টেক ইনসাইড

আমাজন ও জেফ বেজোস: রূপকথার এক গল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 08/08/2017


Thumbnail

আমাজন ও জেফ বেজোস। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ও এর প্রতিষ্ঠাতা এখন স্বর্ণযুগ পার করছে। গত সপ্তাহে আমাজন এবং জেফ বেজোস কয়েকটি মাইলফলক ছুঁয়েছেন। গত বুধবার স্টক মার্কেটে আমাজনের পুঁজি ৫০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। পরদিন আমাজনের শেয়ার মূল্যের কারণে জেফ বেজোস কয়েক ঘণ্টার জন্য স্থান করে নেন বিশ্বের ধনীদের তালিকার শীর্ষে।

অনলাইনে শুধুই বই বিক্রি দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল আমাজন। এখন অনলাইনভিত্তিক পণ্যের খুচরা বিক্রেতা হিসেবে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান। প্রযুক্তিভিত্তিক বিভিন্ন পণ্য ও সেবায় শীর্ষে অ্যামাজন, যার মধ্যে আছে, ক্লাউড কম্পিউটিং, চলচ্চিত্র প্রদর্শন ও বিপণন, সঙ্গীতের বিপণন। এছাড়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় অবদান রাখছে আমাজন।

জেফ বেজোস, যিনি আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা এবং বর্তমান প্রধান নির্বাহী। এখন পত্রিকা প্রকাশনা থেকে রকেট উৎক্ষেপনের মতো কাজে জড়িত হয়েছে। অর্জিত বিপুল সম্পদ মানবসেবায় ব্যবহার করার সংকল্প রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। আমাজন ও জেফ বোজেস বিস্তৃত ও প্রভাবশালী অবস্থান তৈরি করেছে। তাদের কোনো নির্দিষ্ট শ্রেণিবিভাগে নেওয়া সম্ভব না।

এত ব্যাপক অর্জনও আমাজনের প্রকৃত গুরুত্ব নির্ণয় করতে পারে না। গত বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজারের ২ দশমিক ৫ শতাংশ অবনতির একটি হতাশাজনক রিপোর্ট থাকা সত্ত্বেও আমাজনের অর্থনৈতিক দৃঢ়তা অটুট ছিল। স্টক মার্কেটের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সাফল্য পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি হিসেবে আমাজন এখন স্বীকৃত। প্রকৃতপক্ষে, পরিসংখ্যান এটি নির্দেশ করে যে ১৯৯৭ সাল থেকে আমাজন শতাব্দীর সর্বোচ্চ সম্পদ উৎপাদনের একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।

আমেরিকার আরিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির অধ্যাপক হেনড্রিক বিসেমবিন্ডার বলেন, ‘আমাজন এখন স্টকের ছোট একটি দলভুক্ত। ১৯২৬ সাল থেকে সম্পদ উৎপাদনকারী সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি এখন আমাজন। খুবই অল্প সময়ের মাঝে এটি সেই পর্যায়ে যেতে পেরেছে।

এই বছরের মে মাসে মার্কিন সাংবাদিক জেফ সমার যখন প্রথমবারের মতো প্রফেসর বিসেমবিন্ডারের সঙ্গে কথা বলেন তখন তিনি ২০১৫ সাল পর্যন্ত স্টক মার্কেটের সর্ববৃহৎ ৩০টি সম্পদ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর এক তালিকা দেখান। কিন্তু গত সপ্তাহে তিনি জেফকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত আরেকটি তালিকা দেখান যেখানে ওপরের দিকে ছিল যথাক্রমে এক্সন মবিল, অ্যাপল, জেনারেল ইলেকট্রিক, মাইক্রোসফট এবং আইবিএম। তবে তালকাটির নিচের দিকে প্রথমবারর মতো আবির্ভূত হয় আমাজন। কোকাকোলার মতো আরো কিছু বাঘা বাঘা কোম্পানিকে পিছনে ফেলে ১৪ নম্বরে স্থান করে নেয়।

ওই তালিকা এক কথায় নির্দেশ করে কোন স্টকটি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য সবচে বেশি লাভজনক ছিল। তিনি তাঁর গবেষণায় পেয়েছেন যে খুবই ছোট একটি দল, যা  স্টক মার্কেটের মাত্র ৪ শতাংশ, ১৯২৬ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত নিট মুনাফা নিয়ন্ত্রণ করছে। এছাড়াও এই নম্বই বছরে মাত্র ৩০টি স্টক, আমাজন যার অন্তর্ভুক্ত, নিয়ন্ত্রণ করছে স্টক মার্কেটের শতকরা ৩০ ভাগেরও বেশি। এই ত্রিশটি স্টকের মাঝে আমাজনের উন্নতির রেখাটি ক্রমশ ঊধ্বমুখী। প্রফেসর বিসেমবিন্ডারের মতে যদি আমাজন তার উন্নতির রেখাটি ধরে রাখতে পারে তবে তা এই তালিকাটির উপরের দিকে উঠতে পারবে। শেয়ারবাজারে তার নিজের বিনিয়োগকারীদের জন্য আমাজনের প্রভাব খুবই শক্তিশালী হবার কারণে তার প্রতিযোগীরা লোকসান গুনতে বাধ্য হয়। যদি কেউ অ্যামাজনে ২০০২ সালের জুলাই মাসে এক হাজার ডলার বিনিয়োগ করে থাকে তা এখন ৮৩ হাজার ডলারে উণ্নীত হবার কথা। তুলনামূলকভাবে এটি স্টান্ডার্ড  র্প্রতিষ্ঠানে হবে চার হাজার ১০০ ডলার। ওয়ালমার্ট প্রতিষ্ঠানটির ক্ষেত্রে যা হবে দুই হাজার ২৫০ ডলার। এই হিসাবটি আমাজনের সঙ্গে তুলনা করা না হলে বিনিয়োগ করার জন্য খারাপ নয়।   

স্টক মার্কেট গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিস্পোক ইনভেস্টমেন্ট গ্রুপ অন্য একটি প্রক্রিয়ায় আমাজনের প্রভাবটি যে তার নিকটবর্তী প্রতিযোগিদের তুলনায় কতটা প্রবল তা নির্ণয় করেছে। এটি নির্দেশ করেছে আমাজন সূচকের দ্বারা অন্যদের মৃত্যু! অর্থ্যাৎ, এটি হচ্ছে আমাজনের উত্থান দ্বারা সবচে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থান অনুসন্ধানের একটি প্রক্রিয়া। তাদের হিসাবে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে ৫৪ টি। যা নিঃসন্দেহে আমাজনের অবিশ্বাস্য প্রভাবকে নির্দেশ করে।

জেফ বেজোসের মতো কোনো বিনিয়োগকারীই  স্টক মার্কেটে আমাজনের মতো এতটা সুফল পায়নি। সিকিউরিটি এবং একচেঞ্জ কমিশনের একটি হিসাব অনুযায়ী বেজোস ২০১৭ সালের মে মাসে প্রতিষ্ঠানটির শতকরা ১৬ দশমিক ৭ ভাগ শেয়ারের অধিকারী ছিলেন।  যার সামগ্রিক সম্পদের পরিমাণ হবে প্রায় ৯০ বিলিয়ন ডলার। যেটি তাকে মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের পাশাপাশি বসিয়ে দিয়েছে।

বাংলা ইনসাইডার/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭