নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 14/08/2020
বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের পর থেকে চিকিৎসকদের নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। সেই বিতর্ক যেন কিছুতেই থামছে না। করোনা সংক্রমণের পর থেকেই সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা নানা অজুহাতে চিকিৎসা প্রদানে অনীহা প্রকাশ করেন, তাঁরা তাঁদের স্বাস্থ্যসুরক্ষা সামগ্রী দাবি করেন। এরপর স্বাস্থ্যসুরক্ষা সামগ্রী যখন দেওয়া হয়, তখন তাঁরা প্রণোদনা এবং নানা রকমের আর্থিক সহায়তার জন্যে দেনদরবার করতে থাকেন। বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোতে যখন হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকদের আলাদা কোন প্রণোদনা দেওয়া হয়নি, সেখানে বাংলাদেশে করোনা চিকিৎসায় মাত্র ৭ দিন দায়িত্ব পালনে ১ মাসের সমপরিমাণ বেতন এবং কোয়ারেন্টিনে থাকার সময় আর্থিক অনুদানসহ নানারকম ভাতা এবং প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দেয় সরকার। অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই করোনা চিকিৎসা করছেন তাঁরা পেয়েছেন শুধু হাততালি, অস্ট্রেলিয়াতে যারা করোনা চিকিৎসা করেছেন তাঁদেরকে একটি করে আপেল উপহার দেওয়া হয়েছে। আর বাংলাদেশে করোনা চিকিৎসার জন্যে বিপুল পরিমাণ আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে যেন তাঁরা করোনা চিকিৎসা করেন।
কিন্তু এর মধ্যেও পাওয়া যাচ্ছে অনিয়ম। বিশেষ করে সরকারি হাসপাতালের অধ্যাপক পর্যায়ের সিনিয়র চিকিৎসকরা করোনার দায়িত্ব পালন না করেও প্রণোদনা ভাতা চাইছেন। সম্প্রতি ঢাকা মেডিকেল কলেজে যারা করোনা চিকিৎসায় দায়িত্ব পালন করেছেন সেই চিকিৎসকদের একটি তালিকা তৈরি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। যে তালিকা অনুযায়ী চিকিৎসকদের প্রণোদনা ভাতা দেওয়া হবে। সরকার নিয়ম করেছে যে, একজন চিকিৎসক টানা ৭ দিন চিকিৎসা করবেন এবং পরবর্তীতে টানা ১৪ দিন তিনি কোয়ারেন্টিনে থাকবেন। এই সাত দিন দায়িত্ব পালনের জন্যে তিনি বেতনের অতিরিক্ত ১ মাসের ভাতা পাবেন। আর কোয়ারেন্টিনে থাকাবস্থায় আগে হোটেলে থাকার কথা থাকলেও এখন হোটেল সুবিধা বাতিল করে দৈনিক ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, ঢাকা মেডিকেল কলেজের করোনা ইউনিটে চিকিৎসা দিয়েছেন একেবারে তরুণ চিকিৎসকরা। সহকারী অধ্যাপক পর্যন্ত চিকিৎসকরাই শুধু করোনা ওয়ার্ডে গিয়ে চিকিৎসা সেবা দান করেছেন। সিনিয়র চিকিৎসকরা কখনোই করোনা ওয়ার্ডে যাননি এবং করোনার চিকিৎসাও দেননি। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যে তালিকা পাঠানো হয়েছে সেই তালিকায় দেখা গেছে যে, অধ্যাপকদের নাম রয়েছে সবার আগে। এই তালিকার প্রথম দিকে যে ক’জন অধ্যাপকের নাম রয়েছে তাঁরা কখনো করোনা ওয়ার্ডে যাননি, চিকিৎসাও দেননি। এই ব্যাপারে ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন যে, তাঁরা বাড়ি থেকেই টেলিমেডিসেন সেবা দিয়েছেন টেলিফোনের মাধ্যমে। কিন্তু সরকারি যে নির্দেশনা, সেই নির্দেশনায় টেলিমেডিসিন সেবা কখনোই সরাসরি চিকিৎসা সেবা দান করা হিসেবে পরিগণিত হয় না।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন যে, সরকার যে প্রণোদনা ঘোষণা দিয়েছে সেই প্রণোদনা কেবল সম্মুখ সমরের যোদ্ধাদের জন্যে। যে সমস্ত চিকিৎসক সরাসরি করোনার চিকিৎসা দিবেন তাঁদের জন্যে। যারা দূর থেকে চিকিৎসা দেবেন তাঁদের জন্যে এটা প্রযোজ্য নয়। কিন্তু ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ একাধিক সরকারি হাসপাতালের প্রণোদনা পাওয়ার জন্যে যে তালিকা তৈরি করা হয়েছে যেখানে এমন সব অধ্যাপকের নাম আছে যার করোনা সংক্রমণের পর থেকে একদিনও করোনা চিকিৎসা তো দেয়নি, অনেকে হাসপাতালেও যাননি। তারপরেও তাঁদেরকে কেন এই ধরণের প্রণোদনা দেওয়া হবে সেই বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন যে, বিষয়টি তাঁদের নজরে এসেছে। প্রণোদনার জন্য যে তালিকা তৈরি করা হয়েছে সেই তালিকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যাচাইবাছাই করবে। নিরীক্ষা করবে এবং তারপর তাঁরা প্রণোদনা পাওয়ার যোগ্য কিনা সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবে। যে সমস্ত অধ্যাপকদের নাম এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তাঁরা সকলেই প্রথিতযশা। বিপুল অর্থ সম্পদের মালিকও বটে। কিন্তু তারপরেও তাঁরা প্রণোদনার অর্থ নেওয়ার জন্যে কেন এভাবে তালিকায় নিজেদের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে উদগ্রীব হলেন তা নিয়ে বিষ্মিত সকল মহল।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭