর পূর্বে যদি পাকিস্তান সরকার ও নির্বাসিত বাংলাদেশ পরকারের মধ্যে আপোস-মীমাংসা হতো তবে মুজিবকে বিনাশর্তে মুক্তি দিতে হতো। ৯৬৯ সালের ফেব্রুয়ারীতে আওয়ামী লীগ বলেছিল যে রাষ্ট্রদ্রোহিতার জন্য আগরতলা ভুযন্ত্র মামলার বিচারের সম্মুখীন হওয়া কেবলমাত্র মুজিবই রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান হূত গোল টেবিল বৈঠকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। ইয়াহিয়ার বন্ধু এবং ১৯৭১ সালে পাকিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জোসেফ ফরল্যান্ড দাবী করে যে সে ইয়াহিয়াকে বলেছিল আমেরিকা অনুভব করে যে মুজিব ভবিষ্যতে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের স্থায়ীত্বের চাবিকাঠি। তবুও সে পশ্চিম কস্তানের একটি কারাগারে আটক মুজিবকে উপেক্ষা করে কলকাতায় থাকা মোশতাকের সাথে লেনদেন করতে চাইছিল। ফারল্যান্ড, ১৯৭১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ইয়াহিয়া খানকে পরামর্শ দেয় যে আমেরিকা পাকিস্তান সরকার এবং নির্বাসিত বাঙালীদের মধ্যে ‘গোপন যোগাযোগ স্থাপন করতে তাদের মধ্যস্থতা করবে।’ সে ইয়াহিয়ার কাছে মোশতাকের নাম সুপারিশ করেছিল।

দ্বিতীয় অংশ আগামীকাল…

হু কিলড মুজিব বই থেকে সংকলিত…

[ভারতীয় সাংবাদিক এ এল খতিবের সাংবাদিকতা জীবনের বেশির ভাগ কাটে ঢাকায়। তিনি কাছ থেকে দেখেছেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ। ১৫ আগস্টের পূর্বাপর ঘটনা বিবৃত হয়েছে তাঁর হু কিলডমুজিব বইয়ে।]



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭