ইনসাইড থট

কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের আবাসন নিয়ে হচ্ছেটা কী?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 21/09/2020


Thumbnail

 

ঢাকা থেকে কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসায় নিয়োজিত বেশ কয়েকজন চিকিৎসক যোগাযোগ করেছেন। সবার কথাতেই উদ্বেগ, আতঙ্ক। বেশ কয়েকদিন ধরেই কোভিড ইউনিটে কর্মরত চিকিৎসকদের ডিউটি শেষে কোয়ারেন্টাইনের জন্য আবাসন নিয়ে এক ধরণের অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে।

করোনা মহামারী চলাকালিন  গত ১২ এপ্রিল রাজধানীর ছয়টি হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত রোগীদের স্বাস্থ্য সেবাদানকারী চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে ১৯টি হোটেল নির্ধারণ করা হয়েছিল। নির্ধারিত সময়ব্যাপী কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার দায়িত্ব পালন শেষে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা নির্ধারিত হোটেলে ১৪দিনের জন্য কোয়ারেন্টাইনে যেতেন। কোন বিলাসবহুল হোটেলের থাকার লোভে নয়, এই কোয়ারেন্টাইনে থাকাটা ছিল তাদের কাজেরই অংশ। এর একটা বৈজ্ঞানিক কারণও আছে। চিকিৎসকরা হলেন করোনার সুপার স্প্রেডার। একজন করোনাক্রান্ত সাধারণ রোগীর সংস্পর্শে এসে যতজন মানুষ আক্রান্ত হতে পারে, একজন করোনাক্রান্ত চিকিৎসকের সংস্পর্শে এসে তার চেয়ে অনেক বেশী মানুষ আক্রান্ত হবার ঝুঁকিতে থাকে। যে কারণেই কোভিড নির্ধারিত হাসপাতালে দায়িত্ব পালন শেষে নির্ধারিত হোটেলে কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। অন্যত্র কোয়ারেন্টাইন ছাড়া চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা যদি নিজগৃহে ফিরে যায়, সে ক্ষেত্রে ঘরে অবস্থানরত পরিবারের অন্য সদস্যরাও করোনা সংক্রমিত হতে পারেন। অনেকেরই বাসায় বয়স্ক বাবা-মা আছেন, যাদের আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেশী। কোভিডাক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবায় তুলনামূলকভাবে বয়সে নবীন চিকিৎসকরাই ফ্রন্টলাইনে অংশগ্রহণ করছেন। এইসব নবীন চিকিৎসকদের  মধ্যে অনেকেই হয়তো মেস করে থাকেন, তাদের জন্যও ডিউটি শেষে সরাসরি ফিরে যাওয়াটা বিড়ম্বনার হতে পারে। এইসবই সবার জানা, নতুন কিছু নয়।

অথচ গত ২৯ জুলাই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব স্বাক্ষরিত পরিপত্র অনুযায়ী আমরা জানতে পারলাম যে, মন্ত্রণালয় করোনা রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের আবাসিক হোটেলের বিল পরিশোধ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি, চিকিৎসকদের জন্য হোটেল বরাদ্দের সুবিধাও বাতিল করা হয়েছে। পরিপত্রের মাধ্যমে আরো জানানো হয় যে, ঢাকা শহরের মধ্যে দায়িত্ব পালনকারী একজন চিকিৎসক প্রতিদিন ২০০০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ১৮০০ টাকা, একজন নার্স ঢাকার মধ্যে ১২০০ ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে ১০০০ টাকা এবং একজন স্বাস্থ্যকর্মী ঢাকার মধ্যে ৮০০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৬৫০ টাকা ভাতা পাবেন।

এই টাকা দিয়ে চিকিৎসক-নার্সরা কী করবেন? সবার নিরাপত্তার স্বার্থে তারা একটা আবাসন চেয়েছে। তারকাবিশিষ্ট হোটেলের দাবি কেউ জানাচ্ছে না, শুধু প্রয়োজন আবাসনের উপযোগী ন্যূনতম মানসম্পন্ন একটা আবাসন। নির্ধারিত কাজের শেষে যেখানে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকা যাবে। এটা তো অযৌক্তিক কোন প্রত্যাশা নয়। কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির গত ১৭ সেপ্টেম্বরের সভাতেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পরামর্শক কমিটিও কোভিড ইউনিটে দায়িত্ব পালনকারী চিকিৎসকসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করার পক্ষে মতামত প্রদান করেছেন।

বাংলাদেশের চিকিৎসক নেতৃবৃন্দও এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠক করেছেন। কিন্তু সংশয় তবু কাটছে না। কোয়ারেন্টাইন সমস্যারও গ্রহণযোগ্য সমাধান হচ্ছে না। এই নিয়ে চিকিৎসক সমাজে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। বর্তমান সরকার প্রধান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা পরিস্থিতিতে অর্থনীতি, কৃষিসহ সবখাত এত দক্ষতার সাথে সামলাচ্ছেন, সেই তুলনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজগুলো কেন জানি প্রত্যাশিত ভাবে হচ্ছে না। না চিকিৎসকদের যৌক্তিক প্রত্যাশা, না পরামর্শক কমিটির পরামর্শ, না বিজ্ঞান, কোনটাই যেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মানতে চাইছে না।

বর্তমানে দেশে কোভিডাক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালে যাবার প্রবনতা কমেছে। কোভিড ইউনিটের অনেক বিছানাই এখন খালি থাকছে। এমতাবস্থায়, কোভিড চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে কোভিড ইউনিটে চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সংখ্যাও কমে যাবে। হোটেলের বিকল্প হিসেবে সরকারী গেস্ট হাউজ, প্রশিক্ষণ ভেন্যু এবং অন্যান্য মানসম্মত আবাসন কেন্দ্রগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। ফলে, একদিকে যেমন সরকারের অর্থ সংকুলান হবে, তেমনি চিকিৎসকদের আবাসন সংকটেরও সমাধান হবে। যদি এর চেয়েও ভাল কোন প্রস্তাবনা থাকে, তবে সেটাও করা যেতে পারে। মোদ্দা কথা, কোভিড ইউনিটে ডিউটি শেষে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কেই ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। এটা বাংলাদেশের কোভিড রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকসহ সকল স্বাস্থ্যকর্মীর পক্ষ থেকে উত্থাপিত অত্যন্ত ন্যায্য একটা চাওয়া।

কাজ করতে গেলে সমস্যা হতেই পারে। বৈশ্বিক মহামারীর প্রেক্ষিতে জটিলতা স্বভাবতই বাড়বে। সমস্যা সমাধানে তাই যৌক্তিক পথে হাঁটাই ভাল। একটি জনস্বাস্থ্য সমস্যাকে বৈজ্ঞানিকভাবে মোকাবেলা করাটাই উত্তম। এর অন্যথা হলে জটিলতা বাড়ে বৈ কমে না।

লেখকঃ চেয়ারম্যান, ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস’ সেফটি, রাইটস এন্ড রেস্পন্সিবিলিটিজ (এফডিএসআর)

 





প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭