ইনসাইড আর্টিকেল

`চোর চক্রবর্তী`

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 23/09/2020


Thumbnail

বিরামপুর, বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের দিনাজপুর জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা ও পৌর শহর। বিরামপুর উপজেলা দিনাজপুর জেলার দক্ষিণাঞ্চল ও দেশের সীমান্তবর্তী একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক শহর। ছোট যমুনা নদীর কোল ঘেঁষে বিরামপুর উপজেলা অবস্থিত। রাজধানী থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরবর্তী এবং দিনাজপুর সদর থেকে ৫৬ কিলোমিটার দূরবর্তী হলেও বিরামপুর শহর নিজস্ব সংস্কৃতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে।
ত্রেতা যুগ, বিরাট রাজার শাসন আমল, পাতরদাস শাসন আমল, বানরাজার শাসন আমল, কৈবর্ত্য শাসন আমল, মুসলিম শাসন আমল সহ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর অত্র এলাকার বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দ সহ অনেকেই এই এলাকার উন্নয়নে মনোনিবেশ করেছিলেন।

এ অঞ্চলের মোট ৩টি পূর্ব নাম খুঁজে পাওয়া যায়। এগুলো হল- চরকাই, ভোলাগঞ্জ ও বিরামপুর। চরকাই নামটি একটু বিচিত্র ধরনের। নামের উৎপত্তি সম্পর্কে কোন ইতিহাস পাওয়া যায় না। কিন্তু একটি মুখরোচক গল্প শোনা যায়। চরকাই রেলস্টেশন থেকে প্রায় এক কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে একটি ঢিবি আছে। লোকে এ ঢিবিকে বলে চোর চক্রবর্তীর ধাপ। প্রাচীনকালে সেখানে নাকি এক ধনাঢ্য ব্রাহ্মণ বাস করতেন। তার একমাত্র পুত্র বাল্যকালেই নাকি চৌর্যবিদ্যায় অত্যন্ত পারদর্শী হয়ে ওঠে। বালকের পিতা তাকে চৌর্যবৃত্তি থেকে নিবৃত্ত করার জন্য একটি কৌশল অবলম্বন করেন। একদিন তিনি একটি থালাতে কিছু টাকা রেখে টাকাগুলি ছাই দিয়ে ঢেকে দেন। তারপর তিনি বালককে আদেশ দেন, ছাইগুলি ফুঁ দিয়ে সরিয়ে টাকাগুলি নিয়ে যেতে। কিন্তু শর্ত থাকে যে, ফুঁ দিয়ে ছাই সরাবার সময় যদি একটা ছাইয়ের কনা মুখে লাগে তবে বালককে সারা জীবনের জন্য চৌর্যবৃত্তি ছেড়ে দিতে হবে। বালক হাসিমুখে শর্ত মেনে নিয়ে পরীক্ষা দিতে প্রস্তুত হয়। এরপর সে এক খন্ড লম্বা বাঁশের চোঙ্গা জোগাড় করে, এবং দূর থেকে চোঙ্গার ভিতর দিয়ে ফুঁ দিয়ে সব ছাই সরিয়ে ফেলে এবং তাতে একটা ছাইও তার মুখে লাগেনি। অতঃপর মনের খুশিতে সে টাকাগুলি তুলে নেয়।


অতি অল্প বয়সে বালকের এহেন চতুরতা দেখে বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দেন। বালক চৌর্যবিদ্যায় হাত পাকাতে থাকে। বড় হয়ে সে নিজ দেশ ছাড়াও অঙ্গ, কলিঙ্গ, মগধ, মিথিলা, ত্রিহুত, পাটলিপুত্র, অবন্তী, মৎস্য, কান্যকুব্জ প্রভৃতি দেশে অতি নিপুণতার সাথে চৌর্যবৃত্তি করতে থাকে এবং অশেষ ধনরত্নের অধিকারী হয়ে সে এখানে প্রাসাদসম এক বিরাট অট্টালিকা নির্মাণ করে। জনশ্রুতি আছে যে, তার অট্টালিকা আশপাশ এলাকা জুড়ে ছোট নদী বেষ্টিত ছিল এবং নদীতে সোনার নৌকায় সে যাতায়াত করতো।

একবার মগধ দেশের পূর্ব প্রান্তে চুরি করতে গিয়ে সে প্রায় ধরা পড়ে যায়। প্রাণভয়ে অশ্বারোহণে অতি দ্রুতগতিতে গৃহাভিমুখে প্রত্যাবর্তন করতে থাকলে মগধরাজের সৈন্যরাও তার পিছে পিছে ধাওয়া করেন। ছুটতে ছুটতে সে তার প্রসাদে এসে প্রবেশ করলে পশ্চাদ্ধাবনকারীরা তার প্রাসাদের সামনে এসে তাজ্জব হয়ে বলেন, `এটাতো রাজ প্রাসাদ, চোর কই?` এবং `চোরকই` `চোরকই` বলে তারা চেঁচাতে থাকেন। সেই থেকেই নাকি এ স্থানের নাম হয় চরকাই। তবে “চোর চক্রবর্তী” নাম সম্পর্কে জনশ্রুতি বলে ইমারতটি বহুকাল আগে পরিত্যক্ত হবার পরে কোনো এক সময়ে হয়তো এখানে চোর-ডাকাতের আড্ডা গড়ে ওঠে। তাদের মধ্যে কোন একজন হয়তো নিজ ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে অসামান্য কৃতিত্বের জন্য `চোর চক্রবর্তী` (অর্থাৎ চোরদের শিরোমণি) আখ্যা লাভ করে। সেই স্বনামধন্য `চোর চক্রবর্তী` মশায়ের নামের সঙ্গে জড়িত হয়ে এ স্থানের “চোর চক্রবর্তী” নামকরণ হয়ে থাকতে পারে এবং পরে এ স্থান বোধহয় এ নামেই পরিচিত হয়ে ওঠে।


আরেক ভাষ্যমতে, সম্রাট আকবর বিষ্ণুদত্তকে কান্নগো রুপে দিনাজপুরের রাজস্ব নির্ধারণ ও আদায়ের বন্দোবস্তের জন্য প্রেরণ করেন। বিষ্ণুদত্ত বৈরামখানের একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন। অনেক ঐতিহাসিকের মতে এ ভক্ত বিষ্ণুদত্তই বৈরামখানের নামানুসারে ভোলাগঞ্জ নাম পরিবর্তন করে এ স্থানের নাম রাখেন বিরামপুর।

এভাবেই কোন স্থান, গোষ্ঠী, বা জাতির  প্রত্যেকটা  নামকরনের পিছনে লুকিয়ে আছে সুখ, দুঃখ, হাসি কান্না, বিষাদ বা বিজয়ের অজানা কোন গল্প। আপনি জানেন কি আপনার জন্মস্থান বা অঞ্চলের নামকরণের ইতিহাসটি কি ?



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭