ইনসাইড টক

`সংকটকালে আমরা উঠে দাঁড়াতে পারি এই মেসেজটা আরও জোরে শোরে দিতে হবে`

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 23/09/2020


Thumbnail

সংকটকালেও যে আমরা উঠে দাঁড়াতে পারি এই মেসেজটা আরও জোরে শোরে সমাজকে দিতে হবে। আসলেই দুর্যোগে-দু:সময়ে জেগে ওঠে বাংলাদেশের সাহসী মানুষ। জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার বাংলাদেশের মানুষ ঝড়-ঝাপটা,একাধিক বন্যা এবং করোনা সংকট একযোগে মোকাবেলা করেই সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাঙালির এই লড়াকু মন-মানসিকতাই অভাবনীয় এই করোনাকালে বাংলাদেশের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। এই পরিস্হিতিতেও আমাদের উন্নয়ন অভিযাত্রাকে কি করে টেকসই করা যায় সে বিষয়ে বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডারের নিজম্ব প্রতিবেদক মির্জা মাহমুদ আহমেদ।

বাংলা ইনসাইডার: করোনাকালে অর্থনীতির ধাক্কা কেমন সামাল দেয়া গেল…….


ড. আতিউর রহমান: করোনাকালের অর্থনীতি সারা বিশ্বেই এক অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেন্জ মোকাবেলার লড়াই চলা কালেই হঠাৎ আসে এই করোনার আঘাত। আর এই আঘাতে সারা বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যখাতের অব্যবস্থাপনা উম্মোচিত হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাস্হ্যখাত করোনা মোকাবেলায় প্রথমদিকে অতটা প্রস্তুত না থাকলেও ধীরে ধীরে এই সংকট সামলে উঠছে। যতই দিন যাচ্ছে ততই প্রাইভেট এবং পাবলিক হাসপাতালগুলোতে কোভিড রোগির ব্যবস্হাপনা অনেকটাই সামলে নেয়া সম্ভব হচ্ছে। সরকার, চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট সকল অংশিজন করে করেই শিখছেন। ঠেকে ঠেকে বুঝে উঠছেন। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বজুড়েই করোনা সংক্রমণের তীব্রতা কমে গেছে একথা বলার সময় এখনও আসেনি। তবে এখনও আমার মনে হয়, নির্ভরযোগ্য টিকা না আসা পর্যন্ত সর্বত্রই এক ধরনের অনিশ্চয়তা থেকেই যাবে। আর অনিশ্চয়তাই ব্যবসা-বানিজ্যের বড় শত্রু। সেদিক থেকে বিচার করলে আমাদের অর্থনীতি অন্য অনেক দেশের চেয়ে ভালো করছে। তার কারণ আমাদের বিচক্ষণ নেতৃত্বের গুণে আমরা আগে ভাগে কিছু উদ্যোগ নিয়েছিলাম। সেজন্যে অর্থনীতিতে আমরা একটা আস্থার পরিবেশ তৈরি করতে পেরেছি। এই আস্থার পরিবেশ কোন অবস্থাতেই যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য সবাইকে সাবধান থাকতে হবে। এই আস্থার পরিবেশ রক্ষা করা যায় তখনই যখন সাধারণ মানুষ মনে করবেন আমাদের কষ্টটা সরকার বুঝছে। জনগণ সর্বদাই ভাবেন-‘আমরা যে কস্টে আছি’ এটা যেন সরকার বোঝে। এরমধ্যে আমরা দেখতে পেয়েছি সরকারের সর্ব্বোচ পর্যায় থেকে সাধারণ মানুষের দুঃখ কষ্ট বুঝবার একটা চেষ্টা  আছে। দু:খী মানুষের দু:খ দূর করার আন্তরিক প্রচেষ্টা সর্বোচ্চ নেতৃত্বের মাঝে লক্ষ করেছি। এই শক্তিটাই আমাদের কাজে লাগাতে হবে। সরকার যে বুঝতে চাইছে সমস্যাগুলো এবং সীমিত সম্পদ সত্ত্বেও সাধ্যমতো সেসবের সমাধানের পথ খুঁজছেন সে বিষয়টি আরও সহজ করে জনগণকে বলতে হবে। স্বাস্হ্যখাতসহ অনেক খাতেই বড় ধরণের অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনা নিশ্চয়ই ঘটেছে। তবে একদিনে তা ঘটেনি। পুরো সিস্টেমেই এই গলদ। তা সত্ত্বেও খানিকটা ঝুঁকি নিয়ে হলেও এসবের মোকাবেলা করবার যে সাহস বর্তমান সরকার দেখাচ্ছে,সেগুলো ধরবার যে মানসিকতার প্রকাশ ঘটাচ্ছে তাকেও কিন্তু আমাদের প্রসংশা করতে হবে। আমাদের গণমাধ্যমের এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। নেতিবাচক বিষয়গুলো তুলে আনার পাশাপাশি ইতিবাচক কাজগুলোর কথাও বলা উচিত। অনেক সাহসী কাজ হচ্ছে যেগুলো আমরা আগে তেমনটি দেখিনি। নিজের দলের হলেও রেহাই দেয়া হচ্ছে না। নি:সন্দেহে এত বড় বড় দুনীর্তির খবরে সমাজ বিক্ষুব্দ হবারই কথা। আবার এসব দুনীর্তিকে মোকাবেলা কররার যে চেষ্টাও করা হচ্ছে সেই ইতিবাচক দিকটিও সামনে আনা দরকার। আর তা করা হলেই ‘বিজনেস কনফিডেন্স’ বাড়তে পারে। এভাবেই মানুষের কনফিডেন্স  ও তার পাশাপাশি বিজনেস কনফিডেন্সও বাড়ানো সম্ভব। সেই সঙ্গে অর্থনীতির জন্য অপরিহার্য সমাজে আস্থার পরিবেশও বাড়ে। করোনাকালে জীবন ও জীবিকা সংরক্ষণের জন্য কেউ কল্পনাও করতে পারেননি যে এপ্রিল মাসেই আমরা একলক্ষ কোটি টাকার বেশি একাধিক প্রণোদনা প্যাকেজ দিতে পারবো। রাজস্ব আদায় থমকে গেছে। ব্যবসা-বানিজ্য বন্ধ। তবু বাজেট ঘটতি বাড়িয়ে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যালেন্সশীট সম্প্রসারণ করে, নানামুখী পুন: অর্থায়ন কর্মসূচি চালু করে, নানাবিধ রিলিফ ও সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার যে দু:সাহস মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এতো দ্রুত দেখিয়েছন তা সত্যি বিরল। এই প্রণোদনা প্যাকেজগুলো দেয়ার কারণে বড় বড় শিল্পপতিরা তাদের ফ্যাক্টরীগুলোকে খোলা রেখেছেন। গামেন্টর্স ফ্যাক্টরীর শ্রমিকদের বেতন দেবার জন্য তাদের মালিকদের মাত্র দুই শতাংশ হারে ঋণের ব্যবস্হা করেছে সরকার। মোবাইল আর্থিক সেবার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সমন্বয়ে ব্যাংকগুলো সরাসরি শ্রমিকদের মোবাইলে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। তাই গার্মেন্টসগুলো চালু রাখা গেছে। এর সুফল এখন আমরা পাচ্ছি। আমাদের রপ্তানির হার ইতিবাচক ধারায় ফিরে এসেছে। এছাড়াও অনান্য ফ্যাক্টরীও খুলে গেছে কৃষির পুনরুদ্ধারের জন্য আলাদা একটা প্যাকেজ দেয়া হয়েছে। তবে এ কথা সত্যি যে বড়রা যেমন তাড়াতাড়ি ব্যাংকের কাছ থেকে প্রণোদনার টাকাটা নিতে পেরেছে,ছোট এবং মাঝারিরা কিন্তু ততটা দ্রুত তা নিতে পারেনি। যাতে ছোট এবং মাঝারি শিল্পকেও প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ দ্রুত ছাড় করা হয় সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও প্রশাসন চাপ দিয়ে যাচ্ছে। তাদের এ উদ্যোগ নেওয়ার ফলে কৃষিঋণ পরিস্থিতির দিন দিন উন্নতি হচ্ছে। আজকেই (২২ সেপ্টেম্বর) খবর বের হয়েছে যে জুলাই-আগষ্ট মাসে কৃষিতে ঋণের হার গত বছরের ওই সময়ের চেয়ে ৭৪ শতাংশ বেড়েছে। তারমানে চাপ দেয়াতে কাজ হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে একটা মনিটরিং সিস্টেম দাঁড় করিয়েছে। এই সিস্টেমটাকে আরও আধুনিক, আরও প্রযুক্তি নির্ভর, আরও আর্টিফেসিয়াল ইন্টিলিজেন্স ভিত্তিক করে আমাদের এই পুরো প্রণোদনা প্যাকেজটাকে একটা আলাদা মনিটরিং সিস্টেমের মধ্যে সর্বক্ষণ রাখতে হবে। শুধুমাত্র টাকাটা বিতরণই যথেষ্ট না। এই টাকাটা যে উদ্দেশ্যে বিতরণ করা করা হয়েছে সেখানে যাচ্ছে কি না সেটাও মনিটর করতে হবে। এই মনিটরিংটা সর্বক্ষন চালিয়ে যেতে হবে। আজকাল প্রযুক্তির এই যুগে মনিটরিং খুবই সহজ। মনিটরিং করার এই সুযোগটা নিতে হবে এবং ব্যবহার করতে হবে।
এটা যদি আমরা বজায় রাখতে পারি তাহলে কিন্তু আমাদের অর্থনীতির চাকা যেভাবে ঘুরতে শুরু করেছে তা কিন্তু আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।
টিকা পেতে খানিকটা দেরি হলেও আমরা যেভাবে নির্বাচিতভাবে অর্থনীতি খুলে যেভাবে দিয়েছি সেই প্রক্রিয়াটা বজায় রাখতে হবে।পাশাপাশি স্বাস্হ্যবিধি মানার ওপর প্রবল চাপ অব্যাহত রাখতে হবে। মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং বারে বারে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার বিষয়গুলো অবশ্যই মানতে বাধ্য করতে হবে।
এশিয়ায় অর্থনৈতিক উন্নয়নে কোভিডের মধ্যেও যারা ভালো করছে সেখানে এক নাম্বারে আছে বাংলাদেশ। তারপরে ভিয়েতনাম এবং চীন। সুতরাং আমাদের এ সাফল্য ধরে রাখতে হবে। সাফল্য ধরে রাখার পূর্বশর্ত হলো সকল অংশিজনের মধ্যে সমন্বয় ধরে রাখা।
নিরাশা, হতাশা বেশি ছড়িয়ে লাভ নেই। সমাজকে আশাবাদী রাখতে সকলকেই উদ্যোগী হতে হবে। হতাশা বেশি ছড়ালে উদ্যোক্তারা ভয় পেয়ে যান। এত সংকট সত্ত্বেও যে আমরা উঠে দাঁড়াতে পারি সেই মেসেজটা আরও জোরে শোরে আমাদের সমাজকে দিতে হবে। একথা সত্যি যে আমাদের বিভিন্ন সেক্টরে গর্ভনেন্স সমস্যা  আছে। প্রায় সব ক্ষেত্রেই যে আমাদের সমন্বয়ের অভাব আছে-সে কথাও ঠিক। । কিন্তু এও সত্যি যে আমরা এসব সমস্যা থেকে উত্তরণের চেস্টাও করছি। এ কথাগুলোও আমাদের বলতে হবে।
একলক্ষ কোটি টাকা বিতরণে ব্যাংক এগিয়ে এসেছে। নানা দুর্বলতা সত্ত্বেও ব্যাংকাররা কাজ করছে বলেই অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। তাদের সমালোচনা আমরা নিশ্চয়ই করবো। সেই সাথে তাদের সাফল্যের কথাও বলবো। গ্রামে গ্রামে মোবাইল ব্যাংকিং এবং এজেন্ট ব্যাংকিং টাকা পৌছে দিচ্ছে। মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে দিনে দুহাজার কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের এ গল্পটাও তো বলতে হবে। শুধু সমালোচনা না করে সাফল্যের কথাও তুলে ধরতে হবে।
ভারতে এবং বাংলাদেশে ব্যাংকগুলো ব্যবসায়ীদের অনেক ছাড় দিয়েছে। এই ছাড় দেয়ার ফলে সত্যি যদি উৎপাদন বাড়ে এবং ব্যবসা বানিজ্য বাড়ে তাহলে আমাদের ওতটা হতাশ হবার কারণ নেই। সময়মতো এ টাকাটা আমরা যেন তুলে আনতে পারি তার জন্য যা যা করা দরকার সেই পরিকল্পনা এখনই করতে হবে। দুর্যোগের এই বছর খানিকটা উদার দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে আমাদের সবকিছু দেখতে হবে। আমার মনে হয় এ বছর বাংলাদেশের অর্থনীতি একটা ভি-শেপ পুনরুদ্ধারের দিকেই এগুবে। যদি আমরা টিকা পেয়ে যাই তাহলে কিন্তু আমাদের অর্থনীতির আসলেই একেবারে খাড়াখাড়ি ভাবে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে।


বাংলা ইনসাইডারঃ আসন্ন শীতে করোনার সেকেন্ড ওয়েভ আসার আশস্কা করা হচ্ছে। করোনার সেকেন্ড ওয়েভ থেকে অর্থনীতিকে বাঁচাতে কি ধরনের পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে বলে মনে করেন।


ড. আতিউর রহমান: শীতকালে করোনার প্রকোপ বাড়তে পারে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যথার্থই সময় মতো দেশবাসীকে এবং প্রশাসনকে এ বিষয়ে আগাম সর্তকর্তা দিয়েছেন। এখন উচিত হবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে যে ধরনের সমন্বয়  দরকার বলে বলেছেন সে সম্বনয়গুলো যেন একেবারে ‘রেজাল্ট-বেইজড’ করা যায় তার একটা রুপরেখা তৈরি করার প্রয়োজন রয়েছে। প্রত্যোক বিভাগকে যুক্তকরে  এ কাজটি দ্রুত করে ফেলা দরকার। যেকোন সংকটে আমরা যেন আরেকজনের পাশে দাড়িঁয়ে এটাকে মোকাবেলা করতে পারি সেরকম প্রস্তুতি আমাদের থাকতে হবে। বিপর্যয় মোকাবেলায়,বিশেষ করে,প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবেলায় বাংলাদেশের সাফল্য অনেক। এটা সম্ভব হয়েছে মানুষের লড়াই করবার মানসিকতা এবং সরকারের যে স্ট্যান্ডিং অর্ডার আছে অর্থাৎ দুর্যোগ মোকাবেলা করার যেসব স্হায়ী নির্দেশনা আছে সেগুলোকে কাজে লাগানোর ফলে। আর আছে নেতৃত্বের বলিষ্ঠতা । এসব প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি দিয়েই আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে থাকি। তাই দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের সুনাম আছে বিশ্ব জুড়ে।


প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করবার যে অভিজ্ঞতা,যে সাফল্য আমাদের রয়েছে সেসব যেন আমরা করোনা সংকট মোকাবেলায় কাজে লাগাই। সেই কথাটিই আকারে ইঙ্গিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নানা সময় বলেছেন। আমরা কিন্তু ওই অভিজ্ঞতার শিক্ষা করোনা মোকাবেলায় কাজে লাগাতে পারি। এবং এটা যদি কাজে লাগাতে পারি তাহলে নিশ্চয় সমাজে এক ধরনের কনফিডেন্স তৈরি হবে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে. উদ্যোক্তাদের মধ্যে, কৃষকদের মধ্যে— বস্তুত সবার মধ্যে এক ধরনের আস্থার পরিবেশ তৈরি হবে।
ম্বাস্থ্য বিভাগের ওপর নজর রাখতে হবে ডাক্তারদের পেশাদারিত্ব নিয়ে যাতে কোন বিভ্রান্তি তৈরি না হয়। তারা যেন সঠিকভাবে চিকিৎসা করতে পারেন তার পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। শীতকালে হয়তো রোগি সংখ্যা বাড়তে পারে। সেজন্য আমাদের হাসপাতালগুলোকে নতুন করে এখনই সজ্জিত করা দরকার। আইসিইউ বাড়ানো দরকার। অক্সিজেন ফ্যাসিলিটি বাড়ানো দরকার। আরও যা যা দরকার সেগুলো বাড়িয়ে সংকট মোকাবেলার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত থাকতে হবে। যেকোনো সমস্যা মোকাবেলার জন্য আমাদের তৈরি থাকতে হবে। এই কাজগুলো যদি করা হয় তাহলে অর্থনীতিতেও এসবের একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। ব্যবসা-বানিজ্যের  উন্নতর পরিবেশ বিরাজ করবে।


বাংলা ইনসাইডারঃ করোনায় প্রান্তিক মানুষেরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। প্রান্তিক মানুষদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে সরকারের কোনদিকটাতে মনোযোগ দেয়া উচিত বলে মনে করেন।


ড. আতিউর রহমান: আমাদের কৃষি কিন্তু আমাদের দারুণভাবে সহায়তা করেছে। প্রান্তিক মানুষদের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে কৃষি বেশ বড় ভূমিকা পালন করেছে।  কৃষিতে যদি আমরা এত ভালো না করতাম তাহলে আমাদের চাল,ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহে সমস্যা দেখা দিতো। আমরা আশা করছি খাদ্য ঘাটতির সমস্যাটা এবার আমাদের হবে না। আবার যে বন্যা আসছে এটা আমাদের জন্য একটু চিন্তার বিষয়। বন্যা আসার কারণে যে আমনটা আবার লাগিয়েছে কৃষক তার খানিকটা ক্ষতি হতে পারে। তাছাড়া বেশিদিন যদি বন্যা থাকে তাহলে কিন্তু রবিশস্যেরও ক্ষতি হবে। সুতরাং এখন থেকেই কৃষি বিভাগের উচিত বন্যার রকমফেরটা কেমন হবে,কতোদিন থাকবে এগুলো হিসেব করে তারপর কি করতে হবে তার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাহলে বন্যা চলে যাওয়ার সাথে সাথে কোন ধরনের ফসল আমাদের লাগাতে হবে সেটা ঠিক করে রাখা যাবে। তারজন্য বীজ প্রস্তুত,সম্প্রসারণসহ যা যা দরকার তা কৃষি বিভাগ আগেভাগেই করে রাখতে পারে। এই কাজগুলো এখনই শুরু করে দেয়া উচিত। আমার ধারণা কৃষি বিভাগ ইতিমধ্যে প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছে। বোরো ফসলের জন্যও প্রস্তুতি নিতে হবে। বোরো ফসলের জন্য বীজ, সার, ঋণ যাতে ঠিক মতো কৃষকের কাছে পৌছায় এবং উৎপাদনের সাথে সাথে প্রকিউরমেন্ট, প্রসেসিং,এক্সপোর্ট, মার্কেটিংসহ ভ্যালু চেইনের যে সমস্ত সহায়তা দরকার সেগুলো যেন সরকার এবং অন্যান্য অংশিজন দিতে পারে তার প্রস্তুতি এখনি নিতে হবে। ভালো খবর হচ্ছে শাক সবজির এক্সপোর্ট বাড়তে শুরু করেছে। সুতরাং আমার মনে হয় এতে করে বাজারে দামটা বজায় থাকবে। কৃষি পণ্যের দাম স্থিতিশীল না থাকলে জনজীবনে সমস্যা হয়।
সা্প্লাই এবং ডিমান্ড ঠিক আছে একথা আমরা স্পষ্ট করে সময়মতো বলতে পারি নি বলে সম্ভবত পেঁয়াজ নিয়ে খানিকটা সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে। এখন দাম খানিকটা কমেছে। এই মেসেজটা এখন দেয়া হয়েছে যে আমরা সাপ্লাইটা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। কোন জায়গায় সাপ্লাই এর কোন ঘাটতি আছে কি না সেটা যেন আমরা আগেভাগে আন্দাজ করতে পারি। সেটার জন্য আগে ভাগে কর্ম পরিকল্পনা করে সাপ্লাই লাইনটাকে আমাদের সঠিক রাখতে হবে। আজকের দিনের অর্থনীতির বড় অংশই সাপ্লাই চেইনের ওপর নির্ভরশীল। আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে সাপ্লাই চেইনটাকে আরও মজবুত করবো,আরও আধুনিক করবো, আরও ডিজিটাল করবো। লজিস্টিক সেইভাবে তৈরি করবো। তাহলে আমাদের অর্থনীতি এখন যেভাবে এগুচ্ছে তা আরও জোরে এগোবে।
আমাদের ছোট উদোক্তা, মাঝারি উদ্যোক্তা, কৃষকদের দিকে আরও বেশি করে নজর দিতে হবে। প্রশাসন, ব্যাংক, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, এনজিও সবাই মিলে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। একসঙ্গে থাকতে হবে সর্বত্র,সবসময়।
তাহলেই আমাদের অর্থনীতি এগিয়ে যাবে জোর কদমে। এর পাশাপাশি যারা কাজ হারিয়েছে, যারা নতুন করে গরিব হয়েছে তাদের সুরক্ষা দিতে হবে। নগর দারিদ্র নিরসনে আলাদা নজর দিতে হবে। বায়ু দূষণ রোধে বিশেষ মনোযোগী হতে হবে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭