ইনসাইড টক

‘অভিযোগ থেকে পার পেতে দুর্নীতিবাজরা বিএমএ ও স্বাচিপের নাম জড়ায়’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 24/09/2020


Thumbnail

 

সাম্প্রতিক সময়ে আবাসন নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও চিকিৎসকদের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি নিয়েও সর্বত্র আলোচনা হচ্ছে। স্বাস্থ্যখাতের সাম্প্রতিক বিষয়গুলো নিয়ে বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশন (বিএমএ’র) মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী। পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডারের নিজম্ব প্রতিবেদক মির্জা মাহমুদ আহমেদ

বাংলা ইনসাইডারঃ করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের আবাসন নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এই সমস্যা নিরসনে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশন (বিএমএ) কী ভূমিকা নিয়েছে?

ইহতেশামুল হক চৌধুরীঃ মাসখানেক আগে সরকার যখন চিকিৎসকদের আবাসন সুবিধা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো তখন আমরা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহোদয়কে বিষয়টি অবগত করেছি। পরবর্তী পর্যায়ে আমরা লিখিতভাবে মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি জানিয়েছি। এটি কোনভাবেই বিজ্ঞানসম্মত কোন পদক্ষেপ নয়। বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি হলো একজন চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মী; একজন করোনা আক্রান্ত রোগিকে চিকিৎসা দেয়ার পরে তাকে ১৪ দিন অথবা নূন্যতম ১০ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয়। তারপরে সে পররর্তী পর্যায়ে চিকিৎসা সেবা দিতে যেতে পারে। কিন্তু এখন যেটা করা হয়েছে; তারা বলছেন বাসা বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে থাকবেন এটা কোনভাবেই বিজ্ঞানসম্মত নয়। কারণ করোনায় আমাদের ৮৯ জন চিকিৎসক শাহাদাত বরণ করেছেন। প্রায় তিনহাজার চিকিৎসকসহ সাত হাজারের অধিক স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এখন যদি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা হাসপাতালে ডিউটি করার পরে তাদের নিজেদের বাড়িঘরে ফেরত যান তাহলে যারা তরুণ চিকিৎসক আছেন তাদের বাসায় ছোট ছোট ছেলে মেয়ে আছে। অনেকে মা,বাবা,শ্বশুর,শ্বাশুড়ি নিয়ে থাকেন;তাদেরও তখন আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা থেকে যায়।

অনেক চিকিৎসকের বাসায় তিন বেডের-চার বেডের কোন রুম নাই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নতুন যে দুই হাজার চিকিৎসক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছেন। সেই চিকিসকরা ঢাকা শহরে বাসা বাড়ি দুরে থাক মেসও রেডি করতে পারেন নাই। কারণ তারা নিয়োগ পেয়েই কাজে যোগ দিয়েছেন এবং হোটেলে অবস্থান করছেন। পরবর্তীতে তারা ডরমেটরী পেলেও; ডরমেটরীতে ফ্যামিলীসহ থাকলে করোনা সংক্রমনের সম্ভাবনা বাড়বে। উহান থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। চিকিৎসক এবং হাসপাতাল থেকে উহানে ৪১ শতাংশ করোনা সংক্রমিত হয়েছিল। চিকিৎসকদের বলা হয় ‘সুপার এক্সপ্রেডার’। চিকিৎসকদের মাধ্যমে সংক্রমনের হার সবচেয়ে বেশি। সুতরাং সেই ‘সুপার এক্সপ্রেডার’ চিকিৎসকদের আপনি হিরো অ্যাখা দিয়ে তাদের দায়িত্ব পালনের জন্য বলবেন। আর অন্যদিকে তাদের বাড়িতে যেতে বাধ্য করবেন; এটা সম্পূর্ণ অমানবিক। এতে করে চিকিৎসকদের মনোবল ভেঙ্গে যাবে।

করোনার দ্বিতীয় টেউকে সামনে রেখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছেন । চিকিৎসকদের অনিরাপদ রেখে কোন প্রস্তুতি কাজে আসবে না। চিকিৎসকদের নিরাপত্তা বিধান করলে; চিকিৎসকরা নিরাপদ থাকবেন এবং চিকিৎসকদের কাছে যারা সেবা নিতে আসবেন তারাও নিরাপদ থাকবেন।

বাংলা ইনসাইডারঃ স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি নিয়ে এখন সর্বত্র আলোচনা হচ্ছে। অভিযোগ আছে বিএমএ ও স্বাচিপের মদদে এরকম দুনীর্তি সংঘটিত হয় এ ব্যাপারে আপনার মত কী?

ইহতেশামুল হক চৌধুরীঃ যখনই দুর্নীতির কোন ঘটনা উদঘটিত হয় তখনই কৌশলে বিএমএ এবং স্বাচিপের নামটা জড়িয়ে দেয়া হয়। কারণ বিএমএ এবং স্বাচিপের নামটা যদি জড়িয়ে দেয়া হয় তাহলে, যারা এসব কাজের সাথে জড়িত তাদের পার পাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। আমরা বিএমএ’র পক্ষ থেকে বার বার বলছি এবং বরাবর বলছি; যে মালেক,আবজাল,সাবরিনা বা সাহেদ তারা দুর্নীতির অগ্রভাগে ছিলো। তারা দুর্নীতি করেছে তাদেরকে ধরা হয়েছে। তারা সামনের সারির দুর্নীতিবাজ মাত্র। তাদেরকে যারা নাটাই দিয়ে ঘুরাচ্ছেন আমরা সব সময় তাদেরকে চিহ্নিত করার দাবী জানিয়ে আসছি। তাদেরকে চিহ্নিত করে যদি শাস্তির আওতায় আনা হয় তাহলে দুর্নীতি বন্ধ হবে। নতুবা আপনি প্রতিদিনই আবজাল, মালেক, সাবরিনা অথবা সাহেদকে ধরা খেতে দেখবেন কিন্তু দুর্নীতি নিমূল হবে না।

আমরা যদি সাহস নিয়ে এই কথাটা বলতে পারি; যারা এসব অপকর্মের সাথে জড়িত তাদের মাস্টার মাইন্ডদেরকেও ধরা হোক তাহলে কিন্তু ধরেই নেয়া যায় আমাদের মধ্যে কোন দুর্বলতা নাই। গণমাধ্যম চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে সাহেদ কেলেস্কারীতে মন্ত্রনালয়ের কারা কারা জড়িত ছিলো, অধিদপ্তরের কারা কারা জড়িত ছিলো। গতকাল সাহেদ কেলেস্কারীতে একটি রিপোর্ট জমা দেয়া হয়েছে সেখানে অধিদপ্তরে যার নামে এত অসংখ্য অভিযোগ ছিলো তাকে দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে। তার নাম চার্জশিটে নাই। মন্ত্রণালয়ের কারো নাম চার্জশিটে নাই। শুধুমাত্র তর্কের খাতিরে বলা হয় বিএমএ এবং স্বাচিপের উর্ধ্বতন নেতারা জড়িত। কিন্তু যারা জড়িত;যাদের নাম অধিদপ্তরে, মন্ত্রণালয়ের আলাপ, আলোচনায় এসেছে, মিডিয়ায় এসেছে, সাহেদ নিজেও স্বীকার করেছে তাদের নাম চার্জশিট থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। এগুলো হলো দায়সাড়া গোছের একটি আইওয়াস। সকলের দৃষ্টি অন্যদিকে ধাবিত করার জন্য বলা হয় স্বাচিপ এবং বিএমএ এসব কাজের সাথে যুক্ত। যারাই জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক এটাই আমাদের দাবী।

বাংলা ইনসাইডারঃ সর্বত্র একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সেটা হলো আবজাল-মালেকদের মতো তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের ধরা হচ্ছে। স্বাস্থ্যখাতের রাঘব বোয়ালদের কবে ধরা হবে?

ইহতেশামুল হক চৌধুরীঃ রাঘব বোয়ালদের কবে ধরা হবে এই প্রশ্নটা আমারও। তাদেরকে যদি ধরা না হয় তাহলে দুর্নীতি বন্ধ করার যে মূল লক্ষ্য সেটা কোনদিন পূরণ হবে না। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক লিখে রাখছেন ‘আমি ও আমার অফিস দুর্নীতি মুক্ত’ এর মানে তিনি একটি সার্টিফিকেট দিয়ে দিলেন। একজন প্রথম শ্রেণির সর্ব্বোচ কর্মকর্তা সার্টিফিকেট দিয়ে দিলেন তার অফিসের কেউ দুর্নীতিবাজ নয়। তাহলে তার অফিস থেকে আবজাল-মালেকের মতো দুর্নীতিবাজরা কিভাবে বেরিয়ে আসলো? সেটার দায়-দায়িত্ব অবশ্যই সাবেক মহাপরিচালকের ওপর বর্তায়। যারা এভাবে সার্টিফিকেট দিয়ে দুনীর্তিকে আড়াল করার চেস্টা করে; যারা দুর্নীতিকে প্ররোচিত করে; দুর্নীতিকে চর্চা করে, দুর্নীতিকে ওউন করে; তাদেরকে না ধরে অগ্রভাগের দুই-তিনকে ধরে শাস্তির আওতায় আনলে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছনো যাবে না।    

 

 

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭