ইনসাইড আর্টিকেল

আপনি বলুন কোনটি পান করবেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 23/09/2020


Thumbnail

আপনি হয়তো জেনে থাকবেন, মানব দেহের ৬০% অর্থাৎ তিন ভাগের দুইভাগেরও বেশি পানীয় দ্বারা গঠিত। পানীয় হচ্ছে তরল সমৃদ্ধ মানুষের একটি ভোগপণ্য। সন্তোষজনক তৃষ্ণার মৌলিক চাহিদা ছাড়াও পানীয় মানবদেহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাধারণ পানযোগ্য পানির তালিকায় রয়েছে -পানি, দুধ, চা, গরম চকলেট, ফলের রস এবং কোমল পানীয় সাধারণ ধরনের পানীয়ের অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও মদ, বিয়ার এবং লিকুওর (ইথানল মিশ্রিত নেশাগ্রস্থ মাদকদ্রব্য) ৮০০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মানব সংস্কৃতির অংশ হিসেবে দাড়িয়েছে।

পানীয় হচ্ছে তরল বস্তু যা মানুষ পান করার জন্য প্রস্তুত করে থাকে। অ্যালকোহল এর পরিমাণ বা অ্যালকোহল অপসারণের উপর ভিত্তি করে পানীয়কে শ্রেণিভুক্ত করা হয়। যেমন-অ্যালকোহলযুক্ত এবং অ্যালকোহলমুক্ত। অ্যালকোহলমুক্ত পানীয় প্রায়শই এমন পানীয়কে বোঝায় যেগুলোতে সাধারণত কম বেশি অ্যালকোহল থাকে। তবে সেগুলো ০.৫ শতাংশের কম পরিমাণ অ্যালকোহল দিয়ে তৈরি করা হয়ে থাকে। তবে প্রাকৃতিক উপায়ে পাওয়া ফল ও ফলের রসের শরবত এই হিসাবের বাইরে।

প্রাকৃতিক উপায়ে পাওয়া ফল ও ফলের রসের শরবত মানব দেহের জন্য অত্যান্ত উপকারি। যেমন- ডাব, ডাবের পানিকে বিবেচনা করো হয় একটি অসাধারণ পানি হিসেবে। ডাবের ভেতরের স্বচ্ছপানি পানীয় হিসেবে খুবই সুস্বাদু। ডাবের পানিতে খনিজ লবণ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ফসফরাসের উপস্থিতিও উচ্চমাত্রায়। এসব খনিজ লবণ দাঁতের ঔজ্জ্বল্য বাড়ায়। দাঁতের মাড়িকে করে মজবুত। দেহে ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়ামের অভাব হলে এবং বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ হলে ডাক্তার ডাবের পানি পান করার পরামর্শ দেন। গ্লুকোজ স্যালাইন হিসেবেও ডাবের পানি ব্যবহৃত হয়। ডাবের পানিতে থাকা অ্যামাইনো অ্যাসিড ও ডায়াটারি ফাইবার ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। সর্বোপরি মানুষের শরীরে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো। রাইবোফ্লবিন, নিয়াসিন, থিয়ামিন ও পাইরিডোক্সিনের মতো উপকারী উপাদানে ভরপুর ডাবের পানি প্রতিদিন পান করলে শরীরের ভেতরের শক্তি এতটা বৃদ্ধি পায় যে জীবাণুরা কোনওভাবেই ক্ষতি করার সুযোগ পায় না।

লেবুর শরবত, আমরা প্রাত্যহিক জীবনে সকলেই কম বেশি লেবু খেয়ে থাকি। সাধারণত খাবারের স্বাদ বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা হয়। যারা পেটের গোলযোগে ভুগছেন তাদের জন্য লেবু আদর্শ টনিক। পেটের গোলযোগের মধ্যে ডায়রিয়া, বদহজম, কোষ্টকাঠিন্য সহ শরীরের রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা বৃদ্ধি করে,যে কোন ভাইরাস জনিত ইনফেকশন যেমন ঠান্ডা, সর্দি, জ্বর দমনে লেবু খুব কার্যকারী, মুত্রনালীর ক্ষত সারাতেও লেবুর গুরুত্ব রয়েছে। লেবু ফুসফুসের যত্ন নেয় এবং শরীর থেকে বিষাক্ত দ্রব্য বের করে দেয়, লেবু শরীরের চর্বি ও লিপিডের মাত্রা কম রাখে। লেবুর রসে যথেষ্ট পরিমান পটাশিয়ামরয়েছে যা হাইপার টেনশন কমাতে সাহয্য করে। যারা মাইল্ড অ্যাজমায় ভুগছেন, লেবুর রস তাদের জন্য ওষুধের বিকল্প হিসেবেই কাজ করবে। শুনলে অবাক হতে হয়, লেবু অম্লীয় হওয়া সত্ত্বেও শরীরে প্রয়োজনে ক্ষারধর্মী আচরণ করে। এটি শরীরে এসিডিটি তৈরি করে না। এটি শরীরের পিএইচ মাত্রাকে সঠিক অবস্থায় রাখে। গর্ভবতী নারীদের জন্য খুবই ভালো লেবুজল। এটা শুধু গর্ভবতীর শরীরই ভালো রাখে না বরং গর্ভের শিশুর অনেক বেশি উপকার করে। লেবুর ভিটামিন সি ও পটাশিয়াম শিশুর হাড়, মস্তিষ্ক ও দেহের কোষ গঠনে সহায়তা করে।

আনারসের শরবত, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল আনারস । পুষ্টিগুণে আনারস অতুলনীয়। আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ এ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান। যেগুলো শরীরের কোষকে ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে। ফলে অথেরোস্ক্লেরোসিস, হার্ট রোগ, বাত এবং বিভিন্ন ক্যান্সার থেকে সুরক্ষিত থাকা যায়। আনারস জ্বর ও জন্ডিস রোগের জন্য বেশ উপকারী। এতে রয়েছে প্রচুর ক্যালরি, যা আমাদের শক্তি জোগায়। গবেষণায় দেখা গেছে, আনারস গলা ব্যথা, সাইনোসাইটিসজাতীয় অসুখগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করে। হজমে সাহায্য করে। সঙ্গে শরীরের অন্য অঙ্গগুলোকেও ভালো রাখে।আনারস রক্ত পরিষ্কার করে হৃৎপিণ্ডকে কাজ করতে সাহায্য করে। হৃৎপিণ্ড আমাদের শরীরে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে। এছাড়াও হৃৎপিণ্ডের নানা রকম অসুখে থেকে আনারস দেয় সুরক্ষা।

আমলকির শরবত, ভেষজ গুণে অনন্য একটি ফল।এর ফল ও পাতা দুটিই ওষুধরূপে ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন অসুখ সারানো ছাড়াও আমলকি রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে দারুণ সাহায্য করে। আমলকির গুণাগুণের জন্য আয়ুর্বেদিক ওষুধেও এখন আমলকির নির্যাস ব্যবহার করা হয়।আমলকিতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, আমলকিতে পেয়ারা ও কাগজি লেবুর চেয়ে তিন গুণ ও ১০ গুণ বেশি ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। আমলকিতে কমলালেবুর চেয়ে ১৫ থেকে ২০ গুণ বেশি, আপেলের চেয়ে ১২০ গুণ বেশি, আমের চেয়ে ২৪ গুণ এবং কলার চেয়ে ৬০ গুণ বেশি ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে।

আমের শরবত, কাঁচা অথবা পাকা যে ভাবেই খাওয়া হোক তা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। অনেক ক্ষেত্রে পাকা আমের তুলনায় কাঁচা আমের গুণ আরও বেশি। আম আমাদের শরীরকে সুস্থ ও রোগমুক্ত রাখতে সহায়তা করে। কাঁচা আম ক্যারোটিন ও ভিটামিনএ সমৃদ্ধ, যা চোখের দৃষ্টি বাড়াতে সাহায্য করে, রাত কানা রোগের হাত থেকে রক্ষা করে এবং চোখ ভালো রাখে। আমে রয়েছে ভিটামিন `বি` কমপ্লেক্স। এই ভিটামিন শরীরের স্নায়ুগুলোতে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়িয়ে দেয়। শরীরকে রাখে সতেজ। ঘুম আসতে সাহায্য করে। আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, বেটাক্যারোটিন, ভিটামিন ই এবং সেলেনিয়াম থাকায় হার্টের সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে। আমের মধ্যে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা বিভিন্ন রকম ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে, যেমন, স্তনক্যান্সার, লিউকেমিয়া, কোলনক্যান্সার, প্রোস্টেটক্যান্সার ইত্যাদি। আমে খনিজ লবণের উপস্থিতিও রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। আমে রয়েছে প্রচুর এনজাইম যা শরীরের প্রোটিনের অণু গুলো ভেঙে ফেলতে সাহায্য করে, যার ফলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় । প্রতিদিন আম বা আমের শরবত খেলে দেহের ক্ষয়রোধ হয় ও স্থুলতা কমিয়ে শারীরিক গঠনে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে।

পানীয় পান করা শতাব্দী জুড়ে সামাজিকীকরণের একটি বড় অংশ হিসাবে দাঁড়িয়েছে। বাঙ্গালী রীতিতে বাড়িতে অতিথি আসলে প্রথমেই তাকে শরবত দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। রাসায়নিক উপাদানের মিশ্রণে কৃত্রিম উপায়ে তৈরি পানীয় খেতে সুস্বাদু হলেও তা আপনার আমার শরীরের জন্য পুরোটুকু সাস্থ্যকর নায়। এসমস্তও কোমল পানীয় পান করলে আপনার শরীরে হাই কোলেস্টেরল, কিডনি জনিত সমস্যা সহ দেখা দিতে পারে নানান রকমের অসুখ বিসুখ। অপর দিকে বিশেষ করে বৈশ্বিক মহামারির এই সময়ে যে ফল ও ফলের শরবত খেলে আমাদের শরীরের বাড়বে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা । এবার আপনি বলুন কোনটি পান করবেন?



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭