ইনসাইড হেলথ

আবজাল, মালেক কার সৃষ্টি?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 21/09/2020


Thumbnail

স্বাস্থ্যখাতে তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের লুটপাট দুর্নীতি এখন ‘টক অব দ্যা কান্ট্রি’। আবজাল এখন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। অফিস সহকারী। আর সদ্য র‌্যাবের হাতে আটক আবদুল মালেক একজন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী। ড্রাইভার। এদের দুজনের সম্পদের পরিমাণ প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বলছে, এই হিসেব প্রাক্কলিত। বাস্তবে এদের অর্থের পরিমাণ অনেক বেশি। দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের উর্ধ্বতন ব্যক্তিদের নাকের ডগায় অপকর্ম করেছে। এরা ছিলো সবকিছুর উর্ধ্বে।

আবজালের দুর্নীতি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল ২০১০ সাল থেকেই। সে সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেই আবজালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছিল স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ.ফ.ম রুহুল হক কে। ব্যবস্থা তো দূরের কথা, তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তাকে হিসাব বিভাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বদলি করা হয়েছিল। আবজাল ছিলো মিঠুর লোক। কোথায় কত টাকা ছাড় হলো, কোথায় কত টাকা বরাদ্দ হবে ইত্যাদি তথ্য দিয়ে মিঠুর কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ পেতেন আবজাল। এক সময় মিঠুর আগ্রহেই তার স্ত্রীকে দিয়ে ভুয়া কোম্পানি করেন। আবজাল নিম্নপদের কর্মচারী হলেও অফিসে আসতেন প্রাডো গাড়িতে।

ডা. দ্বীন মোহাম্মদ নূরুল হক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হবার পর, আবজালকে শাস্তি দেয়ার সুপারিশ করেছিলেন। তাকে ওএসডি করার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রয়াত মোঃ নাসিমের সহকারি একান্ত সচিব মোশারফ হোসেন আবজালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে বাঁধা হয়ে দাড়ান। শেষ পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কিছুই করতে পারেনি আবজালের বিরুদ্ধে। টাকার ভাগাভাগি নিয়ে ২০১৭ সাল থেকে মিঠুর সঙ্গে দ্বন্দ্ব শুরু হয় আবজালের। এরপরই আবজাল সবার চক্ষুশূল হন। তবে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বড় কর্তারা সবাই ছিলেন আবজালের ঘনিষ্ট।

আবদুল মালেকের গল্প আরো রোমাঞ্চকর। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হন অধ্যাপক ডা. শাহ মুনীর। শাহ মুনীরের গাড়ী চালক হন মালেক। অভিযোগ আছে, শাহ্‌ মুনীরের নামে চাঁদাবাজি করতেন মালেক। নিয়োগ করিয়ে দেয়ার জন্য মোটা অংকের টাকা নিতেন। শাহ মুনীর সে সম্পর্কে জানতেন কিনা অস্পষ্ট। তবে, মহাপরিচালক হিসেবে শাহ মুনীরের চাকরীর মেয়াদ না বাড়ার পেছনে ‘মালেক’ একটি কারণ বলে জানা যায়। বিষয়টি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর কানে পর্যন্ত পৌছেছিল। মালেক কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা হিসেবে বেসুমার চাঁদাবাজি করত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে। সবাই তাকে সমঝে চলতো।

এরা দুজনই এখন গ্রেপ্তার হয়েছেন। নিশ্চয়ই তাদের বিচারও হবে। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন অন্যত্র। আবজাল, মালেক কি সবাই এমনই এমনই সৃষ্টি হয়। একজন অফিস সহকারী, কিংবা একজন ড্রাইভার কখনো একক শক্তিতে দানব হতে পারে না। এর পেছনে থাকে প্রভাবশালী বড় কর্তাদের অযোগ্যতা, লোভ এবং ব্যক্তিত্বহীনতা। তাই শুধু মালেক কিংবা আবজালকে বিচারের মুখোমুখি করলেই চলবে না। এদের যারা লালন পালন করেছে, এদের যারা পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে তাদেরও উন্মোচিত করতে হবে। তাহলেই ভবিষ্যতে আর আবজাল-মালেকের সৃষ্টি হবে না।  



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭