ইনসাইড বাংলাদেশ

জিয়া পরিবারে দ্বন্দ্ব

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 09/08/2017


Thumbnail

বড় ভাইয়ের আড়ালেই ছিলেন জীবদ্দশায়। বড় ভাই অর্থ কড়িতে ফুলে ফেঁপে উঠলে, তিনিও অস্থির হয়ে ওঠেন। বিলবোর্ডের ব্যবসা থেকে তদবির, কমিশন বাণিজ্যে হাত বাড়ান। মায়ের ছোট ছেলেরা সব সময় একটু বেশি আদরের হয়। মা তাঁকে প্রশ্রয় দেন। গেটকো, টেলিটকের কাজে কমিশন পান ভালোই। কিন্তু মা চেয়েছিলেন তাঁর আদরের ছেলেটি একটা কিছু করুক। এজন্য তাঁর বিশ্বস্ত সহযোগীকে ডেকে এক সঙ্গে ব্যবসা করার পরামর্শ দেন। এর মধ্যে কিছু বাজে অভ্যাসে আসক্তি হয়। তবুও মা তাঁকে আগলে রাখেন। ওয়ান ইলেভেনে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাঁর মায়ের মনোবল ভেঙ্গে যায়। পরে মুচলেকা দিয়ে দুই সন্তান এবং স্ত্রীকে নিয়ে মালয়েশিয়া চলে যান। ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি খুব কমবয়সেই মার যান আরাফাত রহমান কোকো। 

এ পর্যন্ত সব কিছূ ঠিকঠাকই ছিল। কোকো কোনোদিন জীবিত কালে ভাইয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতো না। তারেক জিয়া যে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন, সে তুলনায় কোকোর সঞ্চয় ছিল সামান্যই। তাঁর জীবিত কালে তাঁর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি এসব নিয়ে টুকটাক মুখ খুলতেন। কিন্তু এখন প্রকাশ্যেই মুখ খুলছেন।  লন্ডনে বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা করে, লুটের টাকার ভাগ চেয়েছেন। বিএনিপি থেকে পাওয়া টাকা পয়সার একভাগ দাবি করেছেন। সিঁথি হুমকি দিয়েছেন, তারেক-জোবায়দার মতো অর্থ না পেলে তিনি মুখ খুলবেন। ২৪ জানুয়ারি কোকোর মৃত্যুর পর সিঁথি তাঁর দুই কন্যা এবং স্বামীর মরদেহ নিয়ে ঢাকায় আসেন। ২৭ জানুয়ারি মাত্র  এক সপ্তাহ অবস্থানের পর সিঁথি তাঁর সন্তানদের নিয়ে মালয়েশিয়া চলে যান। মেয়েদের ভালো লেখাপড়ার জন্য ২০১৬ সালে শর্মিলা লন্ডনে যান। লন্ডনে গিয়েই পারিবারিক বিরোধের সূত্রপাত হয় বলে, শর্মিলার নিকটাত্নীয়রা জানিয়েছেন। লন্ডনে তারেক জিয়ার বিলাস বহুল জীবন যাপনের  বিপরীতে শর্মিলাকে নির্দিষ্ট টাকার হিসেবী জীবন যাপন করতে হচ্ছে। এবারের ১৮ মার্চ সিঁথির বাবা ইঞ্জিনিয়ার এম এইচ হাসান রাজা মৃত্যুবরণ করেন। সে সময় সিঁথি ঢাকায় এসে বেগম জিয়ার কাছে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা  করেন। 

গত ১৫ জুলাই বেগম জিয়া লন্ডন গিয়ে তারেক রহমানের বাসাতেই বেশির ভাগ সময় কাটাচ্ছেন। এখানে দলীয় মনোনয়ন বাণিজ্য, কমিটি বাণিজ্যে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে মোটা অংকের লেনদেন হচ্ছে। বিষয়গুলো সিঁথির কানেও গেছে। তিনি মনে করেন, কোকোও জিয়াউর রহমানের সন্তান। বিএনপিতে তাই তাঁরও সমান হিস্যা আছে। সিঁথির ঘনিষ্ট সূত্র গুলো বলছে, কোকো জীবিত কালেও বঞ্চিত ছিল, এখন তাঁর সন্তানরা বঞ্চিত হচ্ছেন। বেগম জিয়া যদিও কোকোর ব্যাপারে অনেক উদার ছিলেন, ঠিক ততোটা উদার তিনি সিঁথির ব্যাপারে না। সিঁথিকে প্রতি মাসে তাঁর এবং তার দুই মেয়ের চলবার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেওয়া হয়। বেগম জিয়া মনে করেন এটুকুই যথেষ্ট। কিন্তু  সিঁথি তা মানতে রাজী না। তিনি মনে করেন, তাঁর মেয়েরা বড় হচ্ছে। তাঁর বন্ধুদের বলেছেন, শাশুড়ির কিছু হলে কোকোর বড় ভাই এক পয়সাও তাঁদের দেবে না। এনিয়ে লন্ডনে বেগম জিয়া পারিবারিক বৈঠকও করেছেন। কিন্তু শর্মিলার এক কথা,বিএনপি থেকে যা আয় হবে, তা আর দুই ভাগ নয় তিন ভাগ করতে হবে। কিন্তু তারেক এ ব্যাপারে অনঢ়। তারেকের কথা হলো, কোকো জীবিত কালে কখনো বিএনপি করত না। এখন কেন তাঁকে বিএনপির ভাগ দিতে হবে। তারেক বিরোধী অনেক বিএনপি নেতা এখন নিয়মিত সিঁথির সঙ্গে যোগাযোগ করছে। জিয়া পরিবারের এই ভাঙ্গন কীভাবে প্রকাশ্যে আসে এবং বিএনপিকে তা কোথায় নেয় তাই দেখার বিষয়।

 

বাংলা ইনসাইডার/জেডএ 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭