ইনসাইড আর্টিকেল

বিখ্যাত রাজনীতিবিদদের সাফল্যের নেপথ্যে যারা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 10/08/2020


Thumbnail

বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী; অর্ধেক তার নর। কাজী নজরুলের এই লাইনটি যেন অনেকটাই প্রবাদ হয়ে গেছে। অনেক সময় আমরা অনেকেই এই লাইন দুটি উল্লেখ করে থাকি। যে কোন দেশেই মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি কাজ করেন রাজনীতিকরা। আমরা অনেকেই জানি না যে বেশিরভাগ বিখ্যাত রাজনীতিকের তার কাজের পেছনে মূল প্রেরণা হিসেবে থাকেন তার স্ত্রী। যেমন আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনে তার স্ত্রী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ভূমিকাও অনেক। বঙ্গবন্ধু জেলে থাকাকালে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেলখানায় খাবার নিয়ে যেতেন। তিনি বঙ্গবন্ধুকে সাহস দিতেন। সেইসাথে ছাত্রলীগ, যুবলীগ সহ বিভিন্ন সংগঠনের জন্য নির্দেশনা নিয়ে আসতেন। এভাবে ফজিলাতান্নেছা মুজিব বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনে অপরিহার্য হয়ে উঠেছিলেন। তেমনি বিশ্বের অনেক রাজনৈতিক নেতার রাজনৈতিক জীবনেই তাদের স্ত্রীদের অপরিহার্য ভূমিকা রয়েছে।

সোফি ট্রুডো

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর স্ত্রী হলেন সোফি ট্রুডো। সুদর্শন জাস্টিন ট্রুডো ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন সোফিকে। জানা যায়, ট্রুডোর রাজনৈতিক জীবনে তার ভূমিকা অনেক। ট্রুডোর রাজনৈতিক জীবনে মোড় পাল্টে দেওয়ার মতো অনেক সিদ্ধান্তেই সোফির ভূমিকা রয়েছে। তিনি শুধু ট্রুডোর দাম্পত্য জীবনের-ই সহচর নয়। বরং তার রাজনৈতিক জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে চলছেন। জানা যায়, ট্রুডোর অনেক সভা সমাবেশেই উপস্থিত থাকেন তার অর্ধাঙ্গিনী।

মিশেল ওবামা

মিশেল ওবামা হলেন একজন আমেরিকান আইনজীবি ও লেখক। তিনি ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি ছিলেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪তম ও সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সহধর্মিণী এবং দেশটির প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান ফার্স্ট লেডি। ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত শিকাগোর উত্তরাংশে বেড়ে ওঠা মিশেল ওবামা প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় ও হার্ভার্ড ল স্কুল থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি সিলডি অস্টিন নামক একটি আইন সংস্থায় কর্মরত ছিলেন যেখানে প্রথমবার বারাক ওবামার সাথে তার পরিচয় ঘটে। ১৯৯২ সালে বারাক ওবামা ও মিশেল ওবামা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। জানা যায়, প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার রাজনৈতিক জীবনে মিশেল ওবামার অবদান অনেক। ওবামার রাজনৈতিক জীবনের সূচনা থেকেই তার পেছনে ছিলেন মিশেল ওবামা। তার প্রতিটি রাজনৈতিক কর্মসূচী ও কর্মপরিকল্পনা তৈরির পেছনে অনেকটাই ‘থিংক ট্যাংক’ হিসেবে কাজ করেছিলেন মিশেল ওবামা। অবশ্য বারাক ওবামা এখনো বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে তার রাজনৈতিক জীবনে স্ত্রীর ভূমিকার বিষয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

কমলা নেহেরু

কমলা নেহেরু ছিলেন একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহর লাল নেহেরুর স্ত্রী। পরবর্তীতে তাঁদের কন্যা ইন্দিরা ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন। কমলা ১৬ বছর বয়সে জওহরলাল নেহেরুকে বিয়ে করেছিলেন। তার বিয়ের পরপরই তাঁর স্বামী হিমালয় ভ্রমণে গিয়েছিলেন। জওহরলাল নেহেরু তাঁর আত্ম জীবনীতে তাঁর স্ত্রীর কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি তাকে প্রায় উপেক্ষা করেছি’। জওহর লাল নেহেরুর রাজনৈতিক জীবনে কমলা নেহেরু ছিলেন একনিষ্ঠ সহচর। তিনি জহওর লাল নেহেরুর সঙ্গে জাতীয় আন্দোলনে জড়িত হন এবং কিছু সময়ের মধ্যে তিনি সামনের সারিতে চলে আসেন। 
১৯২১ সালের অসহযোগ আন্দোলনের সময় তিনি এলাহাবাদ এর নারীদের সংগঠিত করেন এবং দোকানে বিদেশী কাপড় ও বিদেশী পানীয় বিক্রয় এর বিরুদ্ধে পিকেটিং শুরু করেন। যখন তার স্বামী গ্রেফতার হন যাতে ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ বক্তব্য না দিতে পারেন। তিনি চলে গেলেন তার স্বামীর জায়গায় সেটা পড়তে। ব্রিটিশরা শীঘ্রই উপলব্ধি করে যে কমলা নেহরু নারীদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন এবং পুরো দেশে মহিলাদের নিয়ে সংগঠন তৈরি করে ফেলছেন। স্বাধীনতা আন্দোলনে জড়িত থাকার জন্য তিনি দু বার গ্রেফতার হন সরোজিনী নাইডু এবং অন্যান্য মহিলাদের সঙ্গে। এই সময়ে তিনি তাঁর বাাড়ি স্বরাজ ভবনে একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র খোলেন সেখানে আহত স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং তাদের পরিবার ও এলাহাবাদের অন্যান্য বাসিন্দাদের চিকিৎসা করা হতো। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে মহাত্মা গান্ধী অন্যান্য কংগ্রেসের নেতাদের সহোযোগিতায় এটাকে একটি সম্পূর্ণ হাসপাতালে পরিণত করেন সেটি কমলা নেহরু মেমোরিয়াল হসপিটাল নামে পরিচিত।


এভাবে বিশ্ব নেতাদের অনেকের রাজনৈতিক জীবনে সরব ভূমিকা পালন করেছেন তাদের স্ত্রীরা। তারা দাম্পত্য জীবনের পাশাপাশি রাজনৈতিক জীবনেরও সহচর হয়ে উঠেছিলেন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭