ইনসাইড টক

করোনা মোকাবেলায় আমরা অনেকটা সফল

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 09/10/2020


Thumbnail

দেশে করোনা সংক্রমনের সাত মাস পূর্ণ হয়েছে বৃহস্পতিবার। এই দীর্ঘ সময়ে করোনা পরিস্থিতির সামগ্রিক মূল্যায়ন, করোনাকে সঙ্গী করে আগামীর পথচলা কেমন হবে সে বিষয়ে বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাঃ এ বি এম আব্দুল্লাহ। পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডারের নিজস্ব প্রতিবেদক মির্জা মাহমুদ আহমেদ।  

বাংলা ইনসাইডার: দেশে করোনা সংক্রমনের সাত মাস পূর্ণ হয়েছে। সামগ্রিকভাবে দেশের করোনা পরিস্থিতিকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন।

এবি এম আবদুল্লাহ: সারা পৃথিবীতেই করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি ওঠা নামা করছে। কোন কোন দেশে আবার করোনার দ্বিতীয় টেউ আঘাত হেনেছে। বিশেষ করে ইউরোপের মতো শীত প্রধান দেশগুলোতে। আমাদের দেশে আগের তুলনায় করোনা সংক্রমন কমেছে। সংক্রমনের হার ওঠা নামা করছে। সংক্রমনের হার আগে ২০-২২ শতাংশ ছিলো যা কমে এখন ১২ থেকে ১৪ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। সংক্রমনের ঝুঁকি আগের থেকে কমেছে।  
সংক্রমনের হার কমলেও মৃত্যু ঝুঁকি কমে নাই। কম বেশি মানুষ মারা যাচ্ছেন। এর পেছনে কারণও আছে বিশেষ করে যারা বয়স্ক মানুষ, ডায়বেটিকস, প্রেসার, হার্ট, কিডনিসহ অনান্য রোগে ভুগছেন তারা করোনায় আক্রান্ত হলে মারা যাচ্ছেন।

সুতরাং আমরা বলতে পারি সামগ্রিকভাবে করোনায় সুস্থ মানুষের মৃত্যু ঝুঁকি কিছুটা কমেছে। পৃথিবীর অনেক দেশের তুলনায় আমাদের দেশে সংক্রমণের হার তুলনামূলকভাবে অনেক কম বলা যায়।
সামনে শীতকাল আসছে । সবাই আশস্কা প্রকাশ করছে শীতে করোনার প্রকোপ বাড়তে পারে। শীতে করোনার প্রকোপ বাড়তে পারে আবার নাও বাড়তে পারে। বাড়বে কিনা এটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
চীনে যখন করোনা সংক্রমন শুরু হয় সেখানে তখন প্রচন্ড শীত ছিলো। তাই অনেকে ধারণা করছেন শীতে করোনার প্রকোপ বাড়বে।

অনেক বিশেষজ্ঞদের ধারণা ছিলো গরমে করোনা কমতে পারে। পরে দেখা গেল আমাদের দেশে গরমে করোনার প্রকোপ কমে নাই। মধ্যপ্রাচ্যে তো প্রচুর গরম, সেখানেও করোনার প্রকোপ কমেনি। সিঙ্গাপুর,মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ার মতো নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ার দেশেও করোনার সংক্রমণ বেড়েছে। আবহাওয়ার সঙ্গে করোনার সম্পর্ক কম ।

তবুও কয়েকটি কারণে শীতে করোনার প্রকোপ বাড়ার ঝুঁকি রয়ে গেছে। ঠান্ডা প্রধান দেশগুলোতে করোনা সংক্রমনের ঝুঁকি এখনও বেশি। ইউরোপ এবং আমেরিকার দেশগুলোতে করোনা সংক্রমণ আবারো বাড়ছে। সেই বিবেচনায় আমাদের দেশে শীতে করোনার প্রকোপ বাড়তে পারে।
দ্বিতীয়ত; শীতে কমন কোল্ড, ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়ার মতো ভাইরাস রোগের প্রার্দুভাব বাড়ে। সেই হিসেবে করোনা ভাইরাসও বাড়তে পারে। বাড়ার সম্ভাবনাও বেশি।

তৃতীয়ত; বদ্ধ ঘরে করোনার ঝুঁকি বেশি থাকে। শীতকালে মানুষ দরজা জানলা বন্ধ করে রাখে, বদ্ধ ঘরে থাকে সেই বিবেচনায় করোনার ঝুঁকি বাড়তে পারে।

বাংলা ইনসাইডার: সাত মাসের অভিজ্ঞতা কি বলছে; আমরা কী করোনা মোকাবেলায় সফল নাকি ব্যর্থ?

এবি এম আবদুল্লাহ: সাত মাসের অভিজ্ঞতায় আমাদের যেটা ধারণা হয়েছে; আমাদের মন্ত্রণালয় বলেন, অধিদফতর বলেন, সরকার বলেন করোনা মোকাবেলায় আমরা অনেকটা সফল তো বটেই।
কারণটা হলো শুরুতে তো আমরা করোনা সম্বন্ধে কিছুই জানতাম না । সারা পৃথিবীতে করোনা নিয়ে কেউ কিছু জানতো না। যেহেতু এটা একটা নতুন রোগ। শুরুতে আমরা রোগের ধরণ জানতাম না, পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিয়ে কিছু জানতাম না। চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে অজ্ঞতা ছিলো। সেই সংকট কাটিয়ে ওঠা গেছে। আমাদের চিকিৎসকরা ভয় পেতেন, সাধারন মানুষ ভয় পেতেন। কিন্তু সাত মাস পার হওয়ার পর আমার মনে হয়েছে সামগ্রিকভাবে করোনাকে আমরা ভালোভাবেই সামলিয়েছি।

সাময়িক ভুল ক্রুটি হতে পারে। এটা হবেই যেহেতু রোগটা আমাদের সবার কাছেই নতুন।
আমাদের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা এখন অনেক দক্ষ। করোনা নিয়ে তাদের ভয় কেটে গেছে। তারা ফ্রন্টলাইনার যোদ্ধা হিসেবে ভালোভাবেই রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
করোনা মোকাবেলায় আমরা ব্যর্থ না বরং অনেকটাই সফল। আমি বলবো সফলতার পাল্লাই বেশি ভারী ।

বাংলা ইনসাইডার: অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে করোনাকে সঙ্গী করেই আমাদের জীবনযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে আপনার পরামর্শ কী?

এবি এম আবদুল্লাহ: করোনা আমাদের ছাড়বে কিনা জানিনা। কবে ছাড়বে সেটাও নিশ্চিত না। এইচ আইভি ভি, হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ফ্লু’র মতো ভাইরাস পৃথিবীতে রয়ে গেছে। এমনিভাবে করোনাও পৃথিবীতে রয়ে যেতে পারে । সেক্ষেত্রে করোনাকে সঙ্গী করেই আমাদের জীবন জীবিকা চালিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
জীবন তো আর থেমে থাকবে না। অর্থনীতির চাকা তো আর বন্ধ করে রাখা যাবে না।
গার্মেন্টস কর্মী, রিক্সাওয়ালা, ফুটপাথের ক্ষুদ্র দোকানী, শ্রমিকদের মতো নিম্ন আয়ের লোকেরা বলছে ‘করোনায় তো আমরা মারা যাবো না, আমরা না খেয়ে মরবো’। সুতরাং আমাদের জীবন জীবিকা ঠিক রাখতে হবে।
তবে আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা যেন স্বাস্থ্যবিধিটা ভালো করে মেনে চলি। তাহলে জীবন জীবিকাও চলবে করোনার ঝুঁকিও রোধ করা যাবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হলে কমপক্ষে তিনটি কাজ অবশ্যই করতে হবে।
ঘর থেকে বের হলে অবশ্যই মাস্ক পড়তে হবে। হাত ধোয়ার চর্চা মেনে চলতে হবে। যতটুকু সম্ভব শারীরিক দুরত্ব বজায় রেখে চলা ফেরা করতে হবে।

অযথা ভীড় এড়িয়ে চলতে হবে। লোক সমাগম যেখানে বেশি সেখানে যাওয়া যাবে না। অযথা ঘরের বাইরে যাওয়া যাবে না। রেষ্টুরেন্ট, পার্ক, হোটেলে যতটা সম্ভব কম যাওয়া যায় ততই ভালো।
প্রয়োজনে ঘরের বাইরে গেলেও কাজ শেষ করে দ্রুত ঘরে ফিরতে হবে। ঘরে ফিরে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে উদাসীনতা দেখানো যাবে না।
করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, সচেতন হতে হবে এর কোন বিকল্প নাই। আমাদের মনে রাখতে হবে আমি একা ভালো থাকলেই হবে না। পরিবারের সদস্য,দেশের মানুষ যাতে ভালো থাকে সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭