নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 27/09/2020
একটা জিনিস লক্ষ করেছেন কি? একটি মেয়ের রেপের ঘটনার পর মেয়েটির পোষাক, বয়স, সন্ধ্যার পর মেয়েটি বাইরে কেন ছিল, মেয়েটি বিবাহিত কিনা - এসব নিয়ে প্রশ্ন উঠে। কিন্তু এসব করেও কি মেয়েরা রেপ হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছে ? না পায়নি । তাহলেতো স্বাভাবিক মনে প্রশ্ন জাগে, সমস্যা কি আসলেই মেয়েদের? নাকি অন্য কোথাও ?
আপনি যদি ফেসবুকের কোন নিউজ পোর্টালে নিউজ দেখেন ‘বাসে একটি মেয়ে গণধর্ষনের শিকার “
সেই নিউজের কমেন্ট বক্সে এমন কিছু কমেন্ট যার কিছু ধর্ষকের দোষ গুণ নিয়ে, কিছু ধর্ষিতা মেয়ের দোষ গুণ নিয়ে। এবার আমি যদি আপনাদের বলি , একটি মেয়ের ধর্ষণ হওয়ার পেছনে এগুলোর কোনটাই নয়, দায়ী হল একজন ধর্ষকের মানসিকতার ? তাহলে কি আপনারা আমার সাথে একমত হবেন ? আচ্ছা কেনো একমত হবেন তার স্বপক্ষে আমি আমার যুক্তি গুলো দেখাচ্ছি ।
আমাদের সমাজে একটা কথার প্রচলন আছে, কথাটা হল ‘ছেলেরা তো এরকমই হয়’ এই একটা কথার ভেতরে তাদের সব ভুল, আর অপরাধগুলোকে প্রশ্রয় দেয়া হয়। তাদের ভুলগুলোকে ভুল হিসেবে ধরা হয়না। কিন্তু এতে করে ছেলেদের মধ্যে এমন একটা মানসিকতা গড়ে উঠেছে যে ছেলেরা মনে করে যে তারা যেকোন কিছু করে পার পেয়ে যাবে এবং সমাজ তাকে কিছুই বলবেনা । আর বললেও আবার তাকে ঠিকই মেনে নেবে ।
এটা কিন্তু আমাদের কথা না, ২০১০-১৩ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘের চালানো একটি জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশের গ্রামীণ অঞ্চলের ৮২% এবং শহরের ৭৯% শতাংশ মানুষ মনে করে যে রেপ করাটা তাদের অধিকার, এটা কোন অপরাধের পর্যায়ে পড়েনা। আপনাদের নিশ্চয়ই ২০১২ সালে দিল্লিতে ঘটে যাওয়া গ্যাং রেপের কথা মনে আছে? সেখানে শাস্তি পাওয়া অন্যতম আসামী মুকেশ সিং বিবিসিকে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিল যে, “একটি মেয়ে যদি রাত নয়টার পর বাইরে থাকে তাহলে তার রেপ হওয়ার জন্য একটা ছেলে নয়, বরং সে নিজে দায়ী।“
যেকোন ধরণের অন্তরঙ্গতার জন্য দুইটি ছেলেমেয়ের মধ্যে তাঁদের নিজেদের পছন্দ, আগ্রহ, আকর্ষণ, ইচ্ছা, সম্মতি - এ ব্যাপারগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যখন একটি মেয়েকে রেপ করা হয়, তখন সেটি করা হয় তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে, যা তার স্বাধীন মতামত কেড়ে নেয়ার শামিল। আচ্ছা বলুন তো, আপনার অনুমতি ছাড়া আপনার গায়ে যদি কেউ হাত দেয়, তাহলে আপনার কি ভাল লাগবে ?
ব্যাপারটা কিন্তু খুব বেশি জটিল না। ইনফ্যাক্ট, পুরো রেপ জিনিসটাই একটি মাত্র আইডিয়ার উপর দাঁড় করানো। সেটি হল ‘সম্মতি’ বা Consent। একটি মেয়ে যদি নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বা জোর করে কারো সাথে শারিরীক সম্পর্ক করতে বাধ্য হয়, তাহলে সেটিই রেপ। সেটি রাস্তার অপিরিচিত লোক থেকে শুরু করে পরিবারের যেকোন সদস্য, বন্ধু, বয়ফ্রেন্ড এমনকি স্বামীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
যারা রেপ নিয়ে একটু সচেতন চিন্তা-ভাবনা করেন, তারাও হয়তবা ‘স্বামী’ শব্দটা শুনে পিছিয়ে যাবেন। পার্থক্য শূধূ ভয়াবহতায়। কিন্তু যেকোন দাম্পত্য জীবনে বা সুখী বিবাহিত জীবনের জন্য শুধু স্বামী নয় স্ত্রীর সম্মতিও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
তাই আমি বলবো, আজ আমাদের আশেপাশে যে এত যৌন হয়রানি ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে, এর পেছনে ধর্ষকের অসুস্থ মানসিকতাই দায়ী। তাই পোশাক, বয়স বা পরিস্থিতি, এর কোনটিই একটা মেয়ে রেপ হয়ার জন্য দায়ী না ।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭