ইনসাইড টক

‘শীতে করোনার প্রভাব খুব একটা বাড়বে না’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 19/09/2020


Thumbnail

 

বাংলাদেশে করোনা প্রথম শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। করোনা সংক্রমণে দীর্ঘ সময় পার করেছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামনে শীতে দেশে করোনার ‘দ্বিতীয় ধাক্কা’ আসতে পারে। করোনার মধ্যে জীবনযাত্রা অনেকটা স্বাভাবিক হলেও, এমন পূর্বাভাস যেন নতুন করে আতঙ্ক বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে করে সাধারণ মানুষের মধ্যেও এক ধরণের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। দেশে করোনা সর্বশেষ পরিস্থিতি ও ভ্যাকসিন পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অগ্রগতি ইত্যাদি নানা বিষয়ে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাঃ এ বি এম আব্দুল্লাহ। পাঠকদের জন্য ভার্চুয়াল এই সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার প্রতিবেদক মির্জা মাহমুদ আহমেদ।    

বাংলা ইনসাইডারঃ দেশে করোনা পরিস্থিতি এখন কোন পর্যায়ে আছে বলে মনে করেন…

এ বি এম আব্দুল্লাহঃ বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা নিম্নমুখী এটা সত্যি। তবে আরও কয়েকদিন না গেলে আসলে বোঝা যাবে না করোনার প্রকোপ আসলেই কমেছে কিনা? গত কয়েক দিনের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় সংক্রমণের হার কিছুটা কম। তবে মৃত্যুর মিছিল কমছে না। কম বেশি ওঠা নামা করছেই। করোনার প্রকোপ আসলেই কমেছে কিনা- তা জানতে আগামী আরও কয়েক দিন কম রোগী শনাক্ত হলে, তখন সত্যিকার অর্থে বলা যাবে করোনার প্রকোপ কমেছে কিনা। করোনার প্রকোপ নিয়ে এখনই আমরা এ কথা বলতে চাচ্ছি না। করোনার সংক্রমণ কমতে কমতে যদি ৫ শতাংশের নিচে চলে আসে, তখন বলা যাবে করোনার প্রকোপ সত্যিই কমেছে। এর আগে সংক্রমন কমেছে- এ কথা বলা ঠিক হবে না।
করোনার প্রকোপ একটু কমেছে বলেই আমরা যেন আত্মতৃপ্তিতে না ভুগি। জনগণ এমনিতেই স্বাস্থ্যবিধি মানতে চাচ্ছে না। যেখানে সেখানে ঘুরা-ফেরা করছে। হাঁটে ঘাটে,বাজারে, রাস্তা-ঘাটে চলছে। অফিস আদালত খোলা, ট্রেন-বাস,লঞ্চে গাদা গাদা মানুষ ভ্রমন করছে। স্বাস্থবিধি তো মানুষ মানছে না। সুতরাং করোনার প্রকোপ কমেছে, এই ভেবে কেউ যেন আবার স্বাস্থবিধি মানার ব্যাপারে উদাসিনতা না দেখাই। এই ব্যাপারে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।

বাংলা ইনসাইডারঃ অনেক বিশেষজ্ঞরা বলছেন শীতে করোনার ‘সেকেন্ড ওয়েভ’ আসতে পারে। এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী?

এ বি এম আব্দুল্লাহঃ এটা একটা জরুরী প্রশ্ন। অনেকেই এই প্রশ্নটা করছেন। সবার মনে এই আশংকা ঘুরপাক খাচ্ছে যে শীতে করোনার প্রকোপ বাড়বে কিনা। আমরা আসলে এখনো নিশ্চিত না শীতে করোনার প্রকোপ বাড়বে কিনা। ডিসেম্বরে চীনে যখন করোনা প্রার্দুভাব দেখা দিলো তখন সেখানে প্রচন্ড শীত ছিলো। এজন্য অনেকে মনে করছেন শীতে করোনার প্রকোপ বাড়তে পারে। আবার হু একবার বলেছিলো করোনা শীতে বাড়ে গরমে কমে। কিন্তু আসলে দেখা গেল, আমাদের দেশে যখন গরম পড়লো, তখন করোনার প্রকোপ কমলো না। মধ্যপ্রাচ্যে তো প্রচুর গরম, সেখানেও করোনার প্রকোপ কমেনি। সিঙ্গাপুর,মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ার মতো নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ার দেশেও করোনার সংক্রমণ বেড়েছে। সুতরাং আবহাওয়ার সঙ্গে করোনার নিশ্চিতভাবে কোন সর্ম্পক আছে, বলে মনে হচ্ছে না। সামনে যে শীত আসবে অনেকের মধ্যে সংশয় আছে, ভয় আছে যে করোনার প্রকোপ বাড়বে কিনা। বাড়তে পারে আবার নাও বাড়তে পারে; বাড়বে এটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

অনুমান ভিত্তিক কথা বলছেন অনেকেই। তবে আমি মনে করি শীতে করোনার প্রভাব খুব একটা বাড়বে না। শীতে করোনার প্রকোপ বাড়বে এটা মনে করে কেউ যেন আবার অযথা প্যানিক না হন, ভয় না পান। আবার এই ব্যাপারে শিথিলতা দেখানোর সুযোগও নেই। আমাদের যা প্রতিরোধ, প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এগুলো সব কিন্তু মানতেই হবে। এ ব্যাপারে সর্তক থাকতে হবে।

বাংলা ইনসাইডারঃ ভ্যাকসিন দৌড়ে বাংলাদেশ কতটুকু এগিয়ে আছে বলে মনে করেন......

এ বি এম আব্দুল্লাহঃ ভ্যাকসিন নিয়ে পাঁচটা অর্গানাইজেশন ফাইনাল স্টেজে আছে। চায়না ভ্যাকসিনের ট্রায়াল আমাদের দেশে শুরু করবে। আমাদেরকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। পৃথিবীতে যারা যারা ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করছে। চীন বলেন, পাশ্ববর্তী দেশ ভারত বলেন অক্সফোর্ড বা মডানা। রাশিয়াতো ইতোমধ্যে ভ্যাকসিন দেয়া শুরু করেছে। আমাদের শুধু একটু পর্যবেক্ষণ করতে হবে যাতে সবচেয়ে ভালো ভ্যাকসিন আমরা নিতে পারি। সবচেয়ে ভালো সবচেয়ে কার্যকরী এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াহীন এই ধরনের ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য আমাদের এখন থেকেই চেষ্টা তদবির করতে হবে। তার জন্য আমাদের যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করতে হবে। যেমন- ভ্যাকসিন সংরক্ষণের জন্য প্রস্তুতি নেয়া দরকার। আনুষঙ্গিক কিছু জিনিস দরকার। সিরিঞ্জ, গজ, টেপ এগুলো ঠিক করতে হবে। দক্ষ জনবল তৈরিতে এখন থেকেই কাজ শুরু করতে হবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কারা আগে ভ্যাকসিন পাবে- এটা ঠিক করে রাখতে হবে। বয়স্ক মানুষ যাদের কোমঅডিভিটিডি আছে। ডায়বেটিকস, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, লিভারের রোগীদের ভ্যাকসিন আগে দেয়া দরকার্।

এ ধরনের রোগীদের সংক্রমনের ঝুঁকি বেশি। যারা ফ্রন্টলাইন ফাইটার ডাক্তার, স্বাস্থকর্মী, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য পুলিশ, র‌্যাব, সেনাবাহিনী, বিজিবি এবং সাংবাদিকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তালিকা করে এখন থেকেই ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম শুরু করে দিতে হবে। যখনই ভ্যাকসিন আসবে তখন যেন কোন হযবরল বা বিশৃংঙ্খল অবস্থা তৈরি না হয়, সে ব্যাপারে আমাদের সচেষ্ট হতে হবে। তাই এখন থেকেই প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা আমাদের নিয়ে রাখতে হবে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭