ইনসাইড আর্টিকেল

নিজের জন্য নয় বঙ্গবন্ধু আগে রক্ষীবাহিনীর সাহায্য চেয়েছিলেন শেখ মনির জন্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 12/08/2020


Thumbnail

১৫ আগস্ট এলেই আমরা আপ্লুত হই, নারকীয় সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে। দণ্ডিত খুনীদের কয়েকজনের ফাঁসিও কার্যকর হয়েছে, চেষ্টা চলছে পলাতক খুনীদের দেশে ফিরিয়ে আনার। কিন্তু জাতির কলংকতিলক হয়ে আছে যে ভয়াবহ ঘটনা তা নিয়ে জানার শেষ হয়নি এখনো। এখনো অনেক প্রশ্নের জবাব মেলে না। কেন সেদিন জাতির পিতা, দেশের রাষ্ট্রপতিকে হত্যার পরও কোনো বড় প্রতিবাদ হলো না? বিপথগামী উচ্ছৃংখল এবং বরখাস্ত কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা কিভাবে তখন পার পেয়ে গেলো? সেসব প্রশ্নের জবাব খুঁজতে হবে আরো অনেকদিন। আর এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজতে যেতে হবে তাদের কাছে, যারা প্রত্যক্ষভাবে সেদিন দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন,যারা কিছু করার চেষ্টা করেছেন, বা করতে গিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন, আবার অনেকে কিছু না করেও সেই হত্যাকাণ্ডের কারনে লাভবান হয়েছেন যারা, তাদের কাছে। যদিও নানা প্রশ্নের জবাব মেলেনি এখনো। সেসব প্রশ্নের জবাব খুঁজতে এখনো পঁচাত্তরের ঘটনা নিয়ে যেসব বই লিখেছেন তখনকার নানান কুশীলব বা ঐ ঘটনায় আক্রান্ত নানা জনেরা, সেসব থেকে জানা যায় অনেক কিছু। এবার বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মশতবর্ষে তাই নানা বই থেকে কিছু তুলে ধরতেই এই প্রয়াস।

স্বাধীনতার পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নিজের আগ্রহেই গঠিত হয়েছিল জাতীয় রক্ষীবাহিনী। দেশের আইন শৃংখলা রক্ষায় বেসামরিক প্রশাসনকে সাহায্য করার জন্যই এই বাহিনী গঠিত হলেও, এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কম হয়নি। ১৫ আগস্ট দেশের রাষ্ট্রপতি খুন হ্ওয়ার দিন কি করেছিল রক্ষীবাহিনী?

কিছু তথ্য মিলবে “রক্ষীবাহিনীর সত্য-মিথ্যা’’ বইটিতে। লিখেছেন তখনকার রক্ষীবাহীনির উপপরিচালক (প্রশিক্ষণ) আনোয়ার উল আলম শহীদ।

বইটির কলঙ্কজনক অধ্যায়ে আনোয়ারুল আলম লিখেছেন:

 “ সকাল সাড়ে পাচটা বা পৌনে ছয়টা হবে। আমি ঘুমিয়ে ছিলাম।এমন সময় হটাৎ টেলিফোনের শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায় । আমি দ্রুত টেলিফোন ধরি। টেলিফোনে বঙ্গবন্ধুর কন্ঠ শুনে আমি তো হতভম্ব। বঙ্গবন্ধু বললেন “শহীদ মনির (শেখ মনি) বাসায় কালো পোষাক পরা কারা যেন অ্যাটাক করেছে। দেখ তো কি করা যায় ? “ আমি সঙ্গে সঙ্গে বলি, “স্যার আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি’’। ‘বঙ্গবন্ধু লাইন কেটে দেওয়া মাত্র আমি আমাদের ডিউটি রুমে ফোন করি। ডিউটি রুমে কর্তব্যরত রক্ষী কর্মকর্তার মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আমাদের যারা প্যাট্রোল ডিউটিতে ছিলেন তাদের তাড়াতাড়ি ধানমন্ডি এলাকায় শেখ মনির বাসায় যেতে বলি।

আনোয়ারুল আলম আরো লিখেছেন “এ সময় আমার বাসার টেলিফোন বেজে ওঠে। আমি দ্রুত টেলিফোন ধরি । এবার বঙ্গবন্ধুর বিশেষ সহকারি তোফায়েল আহমেদ আমাকে ফোন করে বলেন “রক্ষিবাহিনীর লোকেরা নাকি মনি ভাইয়ের বাড়িতে অ্যাটাক করেছে, তাড়াতাড়ি দেখো”। আমি তাকে বলি “রক্ষীবাহিনীর সদস্যরা কেন মনিভাইয়ের বাড়িতে অ্যাটাক করবে।” “আমি দেখছি” বা ‘‘ব্যবস্থা নিচ্ছি’’ – এরকম কিছু বলেই ফোনটা রেখে আবার ডিউটি রুমে ফোন করি। ডিউটি রুমে কর্তব্যরত কর্মকর্তার কাছে জানতে চাই প্যট্রোল ডিউটিতে যারা আছেন,তাদের শেখ মনির বাসায় যেতে বলা হয়েছে কি না। উত্তরে তিনি জানান মন্ত্রিপাড়ায়ও গোলাগুলি হচ্ছে। আমি বুঝতে পারি ভয়ংকর কিছু ঘটছে বা ঘটতে যাচ্ছে। তাই আর দেরি না করে উপরিচালক (অপারেশন) সারোয়ার হোসেন মোল্লাকে ফোন করি। তাঁকে অফিসে আসতে বলে আমি বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ি।ঠিক তখনই পর পর দুটি আর্টিলারি শেল আমার বাসার পাশে সেন্ট যোশেফ স্কুলের দেযালে পড়ে। দেয়ালটি ধ্বসে যায়। সেখানে কয়েকজন হতাহত হন। আমার বাসার কাচের জানালায় ফাটল ধরে। ভাগ্যগুণে আমার কোনো ক্ষতি হয়নি। আমার মনে হলো হয়তো মিলিটারি ক্যু হয়েছে।’’

শুধুই কি সামরিক অভ্যূত্থান? কিন্তু সেনাপ্রধান,নৌবাহিনী প্রধান ও বিমান বাহিনী প্রধান কিছুই জানতেন না ? আরেকটি পাতায় যাই, আনোয়ারুল আলমের বইটিতে। ” রক্ষীবাহিনীর পরিচালক নুরুজ্জামান ১২ আগস্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রওনা হবার আগে বড় ধরনের কোনো সমস্যা হলে সেনাবাহিনী প্রধান মেজন জেনারেল কে এম সফিউল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছিলেন। আরও বলেছিলেন,জরুরী প্রয়োজনে সফিউল্লাহকে ফোন করতে।তখন কথাটা আমার মনে পড়ে। আমি পরিচালকের লাল টেলিফোনে সেনাপ্রধান সফিউল্লাহকে ফোন করি এবং ঘটনা জানাই। তিনি আমাকে বলেন যে বঙ্গবন্ধু তাকেও ফোন করে র্ফোস পাঠাতে বলেছেন।কারন সেনা পোষাক পরিহিত কে বা কারা তাঁর বাড়িতে আক্রমন করেছে। আমি তাঁর কাছে আমরা কি করবো জানতে চাই এবং তাঁকে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে র্ফোস পাঠাতে অনুরোধ করি। সফিউল্লাহ আমাকে বললেন , তিনি ৪৬ ব্রিগেড কমান্ডার কর্নেল শাফায়াত জামিলকে পাচ্ছেন না। তারপর তিনি ফোন রেখে দেন। “ 

কর্নেল সাফায়েত জামিল সেই ফোন পেয়ে কি করেছিলেন সেটা জানতে হলে শাফায়েত জামিলের লেখা একটি ছোট বইও পড়তে হবে।

পঁচাত্তরের আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত যেসব ঘটনা ঘটেছিল তা নিয়ে যত বই লেখা হয়েছে,সেসব নিয়েও নতুন বই লেখা সম্ভব। তারপরও অপেক্ষা করতে আরো অনেকের লেখা নতুন নতুন বই বা নতুন কোনো অডিও-ভিডিও সাক্ষাতকারের জন্য। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হয়েছে বিএনপির নেতা সাবেক মন্ত্রী মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিনের লেখা নতুন একটি বই । ১৫ আগস্ট তিনি নিজেও ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িটিতে গিয়েছিলেন। আগামী কিস্তিতে জানাবো সেই বইটি সম্পর্কে।

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭