ইনসাইড বাংলাদেশ

ক্ষমতাবান আমলারা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 22/09/2020


Thumbnail

 

রাজনৈতিক সরকারে একটি মন্ত্রণালয়ের প্রধান ব্যক্তি হলেন মন্ত্রী। আর সচিব হলেন প্রশাসনিক কেন্দ্র বিন্দু। অন্য অর্থে মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের রাজনৈতিক ও সরকারি কর্মকর্তাদের যোগসূত্র। একটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং সচিবের ক্ষমতার ভারসাম্যই মন্ত্রণালয়ের কাজে শৃংখলা আনে, জবাবদিহিতা তৈরি করে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, মন্ত্রী-সচিবের দ্বন্দ্ব মন্ত্রণালয়ের কাজের পরিবেশ নষ্ট করে। আবার অনেক সময় মন্ত্রীর একচ্ছত্র কর্তৃত্বে কোণঠাসা হয়ে যান সচিব। মন্ত্রণালয়ের অনেক সিদ্ধান্তই নেয়া হয় সচিবকে অন্ধকারে রেখে। এর উল্টো পিঠও আছে। এখন অনেক মন্ত্রণালয়েই সচিবরা মন্ত্রীর চেয়ে ক্ষমতাবান। ধর্ম মন্ত্রণালয় এখন সচিব দিয়েই চলছে। এরকম আরো কয়েকটি মন্ত্রণালয় আছে যেখানে আমলা বেশ ক্ষমতাবান, কোন কোন ক্ষেত্রে মন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাবান। এ রকম কয়েকজন সচিবকে নিয়ে এই প্রতিবেদন-

শেখ ইউসুফ হারুন

জনপ্রশাসন সচিব সব সময় ক্ষমতাবান। দীর্ঘদিন ধরে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর তত্বাবধানে পরিচালিত হতো। গত মেয়াদে প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে জনপ্রশাসন মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। এবারও এই মন্ত্রণালয়ে ফরহাদ হোসেনকে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী থাকলেও উর্ধ্বতন পদোন্নতি বদলি ইত্যাদি বিষয়ে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী পরামর্শ দেন। অনেক ক্ষেত্রেই সচিব সরাসরি এ বিষয়গুলো নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে কথা বলেন। জনপ্রশাসন সচিব যেহেতু সব কর্মকর্তাদের খবর রাখেন এ কারণেই বদলি, পদোন্নতি তে তার ভূমিকা বেশি, তার মতামত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য অতীতের মতো এখনো জনপ্রশাসন সচিব অত্যন্ত ক্ষমতাবান।

হেলাল উদ্দিন আহমেদ

বাংলাদেশ সরকারে স্থানীয় সরকার বিভাগ সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রনালয় গুলোর একটি। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় সরকারের মন্ত্রী থাকতেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারন সম্পাদক। গত মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী এই রীতি ভাঙ্গেন। ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশারফ হোসেনকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী করা হয়। তখন থেকেই এই মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী-সচিবের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য হয়। এই দ্বন্দ্বেই সরে যেতে হয় আবদুল মালেককে। এবার আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয় তাজুল ইসলামকে। গত বছরের ৭ জানুয়ারির মন্ত্রিসভায় এটি ছিলো বড় চমক। এই মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেব আছেন হেলাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের নেতাও। নবীন মন্ত্রী আর নেতা সচিব। তাই স্বাভাবিকভাবেই ক্ষমতার ভারসাম্য সচিবের দিকেই ঝুকে পরেছে।

শহীদুল্লাহ খন্দকার

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে দীর্ঘদিন ধরে সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন শহীদুল্লাহ খন্দকার। আছেন চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগে। সেই চুক্তির মেয়াদও বেড়েছে দুবার। স্বাভাবিকভাবেই মন্ত্রণালয়ে তার ক্ষমতা প্রশ্নাতীত। ৭ জানুয়ারি মন্ত্রী সভায় এই মন্ত্রণালয়ে একজন পূনাঙ্গ মন্ত্রী দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এক রহস্যময় কারণে শ.ম. রেজাউল করিমকে মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়। এখন প্রতিমন্ত্রী দিয়েই চলছে গুরুত্বপূর্ণ এই মন্ত্রণালয়। তাই এই মন্ত্রণালয়ে সচিব এখন অনেক ক্ষমতাবান।

আবদুর রউফ তালুকদার

বাংলাদেশে অর্থমন্ত্রণালয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অলিখিতভাবে অর্থমন্ত্রী সরকারের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হিসেবেই বিবেচিত হন। তাজউদ্দিন আহমেদ অর্থমন্ত্রী ছিলেন। সাইফুর রহমান, শাহ এম.এস কিবরিয়া এবং আবুল মাল আবদুল মুহিতের মতো মন্ত্রীরা যখন এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন, তখন সচিবদের কেউ চিনতেন না। মন্ত্রীরাই অর্থ মন্ত্রণালয় আলোকিত করে রাখতেন। কিন্তু এবার আ.হ.ম মোস্তফা কামালকে অর্থমন্ত্রী করার পর দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। ক্রমশঃ ক্ষমতাবান হয়ে উঠেছেন সচিব আবদুর রউফ তালুকদার। বিশেষ করে করোনাকালীন সময়ে তার কাজ দিয়েই তিনি ক্ষমতাবান হয়ে উঠেছেন।

কবির বিন আনোয়ার

পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়। এই মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী দু’জন। কিন্তু কেউই পূর্ণ মন্ত্রী নন। একজন প্রতিমন্ত্রী এবং একজন উপমন্ত্রী। সচিব কবির বিন আনোয়ার ছাত্র জীবনে ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। দুই মন্ত্রীই তার বয়সে এবং রাজনীতিতে জুনিয়র। তাই কবির বিন আনোয়ারের ‘ক্ষমতাবান’ হয়ে ওঠা অনেকটা সংক্রিয় পদ্ধতির মতো।

এ রকম অনেক ক্ষমতাবান সচিব আছেন। যারা সরকারের নীতি নির্ধারণে মন্ত্রীর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। তবে সচিবদের ক্ষমতাবান হয়ে ওঠা গণতন্ত্রের জন্য ইতিবাচক না নেতিবাচক, সে এক বিতর্ক।

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭