নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 05/08/2017
ঘরের চালের বেড়ায় ফুটো, ফুটো টিনের চালেও। এই দিয়ে গড়িয়ে পড়া টিপটিপ পানি এখনো চিহ্ন বহন করে বন্যার বিভীষিকার। বন্যায় অবর্ণনীয় কষ্টের শিকার হন সাবের উদ্দিনের ৬ সদস্যের পরিবার। সিলিটের মৌলভীবাজারে বসবাস সাবের। একটা টিনের ঘর ছাড়া জমি জমা বলতে তেমন কিছু নেই তার। বন্যার পানিতে সেই শেষ সম্বলটুকুও হাড়িয়ে সাবের সপরিবারে আশ্রয় নেয় উঁচু সড়কে। এরপর একটু একটু করে পানি কমে যায়, বেড়ে যায় বিভিন্ন জটিল রোগ বালাইয়ের প্রকোপ। তারপরও যুদ্ধ করে যাচ্ছিলেন তাঁরা। পানি কমে আসায় ধীরে ধীরে যখন বাড়ি ফিরে সব ঠিক করতে শুরু করলেন তখনই জানতে পারলেন সামনেই আরেক বন্যার পদধ্বনি। এক বন্যার ধকল কাটাতে না কাটাতেই আরেকটি বন্যা। সাবের কোনো কুলকিনারা পান না কী করবেন। কীভাবে রক্ষা করবেন পরিবার।
এ রকম হাজারো সাবের এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিলেট বিভাগের হাওরাঞ্চলের জনগণ। এই এক বন্যার ধকল সামলে না উঠতেই আরেক বন্যার আশঙ্কা সাধারণ মানুষসহ দিশেহারা করে দিয়েছে সরকারকেও।
সম্প্রতি বন্যায় মানুষের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যাপকভাবে। ওই ঘরবাড়ি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত সেখানে বসবাসের উপায় নেই। ঘরবাড়ির সঙ্গে সঙ্গে বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থাও। ভেঙে গেছে সেতু, কালভার্ট। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। বন্যাকবলিত এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ায় পৌঁছাতে পারছেন না মেডিকেল টিম। ঠিক মত পৌছতে পারছে না ত্রাণ। অনেক এলাকার মানুষ এখনও ত্রানের দেখা পায় নি, আবার অনেকে পেয়ে থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এ নিয়ে সরকার কী কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন তা নিয়ে কোনো তথ্যই দিচ্ছে না দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। অনিশ্চয়তায় দিন পার করছে হাজার হাজার বানভাসী মানুষ।
বন্যার পর নদী ভাঙ্গনের ফলে আরও দূর্বিষহ হয়ে পড়েছে বানভাসী এসব মানুষের জীবন। বন্যার মতো সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য নদীতে বাঁধ নির্মাণের ওপর জোর দেওয়া হলেও এই পর্যন্ত এই কৌশল খুব কার্যকর হয়নি। ফলে বাঁধের দু’পাশে বৃষ্টির পানি জমে তীরবর্তী মানুষের কষ্ট ও ক্ষতি আরও বাড়িয়েছে। নদীর পানি উচ্চতা বৃদ্ধি হওয়ায় বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা।
এদিকে, বাংলাদেশের উজানে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে বৃষ্টিজনিত বন্যার পানি নেমে ভাটির জনপদ ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে দেখা দিয়েছে ভাঙন। ফলে থামছে না গৃহহারা ও বানভাসী মানুষের কান্না। তাদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠছে ভাটির জনপদ।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল নতুন করে প্লাবিত হতে পারে। একই সঙ্গে রাজধানীর চারপাশের নদীর পানিও বাড়তে পারে। এতে রাজধানীর নিম্নাঞ্চলও প্লাবিত হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা, দক্ষিণ এশিয়ার পাহাড় বিষয়ক সংস্থা ইসিমুড এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড সম্মিলিতভাবে এই পূর্বাভাস দিয়েছে।
সাধারণত ভাটির এ দেশে বন্যা হয় আগস্ট-সেপ্টেম্বরের মধ্যে। তবে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে এবার আগাম বন্যা হয়েছে। আগাম এই বন্যায় ত্রাণসহ নানা বিষয়ে অসামঞ্জস্যতা থাকার পাশাপাশি এর পরবর্তী পুনর্বাসন ব্যবস্থা নিয়েও অনেকে অসামাঞ্জস্যতা সৃষ্টি হয়। এসবের মাঝে আসন্ন এই বন্যা মোকাবেলায় সরকারের প্রস্তুতি নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
এদিকে, আগস্ট মাসে আমন ধানের বোরো রোপনের সময়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, চলতি বোরো মৌসুমে সারা দেশে ৪৮ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ কোটি ৯১ লাখ ৫৩ হাজার টন। কিন্তু এর মধ্যে ছয় জেলার হাওরের দুই লাখ হেক্টরের বেশি জমির বোরো ধান ইতিমধ্যে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার জমি থেকে এবার এক ছটাক ধানও পাওয়া যাবে না। ফলে বেরে যাবে দ্রব্যমূল্য, খাদ্য সংকটে পড়বে দেশ। চালের দাম এখনো কমেনি। আমদানিকৃত খাদ্যের মজুদও প্রায় শেষ, এমন অবস্থায় এই দ্বিতীয় বন্যা মোকাবেলায় সরকার অপ্রস্তুতই বলা যায়। সুতরাং আগামী বন্যায় বড় ধরের বিপর্যয় ঘটবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে, প্রতিনিয়তই অপ্রতুল ত্রাণ, পুনর্বাসনে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠছেই। পূর্ব প্রস্তুতি না থাকলে এমন হওয়াই স্বাভাবিক, বন্যায় অন্যান্য বছরগুলোতেও একই অভিজ্ঞতা হয়েছে বন্যাকবলিত মানুষদের। ব্যবস্থা ও পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হলেও তার বাস্তবায়ন যে প্রয়োজনের তুলনায় সীমিত তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
বাংলা ইনসাইডার/আরএ/জেডএ
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭