ইনসাইড আর্টিকেল

করোনা ভাইরাস কি শুধু নিয়েছে, নাকি দিয়েছেও কিছু?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 21/09/2020


Thumbnail

একটি গল্প দিয়ে শুর করছি, স্বামী-স্ত্রী ও চার বছরের সন্তানের একটি ছোট সংসার। স্বামী একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করে। যদিও অফিস টাইমটা একটু বেশি, কিন্তু তাতে কি- চাকরিতে বেতন ভাল হলে কিছু বিষয়ে তো একটু কম্প্রমাইজ করতেই হয়। স্ত্রী দেখাশুনা করে সংসার। স্বামীর বেতনের টাকায় মোটামুটি ভালভাবেই চলে যাচ্ছে তাদের ছোট সংসার। শুধু একটা বিষয় ছাড়া। বিষয়টি হল বাবা ও সন্তানের দেখা না হওয়াটা। বাবা যখন খুব ভোরে উঠে অফিসে যায়, তখন বাচ্চাটি থাকে ঘুমিয়ে, আবার অফিস থেকে রাত করে ফেরার ফলে তখনো দেখেন তিনি বাচ্চাটি ঘুমোচ্ছে। ঘুমের মধ্যেই বাচ্চাটিকে একটু আদর করে তিনি ফ্রেশ হয়ে খেয়ে-দেয়ে চলে যান ঘুমাতে। শুধু শুক্রবারে স্বামীটি থাকেন বাসায়। তাতে কি, ছয় দিন অমানুষিক পরিশ্রমের ফলে ঐ দিন তিনি ঘুম থেকে ওঠেন দুপুর গড়িয়ে। এমনি এক শুক্রবারের ঘটনা এটি।


ঘুম থেকে উঠে স্বামীটি সন্তানের কথা স্ত্রীর কাছে জানতে চাইলে স্ত্রী বললেন ওপরের তলার ঊষা’র সাথে খেলছে (ঊষা ওপরের তলার অন্য এক ভারটিয়ার মেয়ে)। স্বামী বললেন যাওতো ওকে একটু নিয়ে আসো, কত দিন মেয়েটার সাথে কথা হয়না। স্ত্রী চলে গেলেন বাচ্চাকে আনতে। গিয়ে দেখেন ঊষা এবং তার সন্তান ঊষার বাবার পিঠে চড়ে ঘোড়া ঘোড়া খেলছে। তিনি তার মেয়েকে বললেন- চলো মা, বাবা তোমাকে ডাকছে। বাচ্চাটি বললো, কার বাবা ? মা বললেন তোমার বাবা! বাচ্চাটি বললো, যে লোকটি রাতে আমার ঘুম ভাঙ্গিয়ে আদর করে সে আমার বাবা? এবার মা একটু বিব্রত হলেন দেখলেন ঊষার বাবা খুব অবাক হয়ে তাদের কথা শুনছে। বললেন, হ্যাঁ মা সেই তোমার বাবা। বাচ্চাটি বললো, আমি যাবনা, ঐ লোকটির থেকে আমার এই আংকেল (ঊষার বাবাকে দেখিয়ে) অনেক ভাল। সে আমাকে কত আদর করে, আমার সাথে ঘোড়া ঘোড়া খেলে আর ঐ লোকটার সাথেতো আমার কথাই হয়না। আমি যাবনা, তুমি যাও। স্ত্রী লোকটি কোন কথা না বলে মাথা নিচু করে বেরিয়ে গেলেন।


সম্পর্ক হল একটি চারা গাছের মত। যত্ন না পেলে যেমন একটি চারা গাছ সঠিক ভাবে বেড়ে ওঠেনা। তেমনি একটি সম্পর্কের ক্ষেত্রেও কিছু বিষয়ে দায়িত্ব পালন না করলে সম্পর্কটিও সঠিক ভাবে আগাবেনা। সেটা যেকোনো ধরনের সম্পর্কই হোক না কেন।


এবার মূল প্রসঙ্গে আসি। কোভিড- ১৯ বা করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সারাবিশ্বে এখন অব্দি ৩০ কোটির অধিক মানুষ আক্রান্ত এবং প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ মৃত্যু বরন করেছে। থমকে দিয়েছে সমস্ত পৃথিবীকে। কেউ হারিয়েছে তার পরিবারের সব চাইতে কাছের মানুষটিকে, কেউ হারিয়েছে ব্যবসা, কেউ হারিয়েছে চাকরি, কারো বা বন্ধ হয়ে গিয়েছে কাজ। একটা কঠিন সংকটময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে মানুষ পার করেছে লকডাউনের প্রায় ছয়টি মাস।


হ্যাঁ, এ কথা সত্য যে করোনা মানুষকে করে ফেলেছে ঘরবন্দি। ব্যহত করছে স্বাভাবিক জীবন যাত্রাকে। তাহলে প্রশ্ন হল, করোনা কি শুধু নিয়েছে কিছুই কি দেয়নি? এ বিষয়ে মিশরের একজন প্রাক্তন সংসদ সদস্য একটি বার্তায় বলেছেন - করোনা ভাইরাসকে ঘৃনা করবেন না, এটি মানবতা ফিরিয়ে এনেছে। ঐ বার্তায় তিনি আরো বলেছেন, করোনাভাইরাস মানুষকে তাদের স্রষ্টার কাছে এবং নৈতিকতার কাছে ফিরিয়ে এনেছে। এটি বার, নাইট ক্লাব, পতিতালয়, ক্যাসিনো বন্ধ করে দিয়েছে। কমিয়ে এনেছে সুদের হারকে। পরিবারের সদস্যদের এক করে নিয়ে এসে সম্পর্ক গুলকে নতুন করে আবদ্ধ করেছে। মানুষের অশ্লিল আচরণ বন্ধ করেছে। এটি মৃত এবং নিষিদ্ধ প্রাণীর মাংস খাওয়া বন্ধ করেছে। এখন পর্যন্ত এর কারণে সামরিক ব্যয়ের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ স্বাস্থ্য সেবাতে স্থানান্তরিত হয়েছে।


আরব দেশগুলোতে শিশা নিষিদ্ধ করেছে। করোনা ভাইরাস কর্তৃপক্ষকে কারাগার এবং বন্দিদের দিকে নজর দিতে বাধ্য করেছে। এটি মানুষকে প্রার্থনা করতে বাধ্য করেছে। এটি স্বৈরশাসক এবং তাদের ক্ষমতাকে তুচ্ছ করেছে। এটি মানুষ কে শিখিয়েছে কিভাবে হাঁচি, কাশি দিতে হয় এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হয়। সর্বোপরি করোনা ভাইরাস মানবতাকে জাগ্রত করেছে।


ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (হু) করোনার কারণে যে তিনটি স্বাস্থ্য বিধি বেধে দিয়েছে তাহলো, সাবান পানি দিয়ে ঘন ঘন হাত ধোয়া, মাস্ক পরিধান করা, ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। এখন প্রশ্ন হল এই তিনটি স্বাস্থ্য বিধি কি শুধুমাত্র করোনার হাত থেকেই আপনাকে রক্ষা করবে, নাকি অন্যান্য অনেক রোগ-ব্যাধি থেকে আপনাকে রক্ষা করবে? হ্যাঁ ঘন ঘন হাত ধৌত করলে শুধু করোনা নয় অন্যান্য অনেক রোগ জীবাণু আপনার শরীরে প্রবেশ থেকে রক্ষা পাবেন। মাস্ক পরিধান করলে শুধু করোনা নয় বাতাসের সাথে ভেসে বেড়ানো অনেক রোগ-জীবাণু ও ধুলা-বালি থেকে ফুসফুসকে রক্ষা করতে পারবেন। তেমনি ভাবে একটি গবেষণায় দেখা গেছে একজন মানুষ যখন হাঁচি দেয় তখন তার শরির থেকে কমপক্ষে দুই থেকে আড়াই হাজার জীবাণু নিঃস্বরিত হয় যেগুলো শুধু করোনা ভাইরাস নয়, হাজার রোগ জীবাণুতে ভরা থাকে। তাই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা অত্যান্ত জরুরি।


সবকিছুর পরে আমরা এটুকুই বলতে পারি, করোনা আমাদের কাছথেকে শুধু কেঁড়েই নেয়নি দিয়েছেও অনেক কিছু। যদি আমরা এগুলো সঠিক ভাবে পালন করতে পারি তাহলে সুস্থ থাকতে পারব আমরা অনেক দিন। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭