ইনসাইড আর্টিকেল

বাংলাদেশে সংকুচিত সোশ্যাল স্পেস

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 19/09/2020


Thumbnail

 ছোট বেলায় আপনারা যারা ক্রিকেট, ফুটবল খেলেছেন হয়তো তারা খেয়াল করবেন, সেই খেলার মাঠ বা পাবলিক প্লেস গুল আর নেই ।  

বাচ্চা, কিশোর তরুণদের রাষ্ট্রের স্বনির্ভর নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে হলে শিক্ষার পাশাপাশি আরো যে দুটি জিনিস খুবই জরুরী তা হলো সামাজিকীকরণ বা ( socialization ), এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে তাদের সু-স্বাস্থ্য । এ দুইটি বেপারেরে সাথেই আবার ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে খেলাধুলার মাঠ, পার্ক, লাইব্রেরি, ক্যাফে এর মতো পাবলিক স্পেস। আজ আমরা কথা বলবো বাংলাদেশের এবং মূলত ঢাকার মতো শহরগুলোতে পাবলিক প্লেসের ঘাটতি ও তার প্রভাবের কথা। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে, ইট টেক্স আ ভিলেজ টু রেইজ আ চাইল্ড। অর্থাৎ ছোটবেলা থেকেই নানা রকম মানুষের সাথে মিশে নানা অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়েই একটি শিশুর সুস্থ বিকাশ বা সামাজিকীকরণ সম্ভব হয়- যার    মাধ্যমে তাদের সামাজিক ও যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ে। সামাজিকীকরণ জীবনব্যাপী ও বহুমুখী প্রক্রিয়া আর এ  কেবল ঘরেই ঘটে না, তা চলতে থাকে তার স্কুল কলেজে, খেলার মাঠে, পার্কে, উপসনালয়ে, পারিবারিক বা সামাজিক আড্ডায়।

কিন্তু বিগত কয়েক দশকে ঢাকায় পার্ক, খেলার মাঠসহ পাবলিক জায়গাগুলো কমে যাচ্ছে যা এ শহরের শিশু কিশোর তরুণদের সার্বিক বেড়ে উঠায় বিশাল হুমকি হয়ে দেখা দিচ্ছে।  ঢাকা মহানগরীর জনসংখ্যা যখন ছিল ১০ লাখ তখন খেলার মাঠের সংখ্যা ছিল অন্তত ৫০টি। এখন দেড় কোটি মানুষের এই মেগাসিটিতে খেলার মাঠের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১১টিতে। অর্থাৎ গড়ে দুই লাখ ৩০ হাজার মানুষের জন্য খেলার মাঠ রয়েছে মাত্র একটি ।

 

  পার্ক, খেলার জায়গার মত পাবলিক স্পেসের গুরুত্বের কথা উঠে এসেছে নানান  নীতি নির্ধারনী মহল থেকেও। বাংলাদেশের  ২০১১ সালে প্রকাশিত জাতীয় শিশু নীতির ৬.৬ অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা আছে,

 

“শিশুর জন্য মানসম্পন্ন বিনোদন, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চার সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। প্রতিটি বিদ্যালয়ের জন্য খেলার মাঠ, খেলার সরঞ্জাম রাখা, এলাকাভিত্তিক শিশু পার্ক স্থাপন এবং নগর পরিকল্পনায় আবশ্যিকভাবে শিশুদের জন্য খেলার মাঠ অন্তর্ভূক্ত করা হবে। দুর্যোগকালীন সময় ও তার পরবর্তীতে আশ্রয়কেন্দ্রে শিশুদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা করা হবে।”

এছাড়াও জাতিসংঘের   ২০৩০ এর এসডিজি বা সাস্টেনেবল ডেভেলাপমেন্টাল গোলস এ বলা হচ্ছে  মানব বসতি ও শহরগুলোকে নিরাপদ ও স্থিতিশীল রাখার জন্য। এ লক্ষ্যমাত্রার অন্যতম মূল পয়েন্ট হচ্ছে, ২০৩০ সাল নাগাদ সকলের জন্য, বিশেষ করে নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও পঙ্গুদের জন্য, নিরাপদ ও সুগম পাবলিক স্পেসের ব্যবস্থা করা। যা বাংলাদেশর  ঢাকার মত শহরের জন্য খুবি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। 

এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার কথা উঠে এসেন ঢাকা স্ট্রাকচার প্লান ২০১৬-২০৩৫-এ। বিশ্বের অন্যতম জনবহুল শহর  ঢাকায় মাত্র ১% এরও কম জায়গা পার্ক- খেলার মাঠের জন্য বরাদ্দ রয়েছে। 

DMDP (Dhaka Metropolitan Development Plan)এ সুপারিশ করা হয়েছে প্রতি ১ হাজার মানুষের জন্য ০.৮৬ একর খোলা  জায়গা। কিন্তু  ২০১৩ সালের রাজউকের রিপোর্টে আমরা দেখি এর পরিমাণ মাএ ০.০৭ একর বা ২৮৩ স্কয়ার মিটার , যা DMDP মানের চাইতে বারো গুণ কম । একটি ফুটবল মাঠের আয়তনই হতে হয় ১.৩২ একর, সে তুলনায় এই সংখ্যা অতি নগণ্য। (Dipesher analogy)

বাংলাদেশের মোটামুটি সব শহরেই এই বেহাল দশা। 

 

সুতরাং দেখাই যাচ্ছে, দেশের নাগরিকদের জন্য বা তরুণদের স্বাভাবিক বিকাশের জন্য পাবলিক স্পেসের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। এবং তার বিরূপ প্রভাবও দেখা দিচ্ছে, তরুণদের সুস্থ বিকাশে। বাড়ছে মাদকাসক্তের সংখ্যা, বাড়ছে কিশোর অপরাধ, বাড়ছে সামাজিক অস্থিরতা

 

২০১৬ সালে আমেরিকার প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, শহুরে পরিবেশে পাবলিক পার্ক, খেলার মাঠ, কমিউনিটি পার্ক এর মত জায়গা শহরের অপরাধ ও সহিংসতা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। 

এই অবস্থার উত্তরণে সমাধান হতে পারে, DMDP, DAP বা অন্যান্য শহরের  প্ল্যান  গুলকে  দ্রুত বাসতোবায়ন করা। তার সাথে  বেসকারী উদোক্তারা ঢাকার মত জনবহুল শহরে খুলতে পারেন বই পড়ার ক্যাফে, বা ইন্ডোর জিম বা খেলার জায়গা। এতে আশা করা যায়, সমস্যা সমাধানের সাথে সাথে নতুন অর্থনৈতিক সুযোগও তৈরী হবে। 

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭