ইনসাইড বাংলাদেশ

ভ্যাকসিন দৌড়েও এলোমেলো বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 13/08/2020


Thumbnail

করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা দিকনির্দেশনাহীন, অগোছালো, এলোমেলো এবং অযোগ্যতার পরিচয় দিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর একক উদ্যোগ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দিকনির্দেশনায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কিছুটা সঠিক পথে এসেছে এবং বিশেষ করে দুর্নীতি, অনিয়ম এবং সমন্বয়হীনতা বন্ধের জন্যে প্রধানমন্ত্রী নিজে ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও নেওয়া হয়েছে নানারকম উদ্যোগ। এরকম বাস্তবতায় বাংলাদেশ করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রে এখন একটি সহনীয় অবস্থায় এসেছে।

যদিও বাংলাদেশের পরিস্থিতি অনেক ভালো হতে পারতো যদি শুরু থেকেই স্বাস্থ্যখাতে সমন্বয়হীনতা না থাকতো, দুর্নীতি না থাকতো, অযোগ্যতা না থাকতো। এখন বাংলাদেশের করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রে এবং স্বাস্থ্যখাতের সুরক্ষার জন্য একটি প্রধান উপায় হলো কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিনের দিকে নজর দেওয়া। বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলো যখন করোনার ভ্যাকসিনের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছে, আগাম অর্থ বিভিন্ন ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে দিচ্ছে এবং গবেষণায় সহযোগিতা করছে, তখন  বাংলাদেশ সবকিছু থেকে নিজেদের দূরে রাখছে। বরং বাংলাদেশে কথামালার যুদ্ধ চলছে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলছেন যে, করোনার ভ্যাকসিন বাংলাদেশে আসবে এবং সচিবও বলছেন যে, ভ্যাকসিন বিশ্বে এলে বাংলাদেশ এক মুহুর্তও দেরি করবে না। কিন্তু বাস্তবে এটা কিভাবে সম্ভব তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কারে যে ১৪টি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে রয়েছে তাঁর একটির সঙ্গেও বাংলাদেশ যোগাযোগ করেনি। গতকাল অর্থমন্ত্রী ক্রয় কমিটি সংক্রান্ত ভার্চুয়াল সভায় স্পষ্ট বলেছেন যে, ভ্যাকসিনের জন্যে আমাদের আলাদা অর্থ বরাদ্দ আছে এবং এখনই ভ্যাকসিন উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে আমাদের আগাম অর্থের ব্যবস্থা করতে হবে।

সম্প্রতি রাশিয়া একটি ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছে। এই ভ্যাকসিন নিয়ে বিতর্ক থাকার পরেও দেখা যাচ্ছে যে, বিশ্বের বহু দেশ এই ভ্যাকসিন সংগ্রহের জন্যে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এমনকি পাশের দেশ ভারতও আগাম অর্ডার দিয়েছে এই ভ্যাকসিনের। চীনা ভ্যাকসিনের জন্যে বিভিন্ন দেশ ইতিমধ্যে আগাম অর্থ পরিশোধ করেছে। মর্ডানার ভ্যাকসিনের জন্যে এখন পর্যন্ত ৫২ টি দেশ আগাম বুকিং দিয়েছে, যেন ভ্যাকসিন বাজারে এলেই তাঁরা তাঁদের দেশের জনগণের জন্যে পায়। বিভিন্ন সূত্রে বলা হচ্ছে যে, একটি দেশ যখন ভ্যাকসিন উৎপাদন করবে তখন তাঁরা প্রথমে তাঁর দেশের চাহিদা মেটাবে এবং এরপর যারা প্রথম বুকিং দিবে তাঁদেরকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে এবং আস্তে আস্তে এটা অন্যান্য দেশে যাবে। কাজে এখনই যদি বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাজারে দৌড়ঝাঁপ না করে এবং আগাম অর্থ বরাদ্দ না করে বুকিং না করে তাহলে ভ্যাকসিন বাজারে এলে কবে নাগাদ তা বাংলাদেশ হাতে পাবে সেটা এক বিরল প্রশ্ন।

ইতিমধ্যে আবার চীনা ভ্যাকসিনের ট্রায়াল নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছে এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রয়ালয়ই এর গতি শ্লথ করে দিয়েছে। কি কারণে দিয়েছে তা এখন পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। অথচ যদি চীনা ভ্যাকসিনের ট্রায়াল বাংলাদেশে হতো তাহলে চীনা ভ্যাকসিন এলে বাংলাদেশ প্রথম দেশগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে ভ্যাকসিন পেত। এখন যদি শেষ পর্যন্ত চীনা ভ্যাকসিনের ট্রায়াল বাংলাদেশে না দেওয়া হয় তাহলে চীনের ভ্যাকসিন বাংলাদেশে আসবে এমন নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, গ্যাভির সঙ্গে যে চুক্তি সেই চুক্তি অনুযায়ী করোনার ভ্যাকসিন এলে বিনামূল্যে তা বাংলাদেশের জনগণ পাবে। কিন্তু গ্যাভির যে নিয়মনীতি, তা পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, বিশ্বে ভ্যাকসিন এলে প্রথমে যে দেশ আবিষ্কার করেছে তাঁরা পাবে, দ্বিতীয়ত যারা এর জন্যে অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে বা গবেষণায় সহযোগিতা করেছে তাঁরা পাবে এবং এরপর গরীব মানুষদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। কারণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বিশ্বের সব মানুষের জন্য একসঙ্গে ভ্যাকসিন উৎপাদন সম্ভব নয়, এটা ধাপে ধাপে উৎপাদন করতে হবে। আর এই কারণেই মনে হচ্ছে যে, ভ্যাকসিন দৌড়ে বাংলাদেশ এলোমেলো, বিভ্রান্ত। করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রে যেমন শুরু থেকে বাংলাদেশ প্রস্তুতি নিতে পারেনি, বিদেশ ফেরতদেরকে কোয়ারেন্টিন করতে পারেনি, চিকিৎসকদের সুরক্ষা দিতে পারেনি, একইভাবে ভ্যাকসিনেও বাংলাদেশ এলোমেলো কিনা সেই প্রশ্ন জোরেশোরে উঠেছে। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭