ইনসাইড আর্টিকেল

কী হতে চাও, ডাক্তার না ইঞ্জিনিয়ার?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 24/09/2020


Thumbnail

ছোটবেলা থেকে এ প্রশ্নটা শোনে নি — এমন ছেলে-মেয়ে বাংলাদেশে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। আমাদের সমাজে এ মনোভাব অনেকটা প্রথার মতো যে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার ছাড়া সফল হওয়া অসম্ভব। আমাদের মোটামুটি সব প্রজন্ম এ প্রশ্নের দোটানার মধ্যেই বড় হয়েছে। বাংলাদেশে কি ক্যারিয়ার গড়ার আর অন্য কোন রাস্তা নেই?

দেশ গঠনে অন্য অনেক পেশার মানুষের মতোই ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার প্রয়োজনীয়। কিন্তু আগামীকাল বাংলাদেশের সব ছেলেমেয়ে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হয়ে গেলে বাংলাদেশ কোন উন্নত দেশ হয়ে যাবে না। দেশ-সমাজ বিশাল এক জাহাজের মতো। হাজার হাজার কলকব্জা দিয়েই এটা চলে; ইঞ্জিন আর চিমনী যেমন থাকা লাগবে, তেমনি নোঙর আর দূরবীনও দরকার। হুট করে জাহাজের সব যাত্রী “কেবল ইঞ্জিন আর চিমনীই লাগবে” বলে সিদ্ধান্ত নিলে জাহাজের আর চলা লাগবে না।

আমাদের সমাজের এখন একই অবস্থা। আমরা জানিনা দেশের জাহাজ চলে কীভাবে। টুকটাক জানলেও আমরা কেও কালি-ধুলো মাখা চিমনী চাই না, বা দূরবীনে চোখ রেখে ভবিষ্যতের দূরদর্শী পরিকল্পনা করতেও আগ্রহী নই। আমাদের জাহাজ আছে ঠিকই, কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য জাহাজের তুলনায় ধীর গতির। যেনতেন জাহাজ না তাও; ১৭ কোটি যাত্রীর জাহাজ! আমাদের চেয়ে বড় জাহাজ সারা বিশ্বে আছেই কেবল হাতেগোনা কয়েকটা।

বিশ্বায়নের যুগে একদেশ থেকে আরেকদেশের দক্ষ জনবল কাজ করতে যাবে তা খুবি স্বাভাবিক একটি ব্যাপার, কিন্তু বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে যেখানে বেকারত্ব এখনো খুবি চ্যালেঞ্জিং বিষয়, সেখানে লক্ষাধিক বিদেশী দক্ষ শ্রমিক অনেকটাই বিলাসিতা মাত্র।

বাংলাদেশে কতজন বিদেশী শ্রমিক কাজ করছেন তার সুনির্দিষ্ট সংখ্যা পাওয়া না গেলেও, সংখ্যাটি বৈধ ও অবৈধ মিলিয়ে লাখখানেক ছাড়াবে। বিভিন্ন সূত্রমতে, এ দক্ষ বিদেশী শ্রমিকরা প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ থেকে তাদের দেশে পাঠাচ্ছেন। তার উল্টোদিকে, বিদেশে কর্মরত প্রায় ৮০-৯০ লক্ষ বাংলাদেশী শ্রমিক দেশে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন ১৫ বিলিয়ন ডলারের মত। এসকল বাংলাদেশী শ্রমিক যেখানে পাঠাচ্ছে ১৫ বিলিয়ন, মাত্র লাখখানেক বিদেশী শ্রমিক সেখানে নিয়ে যাচ্ছেন ৫ বিলিয়ন ডলার। যার একমাত্র কারণ হচ্ছে বাংলাদেশী শ্রমিকদের মধ্যে শিক্ষা, দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের অভাব।
বাংলাদেশের অনেক তরুণ উচ্চশিক্ষাও নিচ্ছে, কিন্তু বিভিন্ন পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে- বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি এ উচ্চ শিক্ষিতদের মধ্যেই বেশি। তারা পড়াশোনা করে চাকরী পাচ্ছেন না।

ধরুণ ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হলেই কি আসলে অর্থনৈতিক সফলতা সুনিশ্চিত? বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিসের তথ্যমতে, স্বাস্থ্য খাতে আমাদের যে পরিমাণ নার্স লাগবে তার তিনগুণ কম নার্স আছে, অন্যদিকে ডাক্তারের যোগান রয়েছে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি। এতে যা হয়েছে, নবীন  ডাক্তারদের বেতন কমে গিয়েছে অন্যদিকে হাসপাতালগুলো নার্স প্রয়োজনের তুলনায় কম হওয়ায় নার্সদের বেতন কোন কোন ক্ষেত্রে শিক্ষানবিস বা নবীন ডাক্তারদের থেকেও বেশি হচ্ছে।

ঠিক একই পরিণতি দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন শিল্প কারখানায় ইঞ্জিনিয়ারদের ক্ষেত্রেও। একটি কারখানা চালাতে ১ জন দক্ষ ইঞ্জিনিয়ারের বিপরীতে ৫-১০ জন দক্ষ টেকনিসিয়ান লাগে, বাংলাদেশে দেখা যায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দক্ষ টেকনিসিয়ান পাওয়াই যায় না, আর এ জায়গাগুলোই পূরণ করছে বিদেশী দক্ষ শ্রমিকেরা। বাংলাদেশ ৬% থেকে বেড়ে ৮% জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে কেবল আর ২ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান করতে পারলে।

একেতো আমাদের দেশে শিক্ষার হার তুলনামূলকভাবে কম, তার উপর আমাদের উচ্চশিক্ষিতরাই চাকরী পাচ্ছেন না, অন্যদিকে বিদেশীরা চাকরী করে দেশের মূল্যবান অর্থ নিয়ে যাচ্ছেন- এ যেন এক গোজামিল অবস্থা। কারণটি কি? এ বিদেশীরা আমাদের কলকারখানায় যে চাকরীগুলো করছে, কেন আমাদের তরুণরা সে চাকরি গুলোর জন্য প্রশিক্ষন নিচ্ছে না? তার অন্যতম বড় কারণ দক্ষতা ও ক্যারিয়ার গঠনের জন্য বাংলাদেশে শ্রম বাজারে তথ্যের অভাব ও সমাজে প্রচলিত ভুল ধারণাগুলো।

উন্নয়ন কি? উন্নয়ন দক্ষ ও শিক্ষিত জনশক্তির মেধা ও শ্রমের ফসল। শিক্ষা ও দক্ষতায় বিনিয়োগে পারে ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করতে। ১৭ কোটির এ জাহাজ উন্নত হতে হলে সরকারী বেসরকারী সবার মিলিত প্রচেষ্টাই লাগবে, যেখানে কোন পেশার অবদানই খাটো করে দেখা যাবে না। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী যেমন লাগবে তেমনি লাগবে ততোধিক দক্ষ নার্স, টেকনেশিয়ান, আর্কিটেক্ট, গবেষক, খেলোয়াড়, ইমাম-পুরোহিত, কামার-কুমোর সবার সমান অংশগ্রহণ।

আর এই উন্নয়নের যাত্রায় অংশগ্রহণ করতে আপনি আপনার ক্যারিয়ার নিয়ে ভেবেছেন কি?



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭