ইনসাইড গ্রাউন্ড

আতাহার আলী খান: অনালোচিত যার ক্রিকেটীয় প্রতিভা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 10/08/2020


Thumbnail

২২ গজের লড়াইটা যেমন ব্যাটে-বলে হয়, তেমনি হয় ধারাভাষ্য কক্ষেও। রোমাঞ্চকর একটা ম্যাচের আমেজ বহুগুণেই বাড়িয়ে দিতে পারেন ধারাভাষ্যকাররা। জন আরলর্ট, টনি গ্রেগ, রিচি বেনো, অ্যালান উইলকিন্স, ইয়ান বিশপ কিংবা হার্শা ভোগলে- যুগে যুগে যারা কণ্ঠস্বর দিয়ে ক্রিকেটকে জীবন্ত করে চলেছেন তাঁদের সারিতে দুই যুগের বেশি সময় ধরে একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করছেন আতাহার আলী খান। তাঁকে বলা হয় ‘ভয়েস অব বাংলাদেশ’। ধারাভাষ্য কক্ষে যিনি লাল-সবুজের বাংলাদেশের হয়ে লড়েন, শত বাজে সময়ে, দলের ভরাডুবি আর প্রতিপক্ষের উষ্কানি উপেক্ষা করে আতাহার আলী খান মানেই বাংলাদেশ।

ধারাভাষ্যকার থেকে অবশ্য নিজেকে ক্রিকেটার হিসেবে পরিচয় দিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য আতাহারের। অবশ্য ক্রিকেটার আতাহার আলী খান বেশ খানিকটা অপরিচিত। ১৯৬২ সালে ঢাকায় জন্ম নেওয়া আতাহার আলী খানের স্কুলের বেশির ভাগ এবং কলেজ জীবন কেটেছে পাকিস্তানের করাচিতে। ১৯৭০ এর দিকে আতাহার আলীর বাবা সপরিবারে চলে যান পাকিস্তান এবং দেশে ফেরেন ১৯৭৭ সালের দিকে। বাংলাদেশে ফেরার পর ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি আবাহনীর হয়ে ক্রিকেট শুরু করেন ঘরোয়া ক্রিকেট, এক বছর পর দল বদলে সূর্যতরুণে পাড়ি জমান।

১৯৮৪ সালে আতাহার আলী বাংলাদেশ টাইগার্সের হয়ে সাউথ এশিয়ান কাপে খেলেন; ১৯৮৪-৮৪ সালে ঢাকা ইউনিভার্সিটির হয়ে ন্যাশনাল ক্রিকেটের শিরোপা জেতেন। ১৯৮৮ সালে ২৭ অক্টোবর চট্টগ্রামে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে ক্রিকেট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় এই মিনি অলরাউন্ডারের। ১০ বছরের ক্যারিয়ারে ১৯টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। তিনটি হাফসেঞ্চুরিসহ ৫৩২ রানের পাশাপাশি তার দখলে রয়েছে ৬টি উইকেট।

পার্শ্ব চরিত্রের জন্য বিখ্যাত ছিলেন এই ডান হাতি অলরাউন্ডার। উইলস কাপ ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরি করেছিলেন তারিকুজ্জামান মুনির, আতাহার করেছিলেন ১৫৫। পঞ্চম উইকেটে তাদের ৪১৭ রানের পার্টনারশিপ এখনো বাংলাদেশের যেকোন পর্যায়ের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পার্টনারশিপের রেকর্ড। তাঁর আরেকটি পার্শ্ব কীর্তি হলো ১৯৯৭ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে। মোহাম্মদ রফিকের সাথে করা ১৩৭ রানের ওপেনিং জুটি, যা আমাদের প্রথম ওয়ানডে জয়ের স্বাদ এনে দেয়। মোহাম্মদ রফিক ৭৭ রান করে ম্যাচ সেরা হন, আর আতাহার করেন ৪৭ রান।

১৯৯০ সালের শেষ দিন এশিয়া কাপে কলকাতার ইডেন গার্ডেনসে ৫০,০০০ দর্শকের সামনে আতাহার খেলেন ৭৮ রানের এক অবিস্মরণীয় ইনিংস। প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কার ডেরায় তখন প্রমদায় বিক্রমাসিংহে, চম্পকা রমানায়েকে, সনাৎ জয়াসুরিয়ার মতো বোলার। সেই ম্যাচে অরবিন্দ দি সিলভা বেশি রান করলেও ম্যাচ সেরা হন আতহার আলী খান, বাংলাদেশি কোনো খেলোয়াড় প্রথম বারের মতো এই পুরস্কার পান সেদিন। সেটাই ছিল আতাহার আলীর ক্যারিয়ারের একমাত্র ম্যান অব দ্যা ম্যাচ পুরষ্কার।

তাঁর ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ রান আসে ১৯৯৭ সালে এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে, ৮২ রান। ওই বারের এশিয়া কাপে ৩ ম্যাচে ১৫৭ রান করেন আতাহার। ইনজামাম, সেলিম মালিক, শচীনদের পিছনে ফেলে সর্বোচ্চ রান তোলার তালিকায় পঞ্চম ছিলেন সেবার। তিনি কোচ মহিন্দর অমরনাথের প্রিয়পাত্র ছিলেন। তাঁর ইচ্ছাতেই চার নম্বর থেকে প্রমোশন পেয়ে খেলেন ওপেনিংয়ে।

১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি জয়ে আতাহারের ভূমিকা না বললেই নয়। নয় ম্যাচে করেছিলেন ১৭০ রান। কিন্তু ধীর গতির ব্যাটসম্যান, এই অজুহাতে ফাইনাল ম্যাচে দলে থাকলেও ব্যাট করার সুযোগ হয় নি। সেদিন বৃষ্টি বিঘ্নিত কার্টেল ওভার ম্যাচে জয়ের জন্য বাংলাদেশের দরকার ছিল ২৫ ওভারে ১৬৬ রান। নিয়মিত ওপেনার আতাহারের জায়গায় ব্যাট করতে পাঠানো হয় নাঈমুর রহমান দুর্জয়কে। সেই ম্যাচে দুর্জয়ের অবদান ছিল ১ বলে ০ রান। একটু ধীর ব্যাটিং করেন বলে সেই ম্যাচে আর ব্যাট হাতে নামাই হয়নি আতহারের।

১৯ ম্যাচের ছোট আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্যারিয়ারে আতাহার তিন হাফ সেঞ্চুরির সৌজন্যে  রান করেন ৫৩২। গড় ২৯.৫৫ , ২০০২-০৩ সাল পর্যন্ত যা বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রান এবং সর্বোচ্চ গড় হয়ে টিকে ছিলো। তারপরও ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে খেলা হয়নি তাঁর। স্কোয়াডে তাঁকে এবং মিনহাজুল আবেদীন নান্নুকে না রাখায় অনেক সমালোচনা হয়েছিল। নান্নুকে পড়ে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল, ফেরানো হয়নি আতহারকে। না ফেরার আক্ষেপ নিয়েই অবসরে চলে যান আতাহার। অবশ্য ক্রিকেটের অবসর তাঁকে ক্রিকেট থেকে দূরে রাখতে পারেনি। মাইক্রোফোন হাতে সেই ক্রিকেটেই ফিরে আসেন তিনি।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭