ইনসাইড থট

প্রয়োজন ‘বঙ্গবন্ধু গ্রাম ও নগর উন্নয়ন গবেষণা কেন্দ্র’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 11/09/2020


Thumbnail

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের মহান স্থপতি। তিনি তাঁর চিন্তা-চেতনা আর স্বপ্নের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি গ্রাম আর শহরকে নতুন করে সাজাতে চেয়েছিলেন। তিনি নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের একজন স্বপ্নদ্রষ্টা। প্রকৃতিকে সাথে নিয়ে সবুজ বাংলাদেশ গঠনকল্পে তার অনেক পরিকল্পনা তার বিভিন্ন বক্তব্যের মধ্যে নিহিত রয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের সর্বত্রই তখন ছিল ধ্বংসলীলা। বাঙ্গালীদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, কৃষির উৎপাদন এমনকি পূনর্বাসনের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে তিনি অত্যন্ত সাফল্যের সাথে মোকাবেলা করেছিলেন এবং দেশের সার্বিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে দুর্ভিক্ষকে প্রতিহত করেছিলেন শক্ত হাতে। প্রাথমিক সংকট গুলোকে কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হন এভাবেই।

কলকারখানার উৎপাদন কিভাবে বাড়ানো সম্ভব, পূনর্বাসনের ব্যবস্থাপনা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কেমন রূপ ধারণ করবে এসব বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ চিন্তা এবং বিশ্লেষণ তার কর্মধারার মধ্যে বিশদভাবে ছিল। তিনি প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। যার লক্ষ গুলো ছিল মূলত দারিদ্র্য দূরীকরণ, কর্মসংস্থান, আর্থিক উন্নয়ন, পণ্যের চাহিদা, কৃষির প্রাতিষ্ঠানিক এবং প্রযুক্তিগত কাঠামোতে সমসাময়িক রূপান্তর ইত্যাদি। এমনকি তার ভাবনার মধ্যে ছিল দেশের খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা এবং কৃষিতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি। সেই সাথে আরেকটি বিষয় ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যা হলো শ্রমশক্তির শহরমুখী অভিবাসন বন্ধ করা, যা বর্তমানে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ টেকসই উন্নয়নের জন্য দেশের শহর গুলোকে নিয়ে ভাবছি। 1971 আর এই যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে নতুন স্বপ্ন দেখাতে, নতুনভাবে পুনর্গঠনে, নতুন নির্মাণের উদ্যোগ নিলেন জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়নের, বিভিন্ন সম্ভাবনা কিভাবে খুজে বের করা যায় এবং কিভাবে তার টেকসই বাস্তবায়ন করা সম্ভব সেসব বিষয়ে তিনি শুধুমাত্র দেশের নয়, দেশের বাইরেও বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে কর্মপরিকল্পনা এবং মতামত গ্রহণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু ভালোবেসেছিলেন বাংলার মাটি, মানুষ, পরিবেশ, প্রকৃতিকে নিবিড়ভাবে এবং নিজস্ব উপলব্ধি থেকেই বুঝতে পেরেছিলেন এগুলোর সমন্বয়ের মাধ্যমে দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব। দেশের সম্পদ কে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারলেই তারমধ্যে সমুহ সম্ভাবনা বিদ্যমান। প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগাতে হবে, আর তাইতো সঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য, দেশের উন্নয়নের জন্য তিনি গ্রহণ করেছিলেন সমবায় ভিত্তিক কর্মযজ্ঞ মানব কল্যাণ ও আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে। আমরা যে গ্রামোন্নয়নের কথা বলছি যা তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন আজ থেকে অনেক বছর আগে। গ্রাম উন্নয়নের জন্য, গ্রামের স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নের জন্য, বৈষম্য নিরসনের জন্য, এমনকি দেশের পরতে পরতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে রক্ষা এবং ধারণ করার জন্য, সমৃদ্ধির জন্য হাতে নিয়েছিলেন অনেক পরিকল্পনা। বর্তমানে আমরা আমাদের শহর ও গ্রামের টেকসই উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। স্থাপত্য ও পরিকল্পনা চর্চাও করছি। কিন্তু যে বিষয়টিকে এখানে গুরুত্বারোপ করছি সেটি হলো আমাদের এই টেকসই উন্নয়নের ধরন কেমন হবে কিংবা গ্রাম-নগরায়ন কেমন হবে সেসব বিষয় গুলো যদি বঙ্গবন্ধুর দর্শন থেকে আরও নিবিড় ভাবে নেয়া যেত গবেষণার মাধ্যমে তাহলে হয়তো টেকসই উন্নয়নের আরো একটি ধাপ স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা এগিয়ে নিতে পারতাম। তার প্রদত্ত গ্রাম ও নগর উন্নয়নের বিভিন্ন চিন্তাভাবনাগুলোকে সুষ্ঠুভাবে সন্নিবেশ করা অত্যন্ত প্রয়োজন। দেশের প্রয়োজনে। কি তার নগরায়ন - গ্রামোন্নয়নের ভাবনা? কি স্থাপত্য এবং পরিবেশ ভাবনা? এ সম্পর্কে আরও বিশদ গবেষণার প্রয়োজন অবশ্যই। এ জন্য প্রয়োজন একটি স্বতন্ত্র জাতীয় ‘বঙ্গবন্ধু গ্রাম ও নগর উন্নয়ন গবেষণা কেন্দ্র’ কিংবা প্রতিষ্ঠান যেখানে শুধুমাত্র বাস্তবায়িত হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ। যাকে তিনি বলতেন ‘সোনার বাংলা’। যেখানে জড়িয়েছিল বাংলাদেশের ইতিহাস, সমাজব্যবস্থা, সংস্কৃতি। তার চিন্তা ধারার গ্রাম-শহরের ভাবনা-পরিকল্পিত হবে নতুন এক বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের রুপরেখা। আশা করছি এই বিষয়টিকে গুরুত্ব আরোপ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গৃহীত হবে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য অচিরেই। কারণ আমরা সব সময়ই তাদের রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে আলোকপাত করি । কিন্তু এর সাথে যদি তার নগরায়ন, শিল্পায়ন, গ্রামোন্নয়ন, স্থাপত্য, পরিবেশ ভাবনা নিয়ে তাদের চিন্তার বহিঃপ্রকাশ কে আরো নিবিড় ভাবে বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ দেয়া সম্ভব হয়, যা এখন পর্যন্ত ঠিক সেভাবে প্রাধান্য পায়নি আমাদের স্থাপত্য এবং পরিকল্পনা গবেষণাগুলোতে। আর এভাবেই যদি আমরা গবেষণার মাধ্যমে সমন্বিত গ্রাম এবং শহরের বৈশিষ্ট্যগুলোকে ধারণ করতে পারি এবং সেভাবে স্থাপত্য চর্চা এবং পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশকে আরো টেকসই উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি তাহলে সেটি আমাদের ভবিষ্যতের জন্য আরও বেশি ফলপ্রসূ হবে। এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

সজল চৌধুরী, শিক্ষক ও স্থপতি। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষণারত।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭