ইনসাইড আর্টিকেল

জন্মাষ্টমী শোভাযাত্রার ইতিহাস

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 11/08/2020


Thumbnail

একসময় ঢাকায় জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রা ছিল উপমহাদেশে বিখ্যাত। জন্মাষ্টমী উৎসবে শোভাযাত্রার শুরু হয়েছিল ষোড়শ শতকে।  ইসলাম খাঁর ঢাকা নগরের পত্তনের (১৬১০ সাল) আগে বংশালের কাছে এক সাধু বাস করতেন। ১৫৫৫ সালে (ভাদ্র ৯৬২ বাংলা) তিনি শ্রীশ্রী রাধাষ্টমী উপলক্ষে বালক ও ভক্তদের হলুদ পোশাক পরিয়ে একটি মিছিল বের করেছিলেন। 

এর প্রায় ১০-১২ বছর পর সেই সাধু ও বালকদের উৎসাহে রাধাষ্টমীর কীর্তনের পরিবর্তে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মোপলক্ষে জন্মাষ্টমীর অপেক্ষাকৃত জাঁকজমকপূর্ণ একটি শোভাযাত্রা বের করার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছিল। সে উদ্যোগেই ১৫৬৫ সালে প্রথম জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রা বের হয় রাজপথে।

পরবর্তীতে এ শোভাযাত্রার দায়ভার এসে বর্তায় ঢাকার নবাবপুরের ধণাঢ্য ব্যবসায়ী কৃষ্ণদাস বসাকের পরিবারের ওপর। কালক্রমে জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রা একটি সাংগঠনিক রূপ ধারণ করে এবং প্রতি বছর জন্মাষ্টমী উৎসবের নিয়মিত অঙ্গ হয়ে দাঁড়ায়। 

১০৪৫ বঙ্গাব্দে কৃষ্ণদাসের মৃত্যুর পর থেকে শ্রীশ্রী লক্ষ্মীনারায়ণ চক্র এ উৎসবের আয়োজন শুরু করেন এবং ধীরে ধীরে জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রাকে উন্নত করে তোলেন। 

এরপর থেকে নবাবপুরের ধণাঢ্য ব্যক্তিরাও জন্মাষ্টমী উপলক্ষে নিজ নিজ এলাকা থেকে শোভাযাত্রা বের করতে শুরু করে, কালক্রমে যা পরিচিত হয়ে উঠে ‘নবাবপুরের মিছিল’ নামে। অষ্টাদশ শতকের গোড়ার দিকে ইসলামপুরের পান্নিটোলার কিছু ব্যবসায়ী ভগবানের জন্মতিথিতে শোভাযাত্রা বের করতে শুরু করেন।

জেমস টেলর নামে এক লেখক ১৭২৫ সালে প্রকাশিত প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, ওই সময় জন্মাষ্টমী পালনের জন্য দুটি পক্ষের সৃষ্টি হয়। নবাবপুর পক্ষকে বলা হতো লক্ষ্মীনারায়ণের দল আর ইসলামপুর পক্ষকে বলা হতো-মুরারি মোহনের দল। সপ্তদশ শতকে শোভাযাত্রা শুরু হলেও তা বিকশিত হয়েছিল উনিশ শতকের শেষার্ধে। যে ধারা বলবৎ ছিল বিশ শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত।

প্রথমদিকে শোভাযাত্রায় নন্দঘোষ, রাণী যশোদা, শ্রীকৃষ্ণ ও বলরামের প্রতিকৃতি আনা হতো। ক্রমেই এর সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে আরো নানা ধরনের অনুষঙ্গ। তবে মূল কাঠামোটি ছিল-প্রথমে নেচে-গেয়ে যাবে কিছু লোক, এরপর দেব-দেবীর মূর্তি, লাঠিসোঁটা, বর্শা, নিশান প্রভৃতি নিয়ে বিচিত্র পোশাক পরিহিত মানুষ, নানা রকমের দৃশ্য। 

মিছিলের প্রধান আকর্ষণগুলো ছিল-সুসজ্জিত হাতি, ঘোড়া, রঙিন কাগজে মোড়ানো বাঁশের টাট্টি, প্রকাণ্ড মন্দির, মঠ, প্রাসাদ ও প্রাচীন কীর্তির প্রদর্শন। সেসব আয়োজন এখন শুধুই স্মৃতি। 

৩৭ বছর পূর্বে ১৩৯০ বঙ্গাব্দে চট্টগ্রামে কৃষ্ণপ্রেমী কয়েকজন ভক্তের প্রচেষ্টায় গঠিত হয় শ্রীশ্রী জন্মাষ্টমী উদ্যাপন পরিষদ নামে একটি ধর্মীয় সংগঠন। শুরুতে সংগঠনটির উদ্যোগে নগর কেন্দ্রিক জন্মাষ্টমীর র‌্যালি ও উৎসব আয়োজন করা হলেও ধীরে ধীরে সেটি শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে। 

বর্তমানে এই সংগঠন সারাদেশে বিস্তৃতি লাভ করেছে। নাম ধারণ করেছে-শ্রীশ্রী জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ, বাংলাদেশ। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রত্যেক জেলায় গঠিত হয়েছে শাখা কমিটি। হাজারো প্রতিকূলতার মধ্যেও সারাদেশে সংগঠনটি প্রতিবছর জন্মাষ্টমী উৎসব ও শোভাযাত্রা জাঁকজমকপূর্ণভাবে আয়োজন করে থাকে।

এরশাদ সরকারের আমলে পরিষদ নেতাদের দাবির প্রেক্ষিতে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে একদিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রচেষ্টায় অর্পিত সম্পত্তি সংশোধনী আইন পাস ও হেবা আইনের মতো হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য আইন পাস জন্মাষ্টমী উদ্যাপন পরিষদের অন্যতম অর্জন।

এবারের জন্মাষ্টমী

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে এবার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উৎসব জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রা বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে শ্রীশ্রী জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ-বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কমিটি। এদিন শুধু মন্দিরে পরম প্রেমময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পূজা অনুষ্ঠিত হবে। জন্মাষ্টমী উৎসবের খরচের অর্থ দিয়ে হতদরিদ্র, নিম্ন-মধ্যবিত্ত অসহায় পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হবে। 

জন্মাষ্টমী পরিষদের উদ্যোগে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানসূচির মধ্যে রয়েছে- আজ সকাল ১০টায় বিভিন্ন অনাথ আশ্রমে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ, সন্ধ্যা ৭টায় গীতাপাঠ ও সন্ধ্যারতি, ৮টায় দেশ, জাতি ও বিশ্বমানবের মঙ্গল কামনায় সমবেত প্রার্থনা, রাত ১২টায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী পূজা। 

১২ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টায় গীতাপাঠ ও সন্ধ্যারতি, ৮টায় পঞ্চতত্ত্ব ভজন ও নামসংকীর্ত্তন। ১৩ আগস্ট দুপুর ১২টায় শ্রীশ্রী কৃষ্ণের ভোগ ও পূজা, সন্ধ্যা ৭টায় গীতাপাঠ, সন্ধ্যারতি ও নামসংকীর্ত্তন।   



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭