ইনসাইড আর্টিকেল

‘ফুলন কেন দস্যু’- পর্ব- ১

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 01/10/2020


Thumbnail

আমাদের পুরুষ তান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীরা বরাবরই তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলেন এবং আছেন। অধিকার বঞ্চিত নারীদের মধ্যে কেউ কেউ করেছেন এই সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। হয়েছেন প্রতিবাদি নারী বা সংগ্রামী নারী। আজকে তেমনি এক নারীর কথা বলব, যার জীবনী নিয়ে রচিত হয়েছে অনেক গল্প, উপন্যাস ও আত্মজীবনী। নির্মিত হয়েছে অনেক নাটক, সিনেমা।

“ফুলন দেবী”  একজন ভারতীয় ডাকাত এবং পরে একজন রাজনীতিবিদ। "দস্যু রানী" নামেই তিনি বেশি পরিচিত। তিনি একাধিক বার পুরুষ নিষ্ঠুরতার বলি হয়েছিলেন। পুলিশের নিকট থেকেও তিনি ন্যায়বিচার পান নাই যার জন্য তিনি বাধ্য হয়ে ডাকাত জীবন গ্রহণ করেছিলেন। উত্তর প্রদেশের বেহমাই গাও নামক স্থানের কয়েকজন ঠাকুর সম্প্রদায়ের জমিদার ফুলন দেবীকে ২৩দিন যাবৎ ধর্ষন করে। ১৯৮১ সনে সেই গ্রামের ২২জন ঠাকুরকে ডাকাতরা হত্যা করেছিল এবং এই হত্যার জন্য ফুলন দেবীকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। বেশীরভাগ অপরাধ তিনি নির্যাতিত মহিলা ও বিশেষকরে নিম্ন শ্রেনীর মহিলাকে ন্যায় প্রদানের জন্য সংঘঠিত করেছিলেন। ২০বছরের কম বয়সের এক নিম্ন শ্রেনীর প্রায় নিরক্ষর কিশোরী সমগ্র ভারতে আলোড়নের সৃষ্টি করেছিল। পরবর্তী সময়ে তিনি আত্ম-সমর্পন করেন ও ভারতীয় রাজনীতিতে যোগদান করেন।

উত্তর প্রদেশের জালৌন জেলার অন্তর্গত “ঘোড়া কা পুরয়া” নামক স্থানে এক মাল্লা সম্প্রদায়ের পরিবারে ১৯৬৩ সালে ফুলন দেবী জন্মগ্রহণ করেন। যারা বংশ পরিচয়ে ছিল নিচু এবং পেশায় ছিল মাঝি। ফুলনের পিতার এক একর জমি জুড়ে নিমের বাগান ছিল। তার পিতার আশা ছিল যে এই মূল্যবান গাছ বিক্রয় করে ২কন্যার বিয়ের যৌতুক দিবেন। কিন্তু ফুলনের  ঠাকুরদার মৃত্যুর পরে তার জ্যাঠা পৈতৃক সম্পত্তির একমাত্র উত্তরাধিকারী বলে নিজেকে ঘোষণা করেন। ফুলনের জ্যাঠাতো ভাই মায়াদিন বাগানের গাছগুলি কেটে বিক্রি করা আরম্ভ করলে ফুলন এতে বাধা দেয়। মায়াদিন হিংসার আশ্রয় নিয়েও ফুলন ও তার পরিবারের কোন ক্ষতি করতে পারেন নাই। অবশেষে মায়াদিন, পুট্টিলাল নামক এক ৩০বৎসরের ব্যক্তির সহিত ফুলনের বিবাহের আয়োজন করে। সেই সময়ে ফুলনের বয়স ছিল মাত্র ১১ বৎসর। ফুলনে নিজের আত্মজীবনিতে  লেখেছেন যে পুট্টিলাল একজন অসৎ চরিত্রের লোক ছিল।

ফুলনের সঙ্গে তার স্বামী বলপূর্বক যৌন সম্পর্ক স্থাপন ও শারীরিক অত্যাচার করতো। অত্যাচার সহ্য না করতে পেরে ফুলন নিজ পিতার গৃহে ফিরে যান যদিও পরিবারের সদস্যরা তাকে পুনরায় স্বামীর গৃহে দিয়ে আসেন। অবশেষে তার স্বামীর-কার্য কালাপের প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি স্থায়ীভাবে নিজ পিতৃগৃহে ফিরে আসেন। ভারতীয় গ্রাম্য সমাজে স্বামীর ঘড় ছেড়ে আসা নারীদের কূ-নজরে দেখা হয়। ফুলনেও সমাজের কাছে  একজন অসৎ নারীর চরিত্রে পরীনত হন। ফুলনে ন্যায়ালয়ে নায়াদিনের বিরুদ্ধে পিতার সম্পত্তি অবৈধ ভাবে দখল করার অভিযোগ দেন। কিন্তু তিনি আইনী যুদ্ধে পরাজিত হন। ১৯৭৯ সনে মায়াদিন চুরির অভিযোগে দিয়ে ফুলনকে গ্রেপ্তার করান। এতে ফুলনের তিনদিন কারাবাস হয়। কারাবাসে তিনি আইনরক্ষকের হাতে ধর্ষনের শিকার হন। কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তাকে পরিবার ও গ্রাম থেকে বর্জন করা হয়।
 
 এরপর একদল ডাকাত দল ফুলন দেবীকে অপহরণ করেন; অন্য এক প্রবাদ মতে তিনি স্বেচ্ছায় ডাকাতের দলে যোগদান করে। সেই ডাকাতের দলনেতা গুজ্জর সম্প্রদায়ের লোক ছিলেন নাম-বাবু গুজ্জর। বাবু গুজ্জর ছিল নিষ্ঠুর ও কামুক স্বভাবের লোক। বাবু গুজ্জরের কামুক দৃষ্টি ফুলনের দেহের উপর পরে কিন্তু দ্বিতীয় দলনেতা বিক্রমের জন্য ফুলন, বাবু গুজ্জরের কামনরা শিকার হওয়া থেকে রক্ষা পায়। একদিন রাত্রে দলনেতা বাবু গুজ্জর ফুলনকে ধর্ষণ করার প্রচেষ্টা করে। প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্রম মাল্লা বাবু গুজ্জরকে হত্যা করে ও  দলের নেতা হয়। ফুলন তার সম্মান রক্ষা করা বিক্রম মাল্লার প্রতি প্রেমে পতিত হন। অবশেষে বিক্রম তাকে বিবাহ করে ও পত্নীর মর্যদা দেন।

ডাকাত দলটি ফুলনের প্রথম স্বামী পুট্টিলালের বাস করা গ্রামে লুন্ঠন করে। ফুলন পুট্টিলালকে টেনে নিয়ে এসে জনসমক্ষে শাস্তি দেয় ও খচ্চরের পিঠে উল্টা করে বসিয়ে নির্জন স্থানে নিয়ে এসে বন্দুক দিয়ে প্রহার করে। প্রায় মৃত অবস্থায় পুট্টিলালকে ছেড়ে চলে যায়। যাওয়ার সময় কম বয়সের বালিকা মেয়ে বিবাহ করা পুরুষদের জন্য সাবধানবাণী স্বরূপ একটি পত্র রেখে যায়। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে ফুলনের স্বামীকে হত্যা করে, অপহরন করে নিয়ে যায় তাকে অন্য আর একটি ডাকাত দল। উলঙ্গ প্রায় অবস্থায় ফুলন দেবীকে এক গ্রামে নিয়ে যায় ডাকাত দলটি।পাঠক, ফুলন দেবীর, “দস্যু রানী” হয়ে ওঠার বাকী গল্প জানতে আগামীকাল একই সময় চোখ রাখুন বাংলা ইনসাইডার-এর ডিজিটাল পাতায়। চলবে... 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭