লিভিং ইনসাইড

বাড়ছে প্রতিশ্রুতিহীন শারীরিক সম্পর্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 04/10/2020


Thumbnail

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের স্নাতকের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী রবিন (ছদ্মনাম)। থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়েরই একটি আবাসিক হলে। এখন অবশ্য আছেন আজিমপুরের একটি মেসে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোন প্রেম করেননি রবিন। ক্যাম্পাসে আড্ডা দেওয়ার মতো মেয়ে বন্ধুও নেই তার। এটা নিয়ে গুঞ্জনও কম ছিল না। বন্ধু মহলে তাকে প্রায়ই ‘অক্ষম’ বা ‘কাপুরুষ’ হিসেবে উল্লেখ করা হতো। কিন্তু এসব নিয়ে কোন কর্ণপাত করতেন না রবিন। শুধু বলতেন, আমার জীবন দর্শন ভিন্ন। আমি তোদের মতো নানা প্রতিশ্রুতি দেওয়া সম্পর্কে বিশ্বাস করি না। একদিন অবশ্য রবিনকে এই বিষয়ে খুলে বলতেই হয়।

রবিনের কাছ থেকে যা জানা গেল, তা হল- সে মাসে এক, দুই বার টাকার বিনিময়ে তার জৈবিক চাহিদা মিটিয়ে নেয়। জৈবিক এই তাড়নার জন্য সে অন্য কিছু করে না। মেয়ে বন্ধু বা প্রেমিকারও দরকার পরে না। এটা স্বাভাবিক মনে হলেও গল্পের বাকি অংশটুকু বিস্ময়কর। জৈবিক চাহিদার জন্য সে কোন পেশাদার যৌন কর্মীর কাছে যায় না। সে যাদের কাছ থেকে প্রকৃতির দেওয়া এই সুখ কিনে, তাঁদের সবাই অপেশাদার। তারাও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। কেউ নিতান্ত চাপে পরে খরচ চালাতে, আর কেউ একটু ভালোভাবে চলতে গিয়েই এই পথ বেছে নিয়েছে বলে জানায় রবিন।

এটা তো গেল, গ্রাম থেকে উঠে আসা মধ্যবিত্ত রবিনের গল্প। রাজধানী ঢাকায় এই রকম তরুণের সংখ্যা নেহাৎ কম নয়। সেইসাথে প্রতিশ্রুতিহীন শারীরিক সম্পর্কও ঘটছে অহরহ। বাঙালি সমাজে প্রাচীনকাল থেকেই যৌনতা একটা নিষিদ্ধ বিষয়। এই বিষয়টা যেন অনেকটাই ‘ট্যাবু’। ফলে এসব নিয়ে যেমন আলোচনা হয় না। তেমনি যৌন শিক্ষার আড়ষ্টতার কারণে কাজও হয়েছে অনেক কম।

এসব বিষয়ে সমাজ তাত্ত্বিকদের সাথে কথা বললে আরও বিস্তৃতভাবে জানা যায়। তারা বলেন, এক সময় শুধু ‘লিভ টুগেদার’ কেই প্রতিশ্রুতিহীন শারীরিক সম্পর্ক বলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু বর্তমান সমাজে প্রতিশ্রুতিহীন শারীরিক সম্পর্ক অনেক বেড়ে গেছে। সেইসাথে এর ধরণও অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। এখন অফিসে সহকর্মীদের  মধ্যে এই ধরণের সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে তরুণ-তরুণীরা ভিন্ন আমেজ পেতে এমন অনৈতিক সম্পর্কে ঝুঁকে পরছেন। তাছাড়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন প্লাটফর্মে এই ধরণের সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে।

তবে এই ধরণের সম্পর্ক বাড়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু নির্দেশক কাজ করে বলে জানান তারা। মানুষের আচরণ ও মনস্তত্ত্ব নিয়ে কাজ করেন এই রকম বেশ কয়েকজন জানান, এই ধরণের সম্পর্কের ক্ষেত্রে জীবন-যাপন অনেক প্রভাব ফেলে। শহর কেন্দ্রিক জীবনযাত্রায় মানুষ অনেক ব্যস্ত থাকে। ফলে ব্যস্ততার কারণে অনেক সময় সম্পর্কে যত্ন নিতে পারে না। আবার কেউ কেউ অন্যের প্রতি আসক্ত হয়ে পরে। অবশ্য অতৃপ্ত শারীরিক সম্পর্কও এ ক্ষেত্রে একটি বড় কারণ। সেইসাথে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, উগ্র আধুনিকতাসহ নানা কারণে এই ধরণের সম্পর্ক বাড়ছে বলে জানান সমাজ তাত্ত্বিকরা।          



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭