ইনসাইড আর্টিকেল

দেবতার প্রসাদে বেঁচে আছে ফুটকড়াই

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 01/10/2020


Thumbnail

বাঙ্গালী রীতিতে আনন্দ, উৎসব, পুজা পার্বণ ও শোকে সকল ধর্মে, সর্বক্ষেত্রে ভোজ রীতি, বহুল প্রচলিত একটি রীতি। সদ্যজন্ম নেয়া শিশুটির সুখবর থেকে শুরু করে শ্রাদ্ধ বা কুলখানি পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে বাঙ্গালী ইতিহাসে ভোজ রীতি অত্যান্ত গুরুত্তপূর্ণ। আর এই রীতর একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ মিষ্টি। ভোজ শেষে মিষ্টি ছাড়া অসম্পূর্ণ থেকে যায় ভোজের আয়োজন। তাই বাঙ্গালী ইতিহাসে পাওয়া যায় হাজারো রকমের মিষ্টি ও মিষ্টি জাতীয় খাদ্য দ্রব্যের নাম। কালের পরিক্রমায় এসকল খাবারের তালিকায় যেমন যোগ হচ্ছে কিছু নতুন নাম, তেমনি হারিয়ে যাচ্ছে কিছু নাম। হারাতে বসা নাম গুলির মধ্যে “ফুটকড়াই” একটি।
 

মহেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা থেকে পাওয়া যায়-
“সেকালে দোলে তত্ত্ব তৈরি করে আদান প্রদানের প্রথা প্রচলিত ছিল। সেই তত্ত্ব পাড়া প্রতিবেশীদের বাড়ি বাড়ি বিলোনো হত। দোল উপলক্ষে চিনির মুড়কি,মঠ, ও ফুটকড়াই খাওয়ার রেওয়াজ ছিল”
শ্রীকৃষ্ণের দোলযাত্রা ও চৈতন্যদেবের আবির্ভাব উপলক্ষ্যে বিভিন্ন মঠ মন্দিরে বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বীরা এই দিনটি উৎযাপন করেন। এই উৎসবের প্রসাদ হিসাবে নানা ধরনের মিষ্টি জাতীয় খাবার প্রস্তুত করা হয় এবং তা জনগণের মধ্যে বিতরণ করা হয়। বিভিন্ন মিষ্টির মধ্যে মঠ, মুড়কি ও ফুটকড়াই বিশেষ উল্লেখযোগ্য। “ফুটকড়াই” প্রসাদ হিসাবে ছাড়াও ন্যাড়া পুড়ার সময় নিভে যাওয়া আগুনে দেওয়ার রীতি আছে।
বর্তমানে কিছু কিছু পরিবারে পুজোতে ও মন্দিরের পুজোতে ভোগের সামগ্রী হিসাবে ঐতিহ্যবাহী নানা মিষ্টান্ন দেওয়া হয়। মঠ  মূলত গোলাপি, হলুদ ও সাদা এই তিন রঙের হয়। এগুলি দেখতে চিনির তৈরি অনেকটা টাওয়ারের মত শক্ত মিষ্টি। আগে চুটিয়ে রঙ খেলার ফাঁকে ফাঁকে মঠ খাওয়ার চল ছিল। একই সাথে “ফুটকড়াই” খাওয়া হতো। কালচে ভাজা মটরের ওপর চিনির আস্তরণ। মুখে দিয়ে চিবালে কড়মড় করে আওয়াজ হত। বর্তমানে রং খেলার সাথে সাথে খাওয়ার চল না থাকলেও, দেবতার প্রসাদ হিসাবে কোনওক্রমে বেঁচে আছে এই "ফুটকড়াই"। যদিও অনেক পরিবার থেকেই এই ঐতিহ্যবাহী খাবারটি হারিয়ে গেছে একেবারেই।
কলকাতার বউবাজারে নীলমণিদের ঠাকুরবাড়িতে পূর্ণিমার দিন মহাসমারোহে চাঁচড় পোড়ানো হয় এবং পরেরদিন দোল উদযাপন করা হয়। উভয় উৎসবেই পূজার পাশাপাশি ভোগের আয়োজন করা হয়। ভোগ হিসাবে থাকে লুচি-তরকারি, ঘিপোয়া, মঠ, কদমা, তিলেখাজা ও “ফুটকড়াই” ইত্যাদি। খুবই সহজ ও সাধারণ ভাবে “ফুটকড়াই” তৈরি করা হয়। ছোলা ভেজে তার উপর চিনির আস্তরণ দিয়ে “ফুটকড়াই” তৈরি হয়। এটি খেতে  খানিকটা মচমচে ধরনের হয়ে থাকে।
আধুনিক কবি জয় গোস্বামিও "ফুটকড়াই" নামের একটি কবিতা লিখেছেন, কবিতার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি লাইন এমন-
   " টুম্পি, টিমা, মম, টোকাই
    মাথায় মাথায় পিন ঢোকাই।
    ফুটকড়াই ফুটকড়াই,
    ঠিক ডাটা ঠিক ফিড করাই"

 
 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭