ইনসাইড আর্টিকেল

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরপরই সুবিধাভোগীরা যেভাবে সুবিধা পায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 15/08/2020


Thumbnail

শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা এবং আওয়ামী লীগ মন্ত্রিসভার অন্যতম সদস্য খন্দকার মোশতাক বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। সরকার গঠন করে তিনি ‘জয় বাংলা’ ধ্বনির স্থলে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ ধ্বনি প্রচলন করেন। বাংলাদেশবিরোধী ও পাকিস্তানপন্থী কিছু ব্যক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ উচ্চপদে বহাল করেন। এ সময় স্বাধীনতাবিরোধী চক্র রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অঙ্গনে বেশ তত্পর হয়ে উঠল।

ক্ষমতায় এসেই এই সরকার তাড়াহুড়ো করে সামরিক বাহিনীতে পরিবর্তন আনে। জেনারেল ওসমানীকে একজন ক্যাবিনেট মন্ত্রীর পদমর্যাদায় রাষ্ট্রপতির সামরিক উপদেষ্টা করা হলো। উপসেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান করা হলো। আর পূর্বতন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল সফিউল্লাহকে অব্যাহতি দিয়ে তাঁর চাকরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হলো রাষ্ট্রদূত পদে নিয়োগের জন্য। তত্কালীন ব্রিগেডিয়ার এইচ এম এরশাদকে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি দিয়ে উপসেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ করা হলো। এই নিয়ে ভারতে প্রশিক্ষণে থাকাকালে মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে তিনি কর্নেল থেকে দুটি পদোন্নতি পেয়ে মেজর জেনারেল হন, যা সেনাবাহিনীর ইতিহাসে বিরল ঘটনা। বিমানবাহিনীর গ্রুপ ক্যাপ্টেন তোয়াব স্বাধীনতাযুদ্ধের পুরো সময় জার্মানিতে ছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে অনীহা প্রকাশ করেন। তাঁকে সেখান থেকে নিয়ে এসে বিমানবাহিনীর প্রধান করা হলো। বিমানবাহিনীর তত্কালীন প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকারের চাকরি রাষ্ট্রদূত পদে নিয়োগের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হলো। বিডিআরের প্রধান মেজর জেনারেল খলিলুর রহমানকে চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ পদে নিযুক্ত করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে বহাল করা হলো। সামরিক বাহিনীর এসব পরিবর্তনে জেনারেল ওসমানী ও শেখ মুজিব হত্যাকারী মেজর রশিদ, মেজর ফারুক, মেজর শরীফুল হক (ডালিম) এবং তাদের সহযোগীরা সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিল। কারণ, তখন এই অফিসারগণ বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাকের আশপাশে থাকত।

মেজর রশিদ, ফারুক এবং তাদেরই সহযোগীদের হাবভাব ও চালচলন দেখে মনে হতো, দেশ এবং সেনাবাহিনী তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। মেজর ফারুক বঙ্গভবনের একটি কালো মার্সিডিজ গাড়িতে চড়ে ঘুরে বেড়াত। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে জোরপূর্বক অর্থ আদায় এবং অন্যান্য অনিয়মের অভিযোগ ছিল। খন্দকার মোশতাক এদেরকে তার নিজের নিরাপত্তার জন্য বঙ্গভবনেই থাকতে উত্সাহিত করতেন। এর মধ্যে তিনি সেনাবাহিনীর কোনো সুপারিশ ছাড়াই মেজর ফারুক ও রশিদকে লে. কর্নেল পদে পদোন্নতি দেন। ডালিমকেও সেনাবাহিনীতে ফিরিয়ে নিয়ে লে. কর্নেল করা হয়। সেপ্টেম্বর মাসে মোশতাক এক অধ্যাদেশ বলে ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের কোনোরূপ বিচার বা শাস্তি দেওয়া যাবে না—এই মর্মে ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ জারি করেন।

 

(লেখাটি মেজর জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরী (অব.)-এর এক জেনারেলের নীরব সাক্ষ্য-স্বাধীনতার প্রথম দশক বই থেকে সংগৃহীত।)



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭